আবরার ইফাজ

রিসার্চ অফিসার, ডিসমিসল্যাব
উপদেষ্টাদের জড়িয়ে ধর্মীয় আঙ্গিকে ছড়াচ্ছে যেসব অপতথ্য

উপদেষ্টাদের জড়িয়ে ধর্মীয় আঙ্গিকে ছড়াচ্ছে যেসব অপতথ্য

আবরার ইফাজ

রিসার্চ অফিসার, ডিসমিসল্যাব

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের একাধিক উপদেষ্টাদের নামে বা তাদের জড়িয়ে সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে বেশ কিছু ভুয়া বক্তব্য ছড়াতে দেখা গেছে ধর্মীয় আঙ্গিকে। অধিকাংশ ভুয়া বক্তব্যই ছড়ানো হয়েছে বিভিন্ন গণমাধ্যমের সোশ্যাল মিডিয়া ফটোকার্ড নকল করে। এর আগে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নামে ছড়ানো এমন বেশ কয়েকটি ভুয়া বক্তব্য নিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ডিসমিসল্যাব।

সর্বশেষ এ ধরনের ধর্মীয় আঙ্গিকের ভুয়া বক্তব্য ছড়ানো হয়েছে ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেনকে নিয়ে। দৈনিক ইত্তেফাকের লোগো ব্যবহার করে বানানো এই ফটোকার্ডে বলা হয়েছে “রাষ্ট্রের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে ড. ইউনূসের এখন দাঁড়ি রাখা উচিত”- এমন মন্তব্য করেছেন ধর্ম উপদেষ্টা। দৈনিক ইত্তেফাকের লোগো ব্যবহার করা এই ফটোকার্ডটি শেয়ার হতে দেখা যায় ফেসবুকে (, , , , , )। এই বিষয়ে নিশ্চিত হতে ডিসমিসল্যাব যোগাযোগ করে ধর্ম উপদেষ্টার ব্যক্তিগত কর্মকর্তা শরিফুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, এটি ভুয়া। ধর্ম উপদেষ্টা এমন কোন মন্তব্য করেননি। 

ইত্তেফাকের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ, এক্স (সাবেক টুইটার), ইউটিউবইনস্টাগ্রামে এই সংক্রান্ত কোন সংবাদ বা ফটোকার্ড খুঁজে পায়নি ডিসমিসল্যাব। তবে এই ফটোকার্ডটির সঙ্গে মিল আছে– এমন একটি সংস্করণ দেখতে পাওয়া যায়। ১১ সেপ্টেম্বরে দৈনিক ইত্তেফাকের অফিশিয়াল পেজ থেকে পোস্ট করা একটি ফটোকার্ডের মূল সংবাদটি ছিল, “দুর্গাপূজার নিরাপত্তায় আকাশে হেলিকপ্টার, পানিতে ডুবুরি থাকবে : ধর্ম উপদেষ্টা।” ভুয়া ফটোকার্ডটিতে শুধু লেখাগুলো বদলে দেওয়া হয়েছে। ফটোকার্ডটির বিষয়ে নিশ্চিত হতে দৈনিক ইত্তেফাকের অনলাইন হেড শরাফত হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এই ফটোকার্ডটি ইত্তেফাকের নয়।

চলতি বছরের ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর একই মাসে ধর্ম উপদেষ্টাকে জড়িয়ে আরও দুটি অপতথ্য ছড়াতে দেখা যায়। হজ্ব কেন্দ্রিক সিন্ডিকেটগুলো ভেঙে দেয়ার কথা বলেন ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন। এই বক্তব্যের পর ফেসবুকে বিভিন্ন ব্যবহারকারী উপদেষ্টার বরাতে পোস্ট করেন, “হজ ও ওমরাহর খরচ কমিয়ে তা দুই থেকে আড়াই লাখ এবং পঞ্চাশ থেকে ষাট হাজার মধ্যে করা সম্ভব।” তবে রিউমর স্ক্যানারের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সরকারের পক্ষ থেকে এমন কোনো বক্তব্য দেননি এই উপদেষ্টা।

আরেকটি অপতথ্য ছড়ায় যেখানে দাবি করা হয় যে খালিদ হোসেন বাংলাদেশ থেকে সকল পর্ণ ওয়েবসাইট বন্ধ করে দেয়ার কথা বলেছেন। একই কথাটি প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের নাম উল্লেখ করেও ছড়ায়। তবে যাচাই প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, দাবিটি সত্য নয়। 

ধর্মীয় প্রসঙ্গের সাথে জড়িয়ে অপতথ্য ছড়ানো হয়েছে অন্যান্য উপদেষ্টাদের নিয়েও। “আলেম-ওলামাদের সমন্বয়করা শ্রদ্ধা করে। তারা না থাকলে আন্দোলন সফল হতো না”- এমন একটি ভুয়া উক্তি যুক্ত ফটোকার্ড ছড়িয়ে পড়ে আসিফ মাহমুদের নামে। বাংলাদেশের তথ্যযাচাইকারী সংস্থা ফ্যাক্টওয়াচের একটি প্রতিবেদনে বলা হয় এই ফটোকার্ডটি সত্য নয়।

একইভাবে অপতথ্যের শিকার হন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। একাধিক গণমাধ্যমের ফটোকার্ড ব্যবহার করে দাবি করা হয় যে রিজওয়ানা হাসানকে পর্দা করতে বলেছেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের ক্রিকেটার তানজীম সাকিব। রিউমর স্ক্যানার একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করে তানজিম সাকিব এমন কোন মন্তব্য করেননি এবং ফটোকার্ডগুলোও ভুয়া। প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসকে জড়িয়ে ধর্মীয় রঙে মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর একাধিক ঘটনা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে ডিসমিসল্যাব।

কেন এই ধরনের অপতথ্য ছড়ানোর প্রবণতা নিয়ে জানতে যোগাযোগ করা হয় তথ্য যাচাইকারী সংস্থা ফ্যাক্টওয়াচের ফ্যাক্টচেকার শুভাশীষ দাস রায় দীপের সাথে। তিনি ডিসমিসল্যাবকে জানান, “রাজনৈতিক অংশগ্রহণ বাড়লে অপতথ্যের পরিমাণও বাড়তে পারে। ধর্মীয় বিষয় জড়ানো অপতথ্য আগেও ছিল। নির্দিষ্টভাবে এখন যেগুলো ছড়াচ্ছে তা মানুষের ব্যক্তিগত আকাঙ্খা থেকে আসছে বলেই মনে হয়। মূলত মানুষ যা দেখতে বা শুনতে চায়।” 

চলমান ঘটনাবলীর পরিপ্রেক্ষিতে বিশিষ্টজনের বরাতে প্রচারিত ধর্মীয় অপতথ্য সামাজিক সংকটের দিকে নিয়ে যাবে বলে ধারণা করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্নালিজম এন্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. সাঈদ আল-জামান। তিনি ডিসমিসল্যাবকে বলেন, “এতে সমাজের বিবাদমান সম্প্রদায় ও গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে আশংকা, আতংক, ও অনিশ্চয়তার প্রসার ঘটাতে পারে।” তিনি এমন আশংকাও করেন যে, এর ফলে এ সকল ব্যক্তিবর্গের (যাদের নাম ব্যবহার করে অপতথ্য ছড়ানো হচ্ছে) গুরুত্বও হ্রাস পেতে পারে।

আরো কিছু লেখা