আবরার ইফাজ

রিসার্চ অফিসার, ডিসমিসল্যাব
নাস ডেইলি ও ড. ইউনূসকে নিয়ে ভুয়া প্রচারণা ফেসবুক বিজ্ঞাপনে
This article is more than 7 months old

নাস ডেইলি ও ড. ইউনূসকে নিয়ে ভুয়া প্রচারণা ফেসবুক বিজ্ঞাপনে

আবরার ইফাজ

রিসার্চ অফিসার, ডিসমিসল্যাব

ভয়েস অব বাংলাদেশ নামের ফেসবুক পেজ থেকে গত ২৬ অক্টোবর একটি ভিডিও পোস্ট করে দাবি করা হয় যে, ড. ইউনূস তাঁর পক্ষে প্রচারণামূলক ভিডিও বানানোর জন্য অর্থ দিয়েছেন নাস ডেইলির প্রতিষ্ঠাতা নুসাইর ইয়াসিনকে। ভিডিওটি ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমেও। তবে বিষয়টি সত্য নয় বলে ডিসমিসল্যাবকে জানিয়েছেন নুসাইর। ভয়েস অব বাংলাদেশ পেজটি থেকে এর আগেও ডিপফেকসহ একাধিক ভুয়া খবর প্রচারের নজির দেখা গেছে, যেগুলো নিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে অন্তত তিনটি ভিন্ন ফ্যাক্টচেকিং সংস্থা। এসব ভুয়া তথ্য সম্বলিত পোস্টেরও ফেসবুক বিজ্ঞাপন চালানো হয়েছে পেজটি থেকে।

ভয়েস অব বাংলাদেশের ভিডিওটিতে দাবি করা হয়: ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পক্ষে প্রচারণামূলক ভিডিও বানানোর জন্য অর্থ নিয়েছেন নাস ডেইলি-খ্যাত আন্তর্জাতিক ভ্লগার নুসাইর ইয়াসিন। ভিডিওটিতে ড. ইউনূস ও নুসাইরের একটি ছবি দেখিয়ে দর্শকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয় “একটি ধূসর রঙের স্যুটকেস”-এর দিকে। ভিডিওর দাবি অনুযায়ী, সেই স্যুটকেসে ছিল ৮০ হাজার ডলার, যেটি নুসাইর গ্রহণ করেছেন পারিশ্রমিক হিসেবে। প্রচারণামূলক ভিডিওটি সম্পাদনার কাজ শেষ হয়েছে এবং সেটি প্রকাশিত হওয়ার পর ড. ইউনূস তাঁকে আরও ৫০ হাজার ডলার প্রদান করবেন বলেও উল্লেখ করা হয় ভয়েস অব বাংলাদেশের ভিডিওটিতে। দাবি করা হয়েছে যে, নাস ডেইলির সহযোগী আরেক ভ্লগার প্রজেক্ট নাইটফল বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

উল্লিখিত ভিডিওতে ড. ইউনূস ও নুসাইরের যে ছবিটি ব্যবহার করা হয়েছে, সেটি গত ৩০ সেপ্টেম্বর পোস্ট করা হয়েছিল ড. ইউনূসের  ফেসবুক এবং ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট থেকে। ছবিটির ক্যাপশনে লেখা ছিল, “দারিদ্র হ্রাসকরণ ও অর্থনৈতিক অন্তর্ভূক্তি থেকে শুরু করে সামাজিক ব্যবসায়ের বিকাশ ও ৩জিরো ক্লাবের বিষয়ে অধ্যাপক ইউনূসের জীবনব্যাপী কাজ নিয়ে মত বিনিময় করতে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ভ্লগার নুসাইর ইয়াসিন তথা নাস, যিনি নাস ডেইলি পেজের মাধ্যমে ১ হাজারটি এক-মিনিট দৈর্ঘ্যের ভিডিও বানিয়েছেন, যার ফলোয়ারের সংখ্যা সব মিলিয়ে প্রায় ৬৫ মিলিয়ন।”

অর্থের বিনিময়ে ড. ইউনূসের পক্ষে ভিডিও বানানোর এই দাবি সম্পর্কে জানতে ডিসমিসল্যাব যোগাযোগ করে নাস ডেইলির সঙ্গে। নাস ডেইলির প্রতিষ্ঠাতা নুসাইর ডিসমিসল্যাবকে বলেন, “এটি পৃথিবীর সবচেয়ে হাস্যকর ভুয়া খবর। স্পষ্টতই, এটা সত্য নয়। মূলত একে অপরের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার জন্য একটি অনানুষ্ঠানিক বৈঠক ছিল এটি। এ নিয়ে কোনো ভিডিও করা হয়নি। এছাড়া, প্রজেক্ট নাইটফলের সঙ্গেও আমার আর কোনো সম্পৃক্ততা নেই। আর এই ব্যাগটা কী? আমি ড. ইউনূসের জন্য শুভকামনা জানাই। আর আশা করি বাংলাদেশের মানুষ এ ধরনের অপতথ্য বিশ্বাস করবে না!” 

‘ভয়েস অব বাংলাদেশ’ পেজটি থেকে ড. ইউনূস ও নাস ডেইলিকে নিয়ে পোস্ট করা ভিডিওটি ফেসবুকে বিজ্ঞাপন হিসেবে প্রচার করা হয় অক্টোবরের ২৬ থেকে ২৮ তারিখ পর্যন্ত। এবং পোস্টটি পৌঁছেছে ৩ থেকে ৩.৫ লাখ দর্শকের কাছে।

পেজটি ফেসবুকে নিজের পরিচয় দেয় নিউজ ও মিডিয়া ওয়েবসাইট হিসেবে। এবং অতীতেও পেজটি থেকে ভুল বা অপতথ্য ছড়ানোর নজির দেখতে পাওয়া যায়, যেগুলো নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে একাধিক ফ্যাক্ট-চেকিং সংস্থা। 

উল্লিখিত পোস্টটির কিছু দিন আগে, ১৭ অক্টোবর, পেজটি থেকে আরেকটি পোস্ট প্রকাশিত হয়েছিল ড. ইউনূসকে নিয়ে, যেখানে দাবি করা হয়েছিল: ড. ইউনূস ১০০ কোটি টাকা সহায়তা দিয়েছেন ইসরায়েলকে। এই পোস্টটিও প্রচার করা হয়েছিল দুইটি ফেসবুক বিজ্ঞাপনের (, ) মাধ্যমে। পরবর্তীতে ফ্যাক্ট-চেকিং সংস্থা বুম বাংলাদেশরিউমর স্ক্যানার যাচাই করে প্রতিবেদন প্রকাশ করে যে তথ্যটি মিথ্যা। ফেসবুক অ্যাড লাইব্রেরির হিসেব অনুযায়ী, এই অপতথ্যটি যথাক্রমে ৭০ হাজার থেকে ৮০ হাজার এবং ৪৫ হাজার থেকে ৫০ হাজার মানুষকে দেখানো হয়েছিল।

ইসরায়েলকে অর্থ প্রদান প্রসঙ্গে বার্তাসংস্থা এএফপি-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ড. ইউনূস বলেছিলেন, “আমি এই ধরনের প্রচারণা অগ্রাহ্য করি এবং আশা করি যে এগুলো নিজে থেকেই থেমে যাবে। কিন্তু সাম্প্রতিক মাসগুলোতে এ ধরণের অপতথ্য ও মানহানিকর প্রচারণা বেড়েছে অভূতপূর্ব পর্যায়ে।”

এছাড়াও, অক্টোবরের ১২ তারিখে একই পেজ থেকে তারেক রহমানের একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। পরে ফ্যাক্ট-চেকিং সংস্থা ফ্যাক্ট-ওয়াচ রিপোর্ট করে যে, ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির সহায়তায়। পরবর্তীতে ব্রিটিশ গণমাধ্যম ফিনান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে ভিডিওটি সরিয়ে নেয় মেটা। একই পেজ থেকে ২৮ অক্টোবরে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি পোস্ট করে লেখা হয়, “‘লক্ষ্মীপূজা’ এবং প্রবারণা পূর্ণিমা’র প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ২৮ অক্টোবরের সমাবেশের তারিখ পরিবর্তন”। এই পোস্টটিও ফেসবুকে প্রচারিত হয়েছিল বিজ্ঞাপন আকারে। পোস্টটি দেখানো হয়েছিল ২০ থেকে ২৫ হাজার মানুষকে। তবে রিউমর স্ক্যানারের রিপোর্ট অনুযায়ী, এই প্রেস বিজ্ঞপ্তিটিও ছিল ভুয়া।

আরো কিছু লেখা