তৌহিদুল ইসলাম রাসো
রাজনৈতিক কারণে নয়, বিষপানে মারা গেছে দুই শিশু
তৌহিদুল ইসলাম রাসো
সামাজিক মাধ্যম ফেসবুক ও এক্সে (সাবেক টুইটার) দুই শিশুকে হত্যার দাবিতে বেশকিছু পোস্ট শেয়ার হতে দেখা গেছে। দুটি আলাদা ছবি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে শিশুদের বাবা আওয়ামী লীগ করার কারণে সমন্বয়করা তাদের হত্যা করেছে। ঘটনার স্থান উল্লেখ করা হয়েছে যশোরে। তবে যাচাইয়ে দেখা গেছে দাবিটি ভুয়া। শিশুদের মারা যাওয়ার ঘটনাটি যশোরের নয়, বরং উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরার। আর গণমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে রাজনৈতিক কারণে নয়, পারিবারিক কলহের জেরে মায়ের দেওয়া বিষপানে মারা গেছে শিশু দুটি।
রাজনৈতিক কারণে শিশুদের হত্যা করা হয়েছে – এই দাবিতে ফেসবুকের বেশকিছু পোস্টে (১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ৮, ৯) দুটি আলাদা ছবি শেয়ার করা হয়েছে। বিবরণীতে বলা হচ্ছে, “কি দুর্ভাগা সন্তান এরা, কিছু মানুষরূপী সন্ত্রাসী সমন্বয়ক লালবদর হায়েনার হাতে প্রাণ গেলো।তাদের অপরাধ তাদের যশোরে পিতা আওয়ামীলীগ করেন। এই অপরাধের শাস্তি এই নিষ্পাপ সন্তানদের জীবন দিয়ে দিতে হলো।” একাধিক পোস্টের বিবরণীতে কিছু হ্যাশট্যাগও (#জঙ্গী_ইউনূস_হঠাও_দেশ_বাচাও, #জঙ্গীবাদ_রুখে_দাও, #SaveBangladeshiPeople) যোগ করা হয়েছে।

একই দাবিযুক্ত একটি পোস্টের মন্তব্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে; কেউ ঘটনাটিকে সত্য বলে ধরে নিয়েছেন আবার কেউ সেটিকে ভুয়া বলেছেন। এক ব্যবহারকারী সত্য ধরে নিয়ে লিখেছেন, “এটা ক্ষমাহীন অপরাধ। এই নৃশংস হত্যাকান্ডের সর্বোচ্চ বিচার হওয়া উচিত। বহুপ্রাণ গেছে । এখন যেকোন অপরাধীর বিচার হওয়া উচিত অবশ্যই রাস্ট্রের আইন অনুযায়ী।” আরেক ব্যবহারকারী মিথ্যা ধরে নিয়ে লিখেছেন, “এটা ভূয়া নিউজ, কিছুদিন আগে দেখেছিলাম এক মা এই দুই সন্তান নিয়ে আত্ম হত্যা করে ছিল,তখন এই ছবি দেখে ছিলাম ।”
সামাজিক মাধ্যম এক্সেও ঠিক একই দাবিতে পোস্ট (১, ২) শেয়ার হতে দেখা গেছে।
ঘটনাটির সত্যতা যাচাইয়ে ছবিদুটি আলাদা করে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে দেখে ডিসমিসল্যাব। প্রথম ছবিটির ক্ষেত্রে বেশকিছু সংবাদ প্রতিবেদন (১, ২, ৩) খুঁজে পাওয়া যায়। গত ২৯ জানুয়ারিতে প্রকাশিত ঢাকা মেইলের এক প্রতিবেদনে বলা হয় সেদিন দুপুরে সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের কালিকাপুর গ্রামে দুই শিশু সন্তানসহ বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন রত্না খাতুন নামের এক নারী। ঘটনায় দুই শিশুর মৃত্যু হলেও আশঙ্কাজনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন আছেন মা।

একই ঘটনা উল্লেখ করে সংবাদ প্রকাশ করে আরেক গণমাধ্যম প্রথম আলো। সেখানে বলা হয় স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মনোমালিন্যের জেরে দুই শিশুসন্তানসহ বিষপান করেন মা রত্না বেগম। পরে তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হলে দুই সন্তানকে মৃত ঘোষণা করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। আর মা রত্নাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। মারা যাওয়া দুই শিশুর নাম আরিয়ান ও মাহির আবরার বলেও জানানো হয় প্রতিবেদনে।
আর পরের ছবিটি যাচাইয়ে সংবাদ প্রতিবেদন না পাওয়া গেলেও ঘটনার দিন অর্থাৎ ২৯ জানুয়ারির একটি ফেসবুক পোস্ট থেকে সেটি একই ঘটনার বলে নিশ্চিত হওয়া যায়। একই ছবি শেয়ার করে সেই পোস্টের বিবরণীতে সংবাদ প্রতিবেদনের ঘটনাটিরই উল্লেখ করা হয়। বলা হয়, “নিজের দুই সন্তানকে বিষ খাইয়ে হত্যা করলেন মা,পরবর্তীতে শিশু দুটির মা নিজেও আত্মহত্যার চেষ্টা করেন,ঘটনাটি সাতক্ষীরা জেলার কালীগঞ্জে ঘটেছে।”
অর্থাৎ, শিশুদের মৃত্যর ঘটনার সঙ্গে কোনো রাজনৈতিক যোগসাজশ নেই। বাবা আওয়ামী লীগ করার কারণে নয়, মায়ের দেওয়া বিষপানেই মারা গেছে দুই শিশু।