তামারা ইয়াসমীন তমা

রিসার্চার, ডিসমিসল্যাব
এটি সি.টি স্ক্যান, এমআরআই, এক্স-রের বিকল্প নতুন কোনো প্রযুক্তি ব্যবহারের দৃশ্য নয়
This article is more than 8 months old
CT Scan Factcheck Feature Image

এটি সি.টি স্ক্যান, এমআরআই, এক্স-রের বিকল্প নতুন কোনো প্রযুক্তি ব্যবহারের দৃশ্য নয়

তামারা ইয়াসমীন তমা
রিসার্চার, ডিসমিসল্যাব

সম্প্রতি ফেসবুকে একটি ভিডিও (, , ) পোস্ট করে দাবি করা হচ্ছে যে, এটিতে এক্স-রে, সিটি স্ক্যান ও এমআরআই-এর বিকল্প নতুন প্রযুক্তির সাহায্যে লাইভ স্ক্রিনিং‍য়ের মাধ্যমে মানব শরীরের খুঁটিনাটি পরীক্ষার দৃশ্য দেখা যাচ্ছে।

এর আগে ২০১৮ সালেও একই ভিডিও এবং সেটির স্ক্রিনশট  (, , , , ) একই ধরনের দাবি সহকারে ভাইরাল হয়।

পোস্টগুলোতে আরও দাবি করা হয়েছে, কথিত এই নতুন প্রযুক্তির ফলে সিটি স্ক্যান, এমআরআই এবং এক্স-রের মতো বর্তমান প্রযুক্তিগুলো অচল হয়ে পড়বে।

তবে ডিসমিসল্যাব দেখেছে, ভাইরাল ভিডিওটিতে কোনো নতুন প্রযুক্তির সহায়তায় লাইভ স্ক্রিনিং‍য়ের মাধ্যমে মানব শরীরের খুঁটিনাটি পরীক্ষার দৃশ্য দেখা যাচ্ছে না।

ভিডিওটি মূলত অ্যানাটমেজ টেবিলের, কোনো রোগ নির্ণয়কারী যন্ত্রের নয়।

ভিডিওটি পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, টেবিলের মতো একটি স্ক্রিনে মানবদেহের থ্রিডি ছবি রয়েছে যা সহজেই টাচস্ক্রিনে জুম ও রোটেট করা সম্ভব হচ্ছে এবং শরীরের পেশী, অস্থি থেকে অন্ত্রগুলো পর্যন্ত আলাদাভাবে জুম করে দেখা যাচ্ছে।

অনলাইনে সার্চ করে ভিডিওটির কোনো মূল উৎসের সন্ধান পাওয়া না গেলেও এ ধরনের যন্ত্র ব্যবহারের একাধিক ভিডিও পাওয়া গেছে।

২০১৮ সালে ইউটিউবে আপলোড করা এক ভিডিওতে একই যন্ত্র নিয়ে কাজ করতে দেখা যায় যার ক্যাপশনে বলা হয়েছে, নর্থ হান্টারডন হাইস্কুলের শিক্ষার্থীদের শারীরবিদ্যা (অ্যানাটমি) ক্লাসে বিশেষ এই প্রযুক্তির মাধ্যমে পড়ানো হচ্ছে।

ভিডিওটির ক্যাপশনে যন্ত্রটির একটি নামও পাওয়া যায়, অ্যানাটমেজ টেবিল। একই নামের শিরোনামে আরেকটি ভিডিও পাওয়া যায়, সেখানেও এই যন্ত্রটিকে শিক্ষার্থীদের পাঠ্যক্রমে ব্যবহার করার কথা বলা হয়েছে।

অ্যানাটমেজ টেবিল মূলত বিভিন্ন মেডিকেল ইম্যাজিং টেস্টের ছবি দিয়ে তৈরি থ্রিডি মডেলের ভার্চুয়াল ব্যবচ্ছেদ করে থাকে। সাধারণত শিক্ষার্থীদের ভার্চুয়াল শরীর ব্যবচ্ছেদের মাধ্যমে পাঠদানে মেডিকেলসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান টেবিলটি ব্যবহার করে থাকে।

তবে থ্রিডি ভিডিও বা ছবি এই যন্ত্রের মাধ্যমে ধারণকৃত নয়। বরং এমআরআই বা সিটি স্ক্যান করার প্রচলিত প্রযুক্তির মাধ্যমে পাওয়া ছবির সাহায্যে নির্মিত থ্রিডি ইমেজ যন্ত্রটিতে ব্যবহৃত হয়। 

অ্যানাটোমেজ লিখে গুগলে সার্চ করলে দেখা যায়, এটি ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক একটি মেডিকেল কোম্পানি যারা শিক্ষাখাতসহ মেডিকেল ও ডেন্টাল শিল্পখাতের কথা মাথায় রেখে ২০০৪ সাল থেকে বিভিন্ন নতুনধারার প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছে।

এ যন্ত্রটি সম্পর্কে প্রতিষ্ঠানের অ্যাপ্লিকেশন ডিরেক্টর ক্রিস থমসন ২০২০ সালে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, অ্যানাটমি বা শারীরবিদ্যা পাঠদানে সহায়তার কথা মাথায় রেখেই অ্যানাটমেজ টেবিল ডিজাইন করা হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন হাসপাতালের সিটি স্ক্যান ও এমআরআই রিপোর্টগুলো ভালোভাবে পাঠ করতেও এটি সাহায্য করবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। 

একই দাবি ভারতের সামাজিক মাধ্যমগুলোতে ছড়িয়ে পড়লে ইন্ডিয়া টুডেকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে অ্যানাটমেজের স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশিপসের সিনিয়র ম্যানেজার জ্যাসন ম্যালে জানান, “এই টেবিল এক্স-রে কিংবা সিটি স্ক্যান বা এমআরআই-এর জায়গা নিতে পারবে না কারণ এটি নিজেই এ ধরনের ইমেজিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে।” 

তিনি আরও জানান, এখানে দেখানো নমুনাগুলোর ছবি সবই এমআরআই, সিটি স্ক্যান ও অন্যান্য ইমেজিং টুলস ব্যবহার করে তোলা হয়েছে। এগুলো দিয়ে থ্রিডি মডেল তৈরি করা হয়েছে। ‘এই টেবিলের ওপর কাউকে রেখে স্ক্যান করা সম্ভব নয়’ বলেও জানান তিনি।

আরো কিছু লেখা