তৌহিদুল ইসলাম রাসো

রিসার্চ অফিসার, ডিসমিসল্যাব
ফেসবুকে বেটিং সাইটের প্রচারণায় সাকিবের ভুয়া ভিডিও, চলছে বিজ্ঞাপনও
This article is more than 2 months old

ফেসবুকে বেটিং সাইটের প্রচারণায় সাকিবের ভুয়া ভিডিও, চলছে বিজ্ঞাপনও

তৌহিদুল ইসলাম রাসো

রিসার্চ অফিসার, ডিসমিসল্যাব

বাংলাদেশের জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক সাকিব আল হাসান একটি বেটিং সাইটের প্রচারণা চালাচ্ছেন– এমন একটি ভিডিও সম্প্রতি ছড়াতে দেখা গেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, ফেসবুকে। ভিডিওটি ফেসবুকে প্রচারিত হয়েছে বিজ্ঞাপন আকারেও। তবে যাচাইয়ে দেখা গেছে ভিডিওটি সম্পাদিত এবং সাকিব এমন কোনো বেটিং সাইটের প্রচারণায় অংশ নেননি। তাঁর অন্য একটি ভিডিও সম্পাদনা করে উক্ত ভিডিও রিলটি বানানো হয়েছে।

ভিডিওর শুরুতে সাকিবকে বলতে শোনা যায় যে তার কাছে দর্শকদের জন্য একটি উপহার আছে। এরপর বলা হয় বাংলাদেশে একটি নতুন সরকারি লাইসেন্স প্রাপ্ত মোবাইল ক্যাসিনো খোলা হয়েছে এবং তারা নতুন খেলোয়াড় খুঁজছে। এ কারণে তারা একটি বড় বোনাস দিচ্ছে। সাকিব অ্যাপ্লিকেশনটি ডাউনলোড করতে বলেন। এরপর নিবন্ধন করে একটি আমানত করলে ৩২,৫০০ টাকা উপহার পাবেন বলা হয়। শেষে বলতে শোনা যায় অ্যাপটি ডাউনলোড করুন এবং আমার সাথে খেলুন। ভিডিও রিলটির ক্যাপশনে লেখা- “🇧🇩🎰 সবাই জিতেছে – আপনিও পারেন! 🎰 🇧🇩💵 আমরা ইতিমধ্যেই বাঙালিদের 10,000,000 ৳ প্রদান করেছি। 🇧🇩 খেলুন এবং ঝুঁকি ছাড়াই উপার্জন করুন 🔥 আমরা 3 মিনিটের মধ্যে জয়ের অর্থ পরিশোধ করি।”

ডিসমিসল্যাবের যাচাইয়ে দেখা যায় ভিডিওটি সম্পাদনা করা হয়েছে। ভিডিওটির উৎস খুঁজতে গিয়ে সাকিবের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে একই রকমের একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। এই ভিডিওটি ফেসবুকে আপলোড করা হয়েছিল ২০২৩ সালের জুনে। সেটি ছিল ডিজিটাল ফাইন্যান্সিয়াল প্রতিষ্ঠান নগদের একটি প্রচারণামূলক ভিডিও। প্রকৃত ভিডিওটির শুরুর ১৯ থেকে ৪০ সেকেন্ড পর্যন্ত অংশ কেটে সেটি সম্পাদনা করে ভুয়া ভিডিও রিলটি বানানো হয়েছে। 

মূল ভিডিওর অডিও পরিবর্তন করে সেখানে বেটিং সাইটের প্রচারণা চালানোর অডিও জুড়ে দেওয়া হয়েছে সম্পাদনা করা ভিডিওটিতে। এখন পর্যন্ত আড়াই হাজারের মতো ব্যবহারকারী রিলটিতে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন এবং শেয়ার করেছেন ৪১ জন। রিলটিতে মন্তব্য করেছেন ২৫১ জন ব্যবহারকারী, যেখানে কেউ কেউ এটি সত্য বলে মেনে নিয়েছেন, আবার কেউ কেউ বলেছেন এটি এআই দিয়ে তৈরি। ভিডিওটি সত্য ধরে নিয়ে এক ব্যবহারকারী লিখেছেন, “এমপি সাহেব এখন জুয়ার এড করেন”। “বিজনেসম্যান” লিখে মন্তব্য করেছেন আরেক ব্যবহারকারী। ভিডিওটি এআই দিয়ে তৈরি মন্তব্য করে এক ব্যবহারকারী লিখেছেন, “শুরু হয়ে গেছে AI এর ধোকাবাজি। সামনে আরও কত কি যে আসবে কে জানে। সবাই সাবধান !!” 

সাকিবের এই ভুয়া ভিডিও ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে বিজ্ঞাপন আকারেও। ১৫১৬ ফেব্রুয়ারি থেকে এই ভিডিও-র দুইটি বিজ্ঞাপন খুঁজে পাওয়া যায় ফেসবুকের অ্যাড লাইব্রেরিতে। এই প্রতিবেদন লেখার সময়ও বিজ্ঞাপনগুলো সচল ছিল। 

যে পেজটি থেকে এই ভুয়া ভিডিও আপলোড করা হয়েছে এবং বিজ্ঞাপনগুলো চালানো হয়েছে– সেটির নাম AsapSCIENCE। পেজের শেষ পোস্টটি ছিল প্রায় ৩ বছর আগে। ২০২১ সালের ৮ এপ্রিলের পর আর কোনো পোস্ট করা হয়নি এই ফেসবুক পেজ থেকে। এর আগে পেজটিতে বিজ্ঞান বিষয়ক একাধিক ভিডিও আপলোড করা হয়েছে। ফেসবুক পেজে একটি ওয়েবসাইটের লিংকও যুক্ত আছে। সেখানে গিয়ে একই নামে ইন্সটাগ্রাম, ইউটিউবএক্স (আগের টুইটার) অ্যাকাউন্টও খুঁজে পাওয়া যায়। সবগুলো অ্যাকাউন্টের বিবরণেই বলা হয়েছে যে, এটি পরিচালিত হয় কানাডা থেকে।

কিন্তু এই ফেসবুক পেজে এখন যে ২৯ জন অ্যাডমিন আছে, সেখানে কানাডার কেউ নেই, বরং ১৪ জনই ভিয়েতনামের। অর্থাৎ পেজ পরিচালনাকারী এ্যাডমিনের প্রায় অর্ধেক মাত্র একটি দেশের। ফেসবুক হ্যাকিং বিষয়ে ডিসমিসল্যাবের একটি গবেষনায় দেখা যায়, ফেসবুকে প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ডের প্রচারণা চালানোর একটি বড় অংশ পরিচালিত হয় ফিলিপাইন ও ভিয়েতনাম থেকে। বাংলাদেশসহ অনেক দেশের ব্যবহারকারী এই প্রতারণার শিকার হয়েছেন।

সম্পাদিত ভিডিওতে সাকিব যে বেটিং অ্যাপ বা মোবাইল ক্যাসিনো সবাইকে ডাউনলোড করতে বলেন সেটির নাম ইলোনবেট। ভিডিওটিতে এই অ্যাপের নাম ভেসে উঠতে দেখা যায়।

ইলোনবেট নামের অ্যাপকে জড়িয়ে ভুয়া ভিডিও ছড়ানোর ঘটনা এবারই প্রথম নয়। এর আগেও বাংলাদেশের আরেক ক্রিকেটার, মুস্তাফিজুর রহমানের একটি ভুয়া ভিডিও বানিয়ে এই বেটিং সাইটের প্রচারণা চালানো হয়েছিল।

সাকিবকে নিয়ে বেটিং সাইটের আরেকটি ভিডিও-ও ছড়াতে দেখা গেছে ফেসবুকে। ‘বিমানচালক বাংলাদেশ’ নামের পেজ থেকে ‘ক্রেজি টাইম’ নামক বেটিং সাইটের প্রচারণা চালানো হয়েছে উক্ত ভিডিওতে। তবে সম্পাদনা করা ভিডিওটি আসলে স্পোর্টস-ওয়েবসাইট ক্রিকবাজকে সাকিবের দেওয়া সাক্ষাৎকারের একটি খণ্ডিত ক্লিপ।

আরো কিছু লেখা