নোশিন তাবাসসুম

তারেক রহমানের দেশের মাটি স্পর্শ করার এআই ছবির ব্যবহার সংবাদমাধ্যমে
নোশিন তাবাসসুম
তারেক রহমান দেশের মাটি স্পর্শ করছেন বলে একটি ছবি একাধিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত হতে দেখা গেছে। ডিসমিসল্যাবের ফ্যাক্টচেকে দেখা যায়, নির্দিষ্ট এই ছবিটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) সাহায্যে তৈরি।
আজ ২৬ ডিসেম্বর, দৈনিক দিনকালের প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল, “দেশে ফিরেই খালি পায়ে স্পর্শ করলেন মাতৃভূমির মাটি।” প্রতিবেদনের সঙ্গে যুক্ত একটি ছবি। সে ছবিতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সদৃশ এক ব্যক্তিকে খালি পায়ে মাটি স্পর্শ করতে দেখা যাচ্ছে। ছবির ক্যাপশনে লেখা, “বিমান থেকে নেমেই বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান খালি পায়ে হৃদয়াবেগে স্পর্শ করলেন মাতৃভূমির মাটি- দিনকাল।” ছবির সত্ত্ব হিসেবে পত্রিকার নাম দেওয়া।
একই ছবিসহ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বাংলাদেশি গণমাধ্যম দৈনিক ইনকিলাব ও দৈনিক যায়যায়দিন। দৈনিক ইনকিলাবের শিরোনাম ছিল “৬৩১৪ দিন পর দেশের মাটি স্পর্শ করলেন তারেক রহমান।” দৈনিক যায়যায়দিনের শিরোনাম হলো, “দেশে ফিরেই মাটির স্পর্শ নিলেন তারেক রহমান।”

প্রসঙ্গত, দীর্ঘ ১৭ বছর পর বাংলাদেশে ফিরেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। দেশে ফিরে বিমানবন্দরের ভিআইপি গেইট দিয়ে বের হওয়ার পর গেটের পাশে খোলা স্থানে তিনি খালি পায়ে দেশের মাটিতে পা রাখেন এবং হাত দিয়ে কিছু মাটি তুলে নেন। এই প্রতিবেদনগুলো মূলত সেই ঘটনা নিয়েই।
ফেসবুকের একাধিক (১, ২) ব্যক্তিগত প্রোফাইল, অনলাইন পোর্টাল (১, ২) থেকে ছবিটি পোস্ট করা হয়। লিংকডইনে ও একই দাবিতে ছবিটি পোস্ট হতে দেখা যায়। এছাড়া দৈনিক সমধারা নামের একটি অনলাইন পোর্টাল থেকেও ছবিটি ব্যবহার করে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।

ছবিতে দেখা যায়, তারেক রহমান হাঁটু মুড়ে বসে মাটি স্পর্শ করছেন। তার সামনে কিছু হলুদ ফুলের গাছ রয়েছে। তারেক রহমান যেখানে বসে আছেন তার সম্পূর্ণ জায়গাটুকুতে মাটি রয়েছে। ছবির কোথাও ঘাস দেখতে পাওয়া যায়না।
ছবিটির সত্যতা যাচাইয়ে, দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড এর ২৫ ডিসেম্বরে প্রকাশিত “৬৩১৪ দিন পর বাংলাদেশের মাটি ছুঁয়ে দেখলেন তারেক রহমান” শিরোনামের একটি ভিডিও প্রতিবেদন পর্যবেক্ষণ করে দেখে ডিসমিসল্যাব। ভিডিওটির ১ মিনিট ৩৭ সেকেন্ডে দেখা যায় তারেক রহমান ফুলের বাগানে প্রবেশ করছেন। ১ মিনিট ৪৪ সেকেন্ডে দেখা যায় তিনি জুতা খুলছেন। এ সময় প্রতিবেদনে ক্যাপশন হিসেবে লেখা আসে “জুতা খুলে দেশের মাটি স্পর্শ করলেন তারেক রহমান।”
এর পর থেকে ভিডিওর দৃশ্য পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ফুলের বাগানটির সম্পূর্ণ অংশ জুড়ে ঘাস রয়েছে। যেখানে গোলাকারভাবে হলুদ ফুলের গাছ সাজানো, তার সীমানায় সামান্য অংশ জুড়ে বৃত্তাকারভাবে মাটি আছে। তবে তারেক রহমান খালি পায়ে ঘাসের উপরেই দাঁড়িয়ে রয়েছেন।
এরপরে তিনি সামান্য উবু হয়ে গাছের পাশ থেকে কিছুটা মাটির দলা তুলে নেন এবং তার পাশে দাঁড়ানো এক ব্যক্তির হাতে মাটির দলার কিছুটা ভেঙে দেন। আবার মাটির দলা নিজ হাতে নিয়ে সেটা আবার গাছের দিকে ফেলে দেন। এরপর তিনি পুনরায় জুতা পড়ে বাগান ত্যাগ করে বাসে উঠে পরেন।
বাগানে থাকা বা মাটি স্পর্শের পুরো সময়টা তিনি ঘাসের উপরে দাঁড়িয়ে ছিলেন। ছড়িয়ে পড়া ছবির মতো তারেক রহমানকে সম্পূর্ণ ভাবে বসতে এবং বসে মাটি স্পর্শ করতে কখনো দেখা যায়নি। এছাড়া, তিনি যেস্থানে দাঁড়িয়ে মাটি সংগ্রহ করেছিলেন সেই স্থানে ঘাস দেখা যাচ্ছে যা ছবিতে অনুপস্থিত। এমনকি ফুলগুলোর আকারেও অমিল দৃশ্যমান।
আরও নিশ্চিত হতে একাত্তর টিভির ২৫ ডিসেম্বরে প্রকাশিত “হাতে নিয়ে দেশের মাটি ছুঁলেন তারেক রহমান; হাঁটলেন খালি পায়ে” শিরোনামের একটি ভিডিও প্রতিবেদনও পর্যবেক্ষণ করে ডিসমিসল্যাব। এই ভিডিওর ১৩ সেকেন্ডে তারেক রহমানকে বাগানে প্রবেশ করতে দেখা যায়। এবং ১ মিনিট ২৫ সেকেন্ডে বাগান ত্যাগ করতে দেখা যায়। এই ভিডিওর ঘটনাক্রম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের ঘটনাক্রমের সঙ্গে পুরোপুরি মিলে যায়। এবং এই ভিডিওতেও কোথাও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে পুরোপুরি বসতে দেখা যায়নি। ফুলের বাগানের পাশেও প্রকাশিত ছবির মতো এত বিস্তৃত ঘাসবিহীন মাটি দেখা যায়নি একাত্তর টিভির ভিডিওতে।
অধিকতর নিশ্চিত হতে এআই কনটেন্ট শনাক্তকরণ টুল হাইভ মডারেশন দিয়ে যাচাই করে দেখা গেছে, ছবিটির এআই দিয়ে তৈরির ৮৫.৬ শতাংশ পর্যন্ত সম্ভাবনা আছে। এ থেকে বোঝা যায় ছড়ানো ভিডিওটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তির মাধ্যমে তৈরির সম্ভাবনা অনেক বেশি।

অর্থাৎ, বিভিন্ন গণমাধ্যমে ব্যবহৃত তারেক রহমানের দেশের মাটি স্পর্শ করার ছবিটি এআই দিয়ে তৈরি করা হয়েছে।