তৌহিদুল ইসলাম রাসো
ভিডিওটি হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের, গণভবনের নয়
তৌহিদুল ইসলাম রাসো
সম্প্রতি একাধিক সামাজিক মাধ্যমে জুলাই স্মৃতি জাদুঘর দাবিতে একটি ভিডিও ভাইরাল হতে দেখা গেছে। ২১ সেকেন্ডের ওই ভিডিও গণভবনে ধারণ করা হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে ফেসবুক ও ইউটিউবের বেশ কিছু পোস্টে। তবে যাচাইয়ে দেখা যায় এটি গণভবনে নয়, বরং ধারণ করা হয়েছে পাঁচতারকা হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের কনসিয়ার্স লাউঞ্জে। আর এটি কোনো জাদুঘরের নয় এবং জায়গাটির এখনো কোনো নির্দিষ্ট নামকরণও হয়নি বলে জানিয়েছে হোটেল কর্তৃপক্ষ। গত জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের স্মৃতিতে সাজানো এই জায়গাটিকে তারা অনানুষ্ঠানিকভাবে “জুলাই কর্নার” বলে থাকেন।
ফেসবুকের একাধিক ব্যক্তিগত প্রোফাইল (১, ২), পেজ (১, ২, ৩, ৪, ৫) ও গ্রুপ (১, ২) থেকে হুবহু একই ভিডিও, একই দাবিতে শেয়ার করতে দেখা গেছে। বিবরণীতে লেখা, “জুলাই স্মৃতি জাদুঘর।” আর সেখানে স্থান নির্দেশক চিহ্ন ব্যবহার করে লেখা ‘গণভবন’। ফেসবুকের এক পেজ থেকে শেয়ার হওয়া ভিডিওটি বিশ্লেষণে দেখা যায়, সেটি এখন পর্যন্ত দেখেছেন পাঁচ লাখের বেশি ব্যবহারকারী। প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ৩০ হাজারের অধিক। এছাড়া মন্তব্য করেছেন সাড়ে তিনশোর বেশি ব্যবহারকারী।
এক ব্যবহারকারী মন্তব্যে লিখেছেন, “গণভবনের যাদুঘর কি সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে?” আরেক ব্যবহারকারী লেখেন, “জনম জনম যেন এই স্মৃতি জাদুঘর থাকে… আর অন্তরে যেন থাকে জুলাইয়ের প্রেরণা ….”। তবে ভিডিওটির প্রকৃত স্থান নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে সেটি কোথায় ধারণ করা হয়েছে তা জানতে চেয়ে মন্তব্য করেছেন অনেকে। কেউ কেউ আবার এটিকে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ধারণ করা বলেও মন্তব্য করেছেন।
গণভবনের দাবিতে একাধিক ভিডিও (১, ২, ৩) ছড়িয়ে পড়তে দেখা গেছে ইউটিউবেও।
ভাইরাল ভিডিওটির দাবিগুলো সঠিক কি না তা যাচাইয়ে অনলাইনে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে ডিসমিসল্যাব। সেখানে আরও অনেক পোস্টের মধ্যে আলাদা একটি পোস্টে স্থান সম্পর্কে অন্য তথ্য দিতে দেখা যায়। ফেসবুকের ‘আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন স্কাউট গ্রুপ’ নামের একটি পেজ থেকে একই ভিডিও শেয়ার করে বলা হয় ভিডিওটি জুলাই স্মৃতি জাদুঘরের। আর স্থান উল্লেখ করা হয় হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল, ঢাকা।
পেজটি বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত ১৯ নভেম্বরে ভাইরাল ভিডিওটি ইন্টারকন্টিনেন্টালের বলে শেয়ার করার পাশাপাশি একই জায়গায় আরও কিছু ছবি আলাদাভাবে পোস্ট (১, ২) করা হয়। একই দিনে শেয়ার করা সেই ছবিগুলো একই জায়গার বলে নিশ্চিত হয় ডিসমিসল্যাব। আর ছবি শেয়ার করা পোস্টগুলোর স্থানেও উল্লেখ করা হয় হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের।
এছাড়া কি-ফ্রেম ধরে অনুসন্ধান করে আলাদা দুটি ফেসবুক প্রোফাইলে (১, ২) একই জায়গার কিছু ছবি পোস্ট করতে দেখা যায়। সেই পোস্টগুলোতে ছবি তোলার স্থান হিসেবে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের নাম উল্লেখ করা হয়। গত ১৫ নভেম্বরে একই স্থানের কিছু ছবি পোস্ট করে বার্তা দেওয়া হয় ছবিটি তোলা হয়েছে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের ভিআইপি লাউঞ্জে। আর ১৯ নভেম্বরে আরেক ব্যবহারকারী পোস্ট করে ইংরেজি বিবরণীতে লেখেন, “নতুন বাংলাদেশ। হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল ঢাকা।”
ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের কি না এবং সেখানে জুলাইয়ের স্মৃতিতে এমন কিছু তৈরি করা হয়েছে কি না– সেটি জানতে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে ডিসমিসল্যাব। ভিডিওটি এই পাঁচতারকা হোটেলে ধারণ করা হয়েছে বলে ডিসমিসল্যাবকে নিশ্চিত করেন হোটেলের মার্কেটিং এক্সিকিউটিভ মুসকান তাবাসসুম। তিনি বলেন, “জুলাইয়ের স্মৃতিতে আমাদের হোটেলে এই কনসিয়ার্স লাউঞ্জটি তৈরি করা হয়েছে। যে কেউ চাইলে এখানে আসতে পারেন।” অনেকে এসে এখানে ছবি তোলেন বলেও জানান তিনি।
লাউঞ্জটির নাম সম্পর্কে জানতে চাইলে এই কর্মকর্তা বলেন, “জায়গাটির এখনো কোনো অফিসিয়াল নামকরণ করা হয়নি। আমরা এটিকে ‘জুলাই কর্নার’ বলে থাকি।”
তাই বলা যায়, ভাইরাল ভিডিওর দাবিগুলো ভুয়া। এটি গণভবনের জুলাই স্মৃতি জাদুঘরের নয় বরং হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের। আর সেখানে জায়গাটিকে বর্তমানে “জুলাই কর্নার” বলে ডাকা হয়; যার এখনো কোনো স্থায়ী নামকরণ হয়নি।
প্রসঙ্গত, জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের স্মৃতিতে প্রধানমন্ত্রীর রাষ্ট্রীয় বাসভবন, গণভবনে জাদুঘর নির্মাণ করা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের একাধিক উপদেষ্টা (১, ২)। গত ২৮ অক্টোবর গণভবন পরিদর্শনে গিয়ে জাদুঘর নির্মানের জন্য নির্দেশনাও দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তবে প্রস্তাবিত এই জাদুঘরের সঙ্গে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের “জুলাই কর্নারের” কোনো সম্পর্ক নেই।