তামারা ইয়াসমীন তমা

রিসার্চ অফিসার, ডিসমিসল্যাব
ফেসবুকে ছড়াচ্ছে রাজনীতিবিদদের ডিপফেক ভিডিও
This article is more than 12 months old

ফেসবুকে ছড়াচ্ছে রাজনীতিবিদদের ডিপফেক ভিডিও

তামারা ইয়াসমীন তমা

রিসার্চ অফিসার, ডিসমিসল্যাব

সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে রাজনীতিবিদদের নামে ভুয়া ভিডিও প্রচারের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট নিপুণ রায় চৌধুরী ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদ ইকবাল খানের এমন দুটি ভিডিও যাচাই করে ডিসমিসল্যাব দেখেছে, ভিডিওগুলো ডিপফেক ও এআই-এর মাধ্যমে সম্পাদিত।

গত ৩০ জুলাই একটি ওয়েব সিরিজের দৃশ্যে বিএনপি নেত্রী নিপুন রায়ের মুখ বসিয়ে তৈরি করা একটি ডিপফেক ভিডিও প্রচারিত হয়। পরবর্তীতে ফেসবুকে ভিডিওটি ছড়াতে দেখা যায় পোস্ট ও রিলস আকারে (, , )। ডিসমিসল্যাবের যাচাইয়ে দেখা যায়, ভিডিওটি প্রকৃতপক্ষে পশ্চিমবঙ্গের একটি ওয়েব সিরিজ, শ্রীকান্ত এর অভিনেত্রী সোহিনী সরকারের অভিনীত একটি দৃশ্য। মূল ভিডিওটি বিকৃত করে নিপুন রায়ের বলে দাবি করা হচ্ছে।

অন্যদিকে, বিএনপির ছাত্রদল নেতা রাশেদ ইকবালের একটি ছবি এআই টুলের মাধ্যমে সম্পাদিত করে ভুয়া অডিও সংযোজনের মাধ্যমে ভিডিও আকারে (, , ) সামাজিক মাধ্যমে প্রচারিত হচ্ছে। 

ভিডিওটির এক কোণায় ডি-আইডি লেখা একটি লোগো দেখা যায়। ডি-আইডি মূলত একটি জেনারেটিভ এআই টুল। এর মাধ্যমে যেকোনো স্থিরচিত্রকে এআই অ্যাভাটারের ভিডিওতে রূপান্তরিত করা সম্ভব। রাশেদ ইকবাল খানের ভিডিওটি এই টুলের সাহায্যে তৈরি করা হয়েছে। 

যাচাইয়ে দেখা যায়, গত ২১ ফেব্রুয়ারি রাশেদ ইকবাল খান তাঁর ফেসবুক পেজে মূল ছবিটি পোস্ট করেন। পরবর্তীতে বেশ কিছু সংবাদ মাধ্যমও (, , ) তাঁর এই ছবিটি ক্রপ করে ব্যবহার করে। এই ছবিটিই ডি-আইডি অ্যাপে আপলোড করা হয়েছে এবং তার সঙ্গে কম্পিউটার-জেনারেটেড অডিও যুক্ত করে ভিডিওটি বানানো হয়েছে। 

এছাড়া ভিডিওটিতে রাশেদ ইকবাল খানের বয়স ৪৭ বছর বলে দাবি করা হলেও সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, জাতীয় পরিচয় পত্র অনুসারে এই ছাত্রদল নেতার জন্ম ১৯৮৭ সালে। অন্যদিকে, গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রাশেদ জানান, তিনি ঢাকার রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজ থেকে ২০০৫ সালে এইচএসসি পাশ করেন।

এর আগে আরেক ইন্সটাগ্রাম মডেলের ভিডিও বিকৃত করে তৈরি একটি ডিপফেক ভিডিও বিএনপি নেত্রী রুমিন ফারহানার নামে প্রচারিত হয়েছে বলে জানিয়েছে একাধিক ফ্যাক্টচেকিং সংস্থা। এছাড়া সম্প্রতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের এআই-নির্মিত ভুয়া ছবি দিয়ে মার্কিন গণতন্ত্রের সমালোচনার নজিরও মিলে। 

দ্য গার্ডিয়ানের বরাতে জানা যায়, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে তৈরি অপতথ্য নির্বাচনের সময় গুরুতর ঝুঁকির সৃষ্টি করতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ওপেন এআই-এর সিইও স্যাম অল্টম্যান মার্কিন কংগ্রেসের এক শুনানিতে বলেন, এই এআই মডেলগুলোর মানুষকে প্রভাবিত ও প্ররোচিত করার ক্ষমতা রয়েছে।

যুক্তরাজ্যের অ্যালান টিউরিং ইন্সটিটিউটের ফাউন্ডেশন এআই রিসার্চের পরিচালক অধ্যাপক মাইকেল উলড্রিজ গার্ডিয়ানকে জানান, প্রযুক্তি নিয়ে তাঁর মূল উদ্বেগ হলো এআই-চালিত অপতথ্য। 

অধ্যাপক উলড্রিজ আরো বলেন, “এই মুহূর্তে এআইভিত্তিক অপতথ্য আমার উদ্বেগের জায়গাগুলোর তালিকায় প্রথমে আছে। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে নির্বাচন ঘনিয়ে এসেছে এবং আমরা জানি যে সোশ্যাল মিডিয়া ভুয়া তথ্য ছড়ানোর একটি শক্তিশালী মাধ্যম। কিন্তু এখন আমরা এটাও জানি যে, এআই আরও অনেক বড় আকারে অপতথ্য তৈরি করতে পারে।”

আরো কিছু লেখা