তামারা ইয়াসমীন তমা

রিসার্চ অফিসার, ডিসমিসল্যাব
বাংলাদেশে ভারতীয় স্যাটেলাইট চ্যানেল সম্প্রচার বন্ধ হয়নি

বাংলাদেশে ভারতীয় স্যাটেলাইট চ্যানেল সম্প্রচার বন্ধ হয়নি

তামারা ইয়াসমীন তমা

রিসার্চ অফিসার, ডিসমিসল্যাব

বাংলাদেশ সরকার ভারতের সকল স্যাটেলাইট চ্যানেল সম্প্রচার বন্ধ করছে, এমন একটি দাবি সম্প্রতি ছড়াতে দেখা গেছে। সরকারিভাবে আজ থেকে (২৭ নভেম্বর) বাংলাদেশে সকল ভারতীয় স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেল বন্ধ- এমন দাবিতে ভারতীয় টিভি চ্যানেল রিপাবলিক বাংলা একটি প্রতিবেদন প্রকাশের পর তার বরাতে সামাজিক মাধ্যমেও দাবিটি ছড়িয়ে পড়ে। তবে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার ভারতীয় চ্যানেল বন্ধের এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি বলে ডিসমিসল্যাবকে নিশ্চিত করেছে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় এবং ক্যাবল অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (কোয়াব)।

২৭ নভেম্বর ভারতীয় টিভি চ্যানেল রিপাবলিক বাংলা “বাংলাদেশে বন্ধ হল ভারতীয় স্যাটেলাইট চ্যানেল!” শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রচার করে। রিপাবলিক বাংলার ইউটিউব চ্যানেলে প্রতিবেদনটি খুঁজে পাওয়া যায়।  রিপাবলিক টিভি বাংলার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকেও প্রতিবেদনটি শেয়ার করা হয়। প্রতিবেদনটির ভিডিও ক্লিপ শেয়ার করে সামাজিক মাধ্যমেও একই দাবি (, , ) ছড়াতে দেখা যায়। সামাজিক মাধ্যমে “বাংলাদেশে বন্ধ হলো সমস্ত ভারতীয় স্যাটেলাইট চ্যানেল। আজ থেকে সম্প্রচার বন্ধ করা হলো”- দাবিতে একাধিক পেজ থেকে পোস্ট (, , , , , ) শেয়ার হতে দেখা যায়। বেশ কিছু পোস্টে রিপাবলিক বাংলাকে সূত্র হিসেবে উল্লেখ করা হয়। 

রিপাবলিক টিভি বাংলায় প্রচারিত সংবাদটিতে বলা হয়, “এই মুহূর্তের সবচেয়ে বড় ব্রেকিং। বাংলাদেশে বন্ধ করা হলো সমস্ত স্যাটেলাইন চ্যানেল। ঠিকই শুনছেন…মোহাম্মদ ইউনূস সরকার, তারা বন্ধ করে দিলেন ভারতীয় স্যাটেলাইট চ্যানেল। আজ থেকে বন্ধ করা হলো সম্প্রচার…ভারতীয় মিডিয়ায় আপত্তি কেন মুহাম্মদ ইউনূসের?…ভারত বিদ্বেষের আরও এক নজির। বাংলাদেশে আরও এক নজির গড়লেন ইউনূস সরকার। ইতিহাসে এটা লেখা হচ্ছে। প্রত্যেকে মনে রাখবেন। আপনি ভারতীয় স্যাটেলাইট চ্যানেল বন্ধ করে দিচ্ছেন।”

প্রতিবেদনটি ঘিরে সামাজিক মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের মন্তব্য দেখা গেছে। ইউটিউব সংবাদটির কমেন্ট ঘরে একজন লিখেন, ‘জাগো হিন্দুস্থানের হিন্দু’। আরেকজন মন্তব্য করেন ‘যুদ্ধেরদিকে বাংলাদেশ’। সামাজিক মাধ্যমে অনেকে বিষয়টি শেয়ার করে লিখেন, ‘আজ থেকে বন্ধ করা হলো সম্প্রচার, সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত’। আরেকজন লিখেন, “সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের মাধ্যমেই ভারত প্রীতি তৈরি হয়েছিল! এইটা বন্ধ করেই দেশপ্রেমের পরিচয় দেয়া শুরু হলো!”

বিষয়টি যাচাই করতে ক্যাবল অপারেটর এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ(কোয়াব)এর যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক কামরুল আলম শামীমের সঙ্গে কথা বলে ডিসমিসল্যাব। তিনি জানান, এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। যে ভারতীয় চ্যানেলগুলো আগে চলছিল, এখনো সেগুলো সম্প্রচারিত হচ্ছে। সরকারের এধরনের নির্দেশনার বিষয়েও আমাদের জানা নেই। 

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের টিভি- ২ শাখার সহকারী সচিব মোঃ ফিরোজ খানের সঙ্গে কথা বলা হলে তিনিও ডিসমিসল্যাবকে জানান যে, ভারতীয় স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেল সম্প্রচার বন্ধ করার বিষয়ে কোনো সরকারি নির্দেশনা দেওয়া হয়নি।
তবে এবারই প্রথম নয়, এর আগেও চট্টগ্রাম নিয়ে বিতর্কিত প্রতিবেদনের কারণে নিন্দার মুখে পড়ে রিপাবলিক বাংলা। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারণা ছড়ানোর অভিযোগে গত ১০ নভেম্বর ভারতীয় চ্যানেল রিপাবলিক বাংলার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ এবং বাংলাদেশের ভূখণ্ডে তাদের নিউজ ও কন্টেন্ট নিষিদ্ধ-ব্লক করতে আইনি নোটিশও পাঠানো হয়।

আরো কিছু লেখা