তামারা ইয়াসমীন তমা

রিসার্চ অফিসার, ডিসমিসল্যাব
হাসনাত আবদুল্লাহ সন্ত্রাসী দাবি করে প্রচারিত বিবিসি প্রতিবেদনটি সম্পাদিত
This article is more than 1 month old

হাসনাত আবদুল্লাহ সন্ত্রাসী দাবি করে প্রচারিত বিবিসি প্রতিবেদনটি সম্পাদিত

তামারা ইয়াসমীন তমা

রিসার্চ অফিসার, ডিসমিসল্যাব

সামাজিক মাধ্যমে সম্প্রতি বিবিসি নিউজের একটি ভিডিও প্রতিবেদন ছড়িয়ে পড়েছে, যেখানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহকে সন্ত্রাসী সংগঠনের নেতা হিসেবে উল্লেখ করা হয়। প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, হাসনাত আওয়ামী লীগ নেতাদের হত্যার নির্দেশ দিয়েছেন। তবে যাচাই করে দেখা গেছে, ভিডিওটি বিবিসির একটি পুরোনো সংবাদ প্রতিবেদন সম্পাদনা করে তৈরি করা হয়েছে।

ফেসবুক (, , ,) ও টুইটারে (, ) বিবিসির লোগো সম্বলিত একটি সংবাদ সম্প্রতি ছড়িয়ে পড়তে দেখা যায়। ভিডিওটিতে একজন সংবাদ পাঠিকা হাসনাত আবদুল্লাহকে “জামায়াতে ইসলামী ছাত্রশিবির ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসী নেতা” হিসেবে উল্লেখ করেন। একই সঙ্গে তাকে হিজবুত তাহরীরের জঙ্গি বলেও অভিহিত করেন। সংবাদ পাঠিকাকে বলতে শোনা যায়, হাসনাত আবদুল্লাহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রকাশ্যে আওয়ামী লীগের নেতা জাহাঙ্গীর আলম ও মোজাম্মেল হকসহ ছাত্রলীগ ও যুবলীগ সমর্থকদের হত্যার নির্দেশ দিচ্ছেন।

যাচাই করে দেখা গেছে, ভিডিওটিতে ব্যবহৃত সংবাদ প্রতিবেদনটি ২০২২ সালের। মূল সংবাদটি ছিল ব্রিটিশ-ইরানিয়ান নাজানিন জাগারি-র‍্যাটক্লিফ ও আনোশেহ আশুরির মুক্তির বিষয়ে। ওই সংবাদ পড়ার সময় পাঠিকা জোয়ানা গসলিং আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। দ্য গার্ডিয়ানেও পাঠিকার এই আবেগাপ্লুত হওয়ার বিষয় নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

মূল ভিডিওটি সম্পাদনা করে তাতে উপস্থাপিকার কণ্ঠ মুছে অন্য একটি অডিও ভয়েসওভার জুড়ে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ভিডিওটি সম্পাদনা করে সেখানে হাসনাত আবদুল্লাহর তিনটি ডিপফেক ছবি ও বক্তব্যের ক্লিপও যুক্ত করা হয়েছে।

ভিডিওটিতে যুক্ত করা হাসনাত আবদুল্লাহর ছবিগুলোতে তাকে অস্ত্রসহ উপস্থাপন করা হয়েছে। তবে, যাচাই করে দেখা গেছে যে ছবিগুলো ডিপফেক প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি।

প্রথম ছবিটি, মোগাদিশুর একজন ইসলামিক যোদ্ধার, যা ফটোগ্রাফার গাইথ আব্দুল-আহাদের তোলা একটি ছবি। ছবিটি অন্তত ১৫ বছরের পুরোনো।

দ্বিতীয় ছবিটি, পাকিস্তানি তালেবানের কমান্ডার আদনান রশীদের।

তৃতীয় ছবিটি, সান ডিয়েগোর মোহাম্মদ সাঈদ কোদাইমাতি নামে সিরিয়া ফেরত একজন ব্যক্তির, যাকে আইসিস সম্পর্কিত মিথ্যা তথ্য প্রদানের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।

তবে, ভিডিওটিতে হাসনাত আবদুল্লাহর একটি বক্তব্যের ক্লিপও রয়েছে, যেখানে তাকে বলতে শোনা যায়, “আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, জাহাঙ্গীর আর কে কে যেন আছে মোজাম্মেল… এখানে যে মবমারানি বলবে… মব জাস্টিস … তারেই…।” যাচাইয়ে দেখা যায়, ক্লিপটি সাম্প্রতিক এবং এটি সম্পাদনার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

অর্থাৎ, বিবিসি প্রতিবেদন হিসেবে প্রচারিত ভিডিওটি ভুয়া অডিও ও ডিপফেক প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে। হাসনাত আবদুল্লাহর বক্তব্যের ক্লিপটি সঠিক হলেও, তাকে সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত করে রাখা অন্যান্য বক্তব্য ও ছবিগুলো মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর।

আরো কিছু লেখা