তৌহিদুল ইসলাম রাসো

রিসার্চ অফিসার, ডিসমিসল্যাব
ভিন্ন ঘটনার ভিডিওতে সমন্বয়কদের জড়িয়ে ভুয়া দাবিতে প্রচার

ভিন্ন ঘটনার ভিডিওতে সমন্বয়কদের জড়িয়ে ভুয়া দাবিতে প্রচার

তৌহিদুল ইসলাম রাসো

রিসার্চ অফিসার, ডিসমিসল্যাব

সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের বেশ কিছু আইডি, গ্রুপ ও পেজ থেকে সম্প্রতি একটি সংঘর্ষের ভিডিও শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে সাতক্ষীরার কাচ্চি ডাইন রেস্টুরেন্টে খাবার পর বিল না দিয়ে সমন্বয়কেরা চাঁদা দাবি করলে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। তবে যাচাইয়ে দেখা গেছে দাবিটি সঠিক নয়। সংঘর্ষের এই ঘটনাটি ঘটেছে ভোক্তা অধিকারের অভিযানকে কেন্দ্র করে। গণমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত ৭ জানুয়ারি সাতক্ষীরার জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা অভিযান পরিচালনা করেন কাচ্চি ডাইনে। সেই অভিযান শেষে সাংবাদিকেরা ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করতে গেলে রেস্টুরেন্টের কর্মীরা তাদের ওপর হামলা করেন। হামলার সেই ভিডিওটিকেই সমন্বয়কেরা চাঁদা দাবি করেছেন বলে ছড়ানো হচ্ছে ফেসবুকে।

সংঘর্ষের সেই ৪৪ সেকেন্ডের ভিডিওটি ফেসবুকে পোস্ট করা হয় বেশকিছু প্রোফাইল (, , ), পেজ (, , ) ও গ্রুপ থেকে। পোস্টগুলোর বিবরণীতে একই দাবিতে লেখা, “সাতক্ষীরায় সমন্বয়ক রেস্টুরেন্টে খেয়ে বিল না দিয়ে চাঁদা দাবি করে,, তার পর বাকিটা ইতিহাস…ওরে মার কাচ্চি ডাইন।” ব্যক্তিগত এক প্রোফাইল থেকে এমন দাবিতে শেয়ার করা ভিডিওটি এ পর্যন্ত ১৪ হাজারের বেশিবার দেখা হয়েছে এবং প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ৮৭৫ জন ব্যবহারকারী। এছাড়া পোস্টটিতে মন্তব্য করেছেন ১২৩ জন আর শেয়ার হয়েছে ১৬৬ বার। উক্ত পোস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের নিয়ে বেশকিছু নেতিবাচক মন্তব্যও লক্ষ্য করা গেছে। এ সম্পর্কে এক ব্যবহারকারী লেখেন, “ওরা দেশ স্বাধীন করেছে এখন ওদের বিরিয়ানি কোঠা না দিলে বৈষম্য দূর হবে না। আর ফাও খাওয়া সমন্বয়ককে উত্তম মধ্যম দিলে নেকি হতে পারে।” আরেকজন মন্তব্য করেন, “সেই দিছে সমন্বয়ক বলতে কিছু নাই সব ধান্দাবাজ।”

সংঘর্ষের ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ে শুরুতে ভিডিওটির কিফ্রেম ধরে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে ডিসমিসল্যাব। সেই সার্চে ইউটিউবের আলাদা তিনটি ভিডিওর (, , ) খোঁজ পাওয়া যায়, যার সঙ্গে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটি হুবহু মিলে যায়। ৮ জানুয়ারিতে পোস্ট করা সেসব ভিডিওতে বলা হয় সাতক্ষীরার কাচ্চি ডাইন রেস্টুরেন্টে অভিযান চলাকালে সাংবাদিকদের উপর হামলা করেন রেস্টুরেন্ট কর্মীরা।

ছড়িয়ে পড়া ফুটেজের সঙ্গে মিল থাকা একটি ভিডিও প্রতিবেদনও খুঁজে পাওয়া যায় অনলাইনে। দৈনিক কালবেলার অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত সেই ভিডিও প্রতিবেদনেও একই বিবরণ উল্লেখ করে বলা হয়, উপকূলীয় জেলাটির কাচ্চি ডাইন রেস্টুরেন্টের এক আউটলেটে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের অভিযান শেষে ফুটেজ সংগ্রহকালে চার ফটো সাংবাদিকের উপর হামলার অভিযোগ উঠেছে রেস্টুরেন্টের কর্মীদের বিরুদ্ধে।

পরবর্তীতে বিষয়টি সম্পর্কে আরও নিশ্চিত হতে অনলাইনে কিওয়ার্ড সার্চ করে ডিসমিসল্যাব। এই সার্চে বেশকিছু অনলাইন প্রতিবেদন (, , , ) খুঁজে পাওয়া যায়। এসব প্রতিবেদনে যে ছবি ব্যবহার করা হয় তার সঙ্গে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ফুটেজের মিল পাওয়া যায়। এছাড়া, গত ৭ জানুয়ারিতে “সাতক্ষীরায় কাচ্চি ডাইনে ভোক্তা অধিকারের অভিযান, সাংবাদিকের ওপর হামলা”– শিরোনামের বাংলা ট্রিবিউনের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, সেদিন দুপুর ১টায় কাচ্চি ডাইনের সাতক্ষীরা শহরের নিউমার্কেট সংলগ্ন আউটলেটে অভিযান পরিচালনা করেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা। আর অভিযান শেষে ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহের সময় চার ফটো সাংবাদিকের ওপর হামলার অভিযোগ ওঠে। সেই প্রতিবেদনে হামলার শিকার দুই সাংবাদিকের বক্তব্যও তুলে ধরা হয়।

এ থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, কাচ্চি ডাইনে সংঘর্ষের ঘটনা সঠিক হলেও এর প্রেক্ষাপট ভিন্ন। রেস্টুরেন্টের কর্মী ও সাংবাদিকদের মধ্যকার সংঘর্ষের ভিডিওটির প্রেক্ষাপট পরিবর্তন করে ভুয়া দাবিতে সেটি সমন্বয়কদের চাঁদাবাজি ও খাবার পর বিল না দেওয়ার কারণে সংঘর্ষের বলে ছড়ানো হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, এর আগেও সমন্বয়কদের জড়িয়ে প্রায় একই ধরনের ভুয়া দাবিতে ভিডিও শেয়ার হয়েছিল ফেসবুকে। গত নভেম্বরে চট্টগ্রামের এক রেস্টুরেন্টের সামনে দুইজন ব্যক্তির মারামারির ভিডিও পোস্ট করে বলা হয় চাঁদাবাজির অভিযোগে বা খাওয়ার পর বিল না দেওয়ায় মারধর করা হয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের। সে সময় এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল ডিসমিসল্যাব।

আরো কিছু লেখা