মিনহাজ আমান

রিসার্চ-লিড, ডিসমিসল্যাব
র‍্যাব-বিটিআরসি কর্মকর্তাদের বক্তব্য বিকৃত করে ফেসবুকে জুয়ার বিজ্ঞাপন

র‍্যাব-বিটিআরসি কর্মকর্তাদের বক্তব্য বিকৃত করে ফেসবুকে জুয়ার বিজ্ঞাপন

মিনহাজ আমান

রিসার্চ-লিড, ডিসমিসল্যাব

সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে কিছুদিন ধরে র‍্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক ও বিটিআরসির ভাইস চেয়ারম্যানের বক্তব্য বিকৃত করে জুয়ার অ্যাপের বিজ্ঞাপন চালাতে দেখা গেছে। যাচাইয়ে দেখা যায়, একটি টিভি প্রতিবেদনের ফুটেজ বিকৃত করে বিজ্ঞাপনটি বানানো হয়েছে। 

মেটা অ্যাড লাইব্রেরিতে “✔✅Crazy Time Winner ক্যাসিনোর অফিসিয়াল অ্যাপ” কীওয়ার্ডস দিয়ে অনুসন্ধান করে একই ক্যাপশনের অন্তত ৬টি বিজ্ঞাপন পাওয়া যায়। এর মধ্যে দুটি বিজ্ঞাপনে ওই দুই কর্মকর্তার ভিডিও ব্যবহৃত হতে দেখা গিয়েছে। একটি বিজ্ঞাপন গত ৭ এপ্রিল, অন্যটি ১৮ এপ্রিল থেকে প্রচারিত হচ্ছে। 

বিজ্ঞাপনের শুরুতে সংবাদ উপস্থাপককে বলতে শোনা যায় যে ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান ক্যারিয়ার থেকে অবসর নিয়েছেন। এরপর র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‍্যাব) লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক খন্দকার আল মঈন বলেন, জুয়ার অ্যাপটির মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা জ্যাকপট জিততে পারবেন। একইভাবে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) তৎকালীন ভাইস চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আহমেদকে বলতে শোনা যায়, “এই অ্যাপ্লিকেশনটি সকল ব্যবহারকারীর জন্যে সম্পূর্ণ নিরাপদ।”   

তবে ডিসমিসল্যাবের যাচাইয়ে দেখা যায়, গত বছরের ৯ নভেম্বর জুয়া খেলা নিয়ে আরটিভিতে প্রচারিত একটি সংবাদ প্রতিবেদন থেকে ওই দুই দায়িত্বশীল কর্মকর্তার ফুটেজ নিয়ে ভুয়া অডিও যুক্ত করা হয়েছে। বিকৃত করা হয়েছে সংবাদ উপস্থাপকেরও বক্তব্য।

“অনলাইন জুয়ার এজেন্টদের টার্গেট কনটেন্ট ক্রিয়েটররা” শিরোনামে আরটিভির ভেরিফায়েড ইউটিউব চ্যানেলে মূল প্রতিবেদনটি পাওয়া যায়। সরকারের অবস্থান জানানোর অংশ হিসেবে র‍্যাবের লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া উইং কমান্ডার খন্দকার আল মঈন প্রতিবেদককে বলেন, “জুয়ার সাইটের ওনারগুলো বিদেশি হয়ে থাকে, কিন্তু তারা ভিপিএন বা ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্কের মাধ্যমে এগুলো পরিচালনা করছে। বিভিন্ন সেলিব্রেটিদের তারা ব্যবহার করত তাদের প্রচারণার জন্যে। এদেরকে যখন আমরা আইনের আওতায় নিয়ে এসেছি, তখন আমরা দেখেছি ১০০ থেকে ২০০ কোটি টাকা পর্যন্ত তারা এইভাবে জুয়ার সাইট পরিচালনা বা প্রতারণা করে বিদেশে পাচার করেছে”। অর্থাৎ, বেটিং সাইটের প্রচারণা কৌশল এবং অর্থ পাচারের প্রক্রিয়া নিয়ে মতামত দিয়েছেন তিনি। কিন্তু তাঁর এই বক্তব্য মুছে সম্পূর্ণ বিপরীত বক্তব্যের অডিও জুড়ে দিয়ে ক্যাসিনো খেলে জ্যাকপট জেতার প্রচারণা চালানো হচ্ছে। 

একইভাবে বিটিআরসির ভাইস চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আহমেদের বক্তব্য বিকৃত করেও ক্যাসিনোর প্রচারণা চালানো হয়েছে। আরটিভিকে তিনি বলেছিলেন, “ওয়েবসাইট বন্ধ করেছি এক হাজার ৫৯৮টি। এদিকে ইউটিউব, ফেসবুক এবং টিকটকে প্রায় চার হাজার ৩১৬টি। অর্থাৎ আমাদের এই প্রক্রিয়াটি চলমান। আমরা চেষ্টা করছি যাতে বাংলাদেশে এরকম গ্যাম্বলিং বা ক্ষতিকর গেম যেন আমাদের জেনারেশনগুলোকে ক্ষতিকর পথে চালিত করতে না পারে।” তবে ফেসবুকে প্রচারিত বিজ্ঞাপনে ভুয়া অডিওতে তাঁকে বলতে শোনা যায়, বেটিং অ্যাপটি সকল ব্যবহারকারীর জন্য সম্পূর্ণ নিরাপদ। আরটিভির সেই প্রতিবেদনে দেয়া এই দুই দায়িত্বশীল ব্যক্তির বক্তব্যকে বিকৃত করে প্রচার করছে বিজ্ঞাপনগুলো। 

এর আগেও ডিসমিসল্যাবের যাচাইয়ে একাধিকবার ধরা পড়ে যে অন্যের অডিও-ভিডিও বিকৃত করে ফেসবুকে বেটিং বা ক্যাসিনো অ্যাপের প্রচারণা চালানো হচ্ছে। এর মধ্যে সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মাশরাফি বিন মর্তুজা এবং মুস্তাফিজুর রহমানের একাধিক ভুয়া ছবি বা ভিডিও ব্যবহার করে চলেছে বিজ্ঞাপন। 
ফেসবুকের ম্যানিপুলেটেড মিডিয়া পলিসিতে বলা হয়েছে যে, দর্শকদের বিভ্রান্ত করে এমন সম্পাদনা করা ভিডিও মুছে দেওয়া হবে। বাংলাদেশে কোনো বেটিং বা ক্যাসিনো অ্যাপের বিজ্ঞাপন প্রচার বৈধ নয়। মেটা পলিসি অনুযায়ী, যে ৩৫টি দেশে এসব বিজ্ঞাপন প্রচার করা যাবে সেই তালিকায়ও নেই বাংলাদেশ।

আরো কিছু লেখা