আবরার ইফাজ

রিসার্চ অফিসার, ডিসমিসল্যাব
ব্যারিস্টার সুমনের কাছে ক্ষমা চাননি সাকিব আল হাসান
This article is more than 6 months old

ব্যারিস্টার সুমনের কাছে ক্ষমা চাননি সাকিব আল হাসান

আবরার ইফাজ

রিসার্চ অফিসার, ডিসমিসল্যাব

সম্প্রতি সাকিব আল হাসান, ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন বলে একটি ভিডিও ছড়াতে দেখা গেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও টিকটকে (, , , , , , , )। তবে ডিসমিসল্যাবের যাচাইয়ে দেখা যায়, এসব ভিডিওর যে অংশে সাকিবকে ক্ষমা চাইতে দেখা যাচ্ছে– সেই ভিডিওটি পুরোনো এবং সেটি ব্যারিস্টার সুমনের কাছে ক্ষমা চাওয়ার ব্যাপারে নয়।

গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হওয়া দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে মাগুরা-১ আসন থেকে এবং ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন হবিগঞ্জ-৪ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তারপর থেকেই এই ভিডিওগুলো ছড়াতে দেখা যায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। সদ্য নির্বাচিত এই দুই সংসদ সদস্যকে নিয়ে কিছু মিমও (, , ) ছড়াতে দেখা গেছে।

২০২৩ সালের ১৬ই মার্চ ব্যারিস্টার সুমন তার ফেসবুক পেজ থেকে একটি ভিডিও পোস্ট করে দাবি করেন যে, হোটেল সোনারগাঁওয়ে তিনি একটি অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন, যেখানে সাকিব আল হাসানও উপস্থিত ছিলেন। সেই সময় সাকিব তাকে দেখে মারতে আসেন।

এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়েছে সম্পাদনা করা ভিডিওগুলো। ভিডিওতে দেখা যায় সাকিব বলছেন যে, “আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। কিন্তু আমার মনে হয় তারও সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত ছিল। অবশ্যই খুবই সেনসেটিভ। ভুল ত্রুটি হবেই এবং ভুল ত্রুটি নিয়েই আমরা আসলে জীবনে চলাচল করি। আমার কোনো ভুল হয়ে থাকলে অবশ্যই আমি আপনাদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং আপনাদের মনে কষ্ট দিয়ে থাকলে সেজন্যেও আমি ক্ষমা প্রার্থনা করছি।” ভিডিওটির একটি অংশে ব্যারিস্টার সুমনকে বলতে শোনা যায়, “এখন সাকিবের ব্যাপারে আমার ঐরকম কোনো আশা নাই। আমি শুধু একটাই মনে করি, সাকিব তুমি ভাল খেল।”

ভিডিওগুলোর ক্যাপশনে বলা হচ্ছে ব্যারিস্টার সুমনের কাছে ক্ষমা চাইছেন সাকিব আল হাসান। যদিও এই দু’টি ভিডিওর মধ্যে কোনো সংযোগ নেই। সাকিবের যে ভিডিওটি এখানে ব্যবহার করা হয়েছে তা মূলত ২০২০ সালের ১৬ই নভেম্বর সাকিব আল হাসানের অফিশিয়াল ইউটিউব পেজ থেকে প্রকাশিত হওয়া একটি ভিডিওর অংশ। এই ভিডিওতে সাকিব মূলত সেই সময়ে ঘটা দুইটি বিষয়ে মানুষের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। প্রথম আলোর সংবাদ অনুযায়ী এই ভিডিওতে সাকিব আল হাসান শুরুতে কলকাতায় যাওয়ার পথে বেনাপোল বন্দরের চেকপোস্টে এক ভক্তের মোবাইল ছুঁড়ে ফেলার জন্য সকলের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। পরবর্তীতে তিনি কলকাতায় একটি পূজো মন্ডপে উপস্থিত হওয়ার কারণে যারা কষ্ট পেয়েছেন তাদের কাছে ক্ষমা চান। 

ব্যারিস্টার সুমনের যে বক্তব্যটি ভিডিওতে দেখা গেছে সেটি মূলত ২০২৩ সালের ২রা অক্টোবরে একাত্তর টেলিভিশনের সঙ্গে তার একটি সাক্ষাৎকার থেকে নেয়া। ভিডিওতে ব্যারিস্টার সুমন ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানকে নিয়ে কিছু মন্তব্য করেন।

এই দুইটি ভিডিওর সময় এবং প্রেক্ষাপটের মধ্যে কোনো সংযোগ না থাকলেও, ভিডিও দুটিকে সম্পাদনা করে এমনভাবে প্রচার করা হচ্ছে যেন দেখে মনে হয় সাকিব আল হাসান ব্যারিস্টার সুমনের কাছে ক্ষমা চাইছেন। ডিসমিসল্যাব এই ভিডিওটির প্রথম যে সূত্রটি খুঁজে পায় সেই ভিডিওটির ভিউ ৪৮ লাখ এবং সেখানে কমেন্টের মাধ্যমে যুক্ত হয়েছেন প্রায় ৯ হাজারের বেশি মানুষ।

ঢাকা প্রকাশ নামের একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালেও ভুল তথ্য প্রচারিত হয়েছে এই বিষয়কে কেন্দ্র করে। ৭ জানুয়ারি, “এমপি হয়ে সাকিব আল হাসানকে নিয়ে যা বললেন ব্যারিস্টার সুমন” শীর্ষক একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, “বিজয়ী হওয়ার পরেই সাকিব আল হাসানের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন ব্যারিস্টার সুমন। যা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এ নিয়ে চারদিকে চলছে নানা আলোচনা ও সমালোচনা।” কিন্তু সংবাদে যে মন্তব্যের কথা বলা হয়েছে, সেই কথাগুলো ব্যারিস্টার সুমন বলেছিলেন তিন মাস আগে। একাত্তর টিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে। বিষয়টি কেন্দ্র করে ইউটিউবেও নানা ধরনের ভিডিও (, , , , ) প্রচারিত হতে দেখা গেছে।

আরো কিছু লেখা