তৌহিদুল ইসলাম রাসো

নতুন করে রিভিউ বম্বিং
সংঘবদ্ধ নেটওয়ার্ক নিয়ে প্রতিবেদনের পর আবার আক্রমণ ডিসমিসল্যাবের ফেসবুক পেজে
তৌহিদুল ইসলাম রাসো
গত ৩০ নভেম্বর বিভিন্ন গণমাধ্যম ও ফেসবুক পেজে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের একটি সংঘবদ্ধ নেটওয়ার্কের নেতিবাচক রিভিউ বম্বিং নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে ডিসমিসল্যাব। একই দিনে ডিসমিসল্যাবের ফেসবুক পেজেও প্রতিবেদনটি নিয়ে পোস্ট করা হয়। পোস্টের কয়েকঘণ্টা পর থেকে পুনরায় ডিসমিসল্যাবের পেজে নেতিবাচক মন্তব্য আসা শুরু করে। আগের ভাষ্যের পুনরাবৃত্তি করে নতুন করে ছয় শর বেশি নেতিবাচক রিভিউ দেখা যায়। তবে এবার অনেক গ্রুপ/পেজের পোস্টে অন্য ব্যবহারকারীদের ডিসমিসল্যাবের পেজে নেতিবাচক রিভিউ দিতে আহ্বান জানাতেও দেখা গেছে।
ডিসমিসল্যাবের গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, ফেসবুকে এক হাজারের বেশি অ্যাকাউন্টের একটি সংঘবদ্ধ নেটওয়ার্ক আওয়ামী লীগের সমালোচনাকারী বা আওয়ামী বিরোধী রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও রাজনীতিবিদদের ফেসবুক পেজ/প্রোফাইলে নেতিবাচক রিভিউ দিয়ে, পেজের রেটিং কমিয়ে দেওয়ার কাজ করছে।
এমনকি গণমাধ্যম, মিডিয়া প্রতিষ্ঠান ও সরকারী অনেক প্রতিষ্ঠানের পেজে নেতিবাচক রিভিউ দিয়ে ভাসিয়ে দিয়েছে তারা। কিছু ক্ষেত্রে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগ বা তাদের কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশের পরপরই সেখানে রিভিউ অ্যাটাক শুরু হয়েছে। গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান ঢাকা স্ট্রিম ও দৃকের ক্ষেত্রে এমন নজির দেখা গেছে।
ডিসমিসল্যাবের ফেসবুক পেজেও দেখা গেছে এমন কিছু। এনসিপি নেত্রী ড. তাসনিম জারাকে অনলাইন হয়রানির পেছনে আওয়ামী পন্থী অ্যাকাউন্টধারীরা জড়িত জানিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশের পরই প্রথম রিভিউ বম্বিংয়ের শিকার হয় ডিসমিসল্যাব ফেসবুক পেজ। সেই ঘটনারই সূত্র ধরে একটি সংঘবদ্ধ নেটওয়ার্কের সন্ধান পায় ডিসমিসল্যাব যা নিয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় ৩০ নভেম্বরে।
গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশের পর নতুন করে রিভিউ বম্বিং দেখা যায় দুটি ধাপে। প্রথমটি ৩০ নভেম্বরে ইংরেজি প্রতিবেদন প্রকাশের পর। সেদিন দুপুর ২টা ৪৯ মিনিটে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় এবং ফেসবুকে পোস্ট করা হয় ৩টা ৫৩ মিনিটে। নেতিবাচক রিভিউ আসা শুরু হয় রাত ৮টা ৩৫ মিনিট থেকে। মোট ২৪টি মন্তব্য করা হয়। পরের দুই দিন অর্থাৎ ১ ও ২ ডিসেম্বরে মন্তব্য আসে যথাক্রমে ৩৬ ও ৮টি।

দ্বিতীয় ধাপের আক্রমণ শুরু হয় ৩ ডিসেম্বর দিবাগত রাত ১টা ৫৪ মিনিট থেকে। সালাউদ্দীন আহমেদ নামের প্রোফাইল থেকে পুনরায় সংঘবদ্ধ রিভিউ আক্রমণের সূত্রপাত ঘটে। অনুসন্ধানে দেখা যায়, রিভিউ দেওয়ার ৪ মিনিট পর ১টা ৫৮ মিনিটে নিজের প্রোফাইলে পোস্ট করে অন্যদেরও ডিসমিসল্যাবের পেজে নেতিবাচক রিভিউ দেওয়ার আহ্বান জানান। এর কিছুক্ষণ পর রাত ২টা ৯ মিনিটে ডিসমিসল্যাবকে নিয়ে আরেকটি পোস্ট করেন এই ব্যবহারকারী। একই সময়ে “ক্র্যাক প্লাটুন বাংলাদেশ” নামের একটি গ্রুপেও নেতিবাচক রিভিউ করার আহ্বান জানানো হয়। গ্রুপটিতে ফলোয়ারের সংখ্যা প্রায় ২৭ হাজার। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে কিছু ব্যক্তিগত প্রোফাইল (১, ২) থেকেও পোস্ট করে রিভিউ আক্রমণের আহ্বান করা হয়। এরপর থেকেই গুচ্ছ আকারে নেতিবাচক রিভিউ মন্তব্য আসতে থাকে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, ৩০ ডিসেম্বর থেকে ৩ ডিসেম্বর বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত নতুন করে ডিসমিসল্যাবের পেজে ৭৩০টি মন্তব্য করা হয়েছে। এই প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত শুধু ৩ ডিসেম্বরেই ৬৬২টি মন্তব্য করা হয়েছে। এর মধ্যে বিচ্ছিন্নভাবে কিছু ইতিবাচক মন্তব্য দেখা গেলেও প্রায় সবগুলোই নেতিবাচক। আগের ভাষ্যগুলোর পুনরাবৃত্তি করে রিভিউয়ের মন্তব্যগুলোতে বলা হয়েছে, “এই পেজ থেকে ভুয়া খবর এবং অপপ্রচার ছড়ানো হয়,” “এই পেজ একটি প্রোপাগান্ডা মেশিন। তারা মিথ্যা তথ্য এবং ঘৃণামূলক বক্তব্যও ছড়িয়ে দেয়,” ইত্যাদি। এছাড়া গালি ও অবমাননাকর মন্তব্যও দেখা যায় রিভিউতে।

ডিসমিসল্যাবের সাধারণ পোস্টের কমেন্টেও নেতিবাচক মন্তব্য করতে দেখা গেছে। বেশকিছু ব্যবহারকারী যারা ইতোমধ্যেই পেজে নেতিবাচক রিভিউ দিয়েছে তারা পোস্টের মন্তব্যে গিয়ে বিভিন্ন ধরনের গালি ও অবমাননাকর শব্দ ব্যবহার করে মন্তব্য করেছে। বেশকিছু পোস্টে গবেষণাকারীদের নিয়েও ব্যক্তিগত আক্রমণ করা হয়েছে।