তামারা ইয়াসমীন তমা

রিসার্চ অফিসার, ডিসমিসল্যাব
ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে হেনস্থার শিকার ব্যক্তি মারা যাননি

ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে হেনস্থার শিকার ব্যক্তি মারা যাননি

তামারা ইয়াসমীন তমা

রিসার্চ অফিসার, ডিসমিসল্যাব

ধানমণ্ডি ৩২ নম্বর সড়কে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘরে ১৫ আগস্টের শোক জানাতে গিয়ে হেনস্থার শিকার হওয়া আব্দুুল কুদ্দুস মাখন নামের এক ব্যক্তি মারা গেছেন বলে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। একাধিক পোস্টে (,, , ) তার ছবি শেয়ার করে দাবি করা হয় অপমান সহ্য করতে না পেরে তিনি হার্ট অ্যাটাকে মারা যান। তবে ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে ওই ব্যক্তির বড় ছেলে নিশ্চিত করেছেন যে তিনি বেঁচে আছেন এবং তার বাবার মৃত্যুর সংবাদটি গুজব। এছাড়া গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ওই ব্যক্তি নিজেই তার বেঁচে থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। 

শেখ মুজিবর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে শ্রদ্ধা জানাতে গতকাল ১৫ আগস্ট সদ্য ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীসহ অনেকে আসেন। দলটির সহযোগীরা পাল্টা অভ্যুত্থান ঘটাতে পারেন এমন আশঙ্কায় রাজপথে অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানান বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়করা। এ অবস্থায় ধানমন্ডির ৩২ নাম্বার সড়ক এলাকার আশেপাশে কেউ আসলেই তাদের প্রতিহত করার চেষ্টা করে অবস্থান নেওয়া শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা। এসময় একাধিক ব্যক্তিকে মারধর ও লাঞ্ছিত করার ঘটনাও ঘটে। এমনই একটি ভিডিও ফেসবুকেও ভাইরাল হয়। দেখা যায় দলবদ্ধভাবে কয়েকজন মিলে প্রায় নিরাভরণ এক ব্যক্তিকে রিকশায় বসিয়ে গানের সঙ্গে তাল মেলাতে বাধ্য করছে। পরবর্তীতে ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়লে অনেকেই ছবি ও ভিডিও শেয়ার দিয়ে জানান, ওই ব্যক্তি এই ঘটনা সহ্য করতে না পেরে হার্ট অ্যাটাক করে মারা গেছেন। 

ফেসবুকে বেশ কিছু পোস্টে আসিফ তালুকদার নামের একটি ভেরিফায়েড প্রোফাইলের একটি পোস্টের স্ক্রিনশট ছড়িয়ে লেখা হয় “যে মানুষটি ৩২ নম্বরে শোক জানাতে গিয়ে জেন জিদের হাতে উলঙ্গ হয়েছিলেন লজ্জা অপমানে তিনি হার্ট অ্যাটাক করে মারা গেছেন। তার ছেলের পোস্ট। ধিক্কার জানানোর ভাষা নেই।” স্ক্রিনশটে লেখা, “আমার বাবা মারা গিয়েছে। তোমরা যারা এমন করলে তোমাদের বাবা জীবিত বলে আমি বিশ্বাস করি এবং আমি তাদের দীর্ঘায়ু কামনা করি। তুমি কি মানতে পারতে তোমার বাবার সাথে এমন কেউ করলে ??” 

তবে যাচাইয়ে আসিফের প্রোফাইলে গেলে দেখা যায় তিনি তার পোস্টটি সংশোধন করেছেন। সেখানে তিনি প্রথম লাইনটি পাল্টে লিখেছেন , “আমার বাবা ২০২২ সালে মারা গিয়েছেন”। অর্থাৎ, তিনি মূলত নিজের বাবার মৃত্যুর প্রসঙ্গটি উপমা হিসেবে ব্যবহার করেন যা থেকে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়। মূল পোস্টটি তিনি সম্পাদনা করলেও পূর্বে নেওয়া স্ক্রিনশট থেকে আব্দুল কুদ্দুছ মাখনের মৃত্যুর গুজব ছড়াতে থাকে। 

পরবর্তীতে সিরাজ উল কুদ্দুছ ইমরান নামের এক ব্যক্তি দাবি করেন ধানমন্ডি ৩২ সড়কে অপদস্ত ব্যক্তি তার বাবা আব্দুল কুদ্দুছ মাখন। ফেসবুক প্রোফাইলে নিজের বাবার মৃত্যুর বিষয়টি গুজব হিসেবে উল্লেখ করে তিনি লিখেন, “ভিডিওতে যাকে দেখতে পাচ্ছেন, উনার নাম আব্দুল কুদ্দুছ মাখন। আমি উনার বড়ো ছেলে সিরাজ উল কুদ্দুছ ইমরান। উনি মারা যায় নাই। জীবিত আছেন, মুমূর্ষু অবস্থায় আছেন।” প্রোফাইলটি ঘুরে আব্দুল কুদ্দুছ মাখনেরও একাধিক ছবি পাওয়া যায়। 

সর্বশেষ ঢাকা পোস্টে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আব্দুল কুদ্দুছ মাখন নিজেই তার জীবিত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, “আমাকে যারা গতকাল লাঞ্ছিত করেছে আল্লাহ সবার সঠিক বিচার করবেন। আর আমি জীবিত আছি, ভালো আছি।” অর্থাৎ, ভিডিওর ব্যক্তিটি ছিলেন আব্দুল কুদ্দুছ মাখন এবং তার মৃত্যুর খবরটি গুজব। 

উল্লেখ যে, গত ১৫ আগস্ট ছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৭৫ সালের এই দিনে ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কের একটি বাড়িতে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবার হত্যা করা হয়। আওয়ামী লীগ সরকারের গত প্রায় ১৫ বছরের শাসনকালে প্রতিবছর দিনটি শোক দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছিল। দিনটিতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাসহ অনেকেই বাড়িটিতে বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা জানাতে আসতেন।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। সেদিন ৩২ নম্বরের এই বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়। আওয়ামী লীগ ও দলটির সহযোগীরা ১৫ আগস্টে ধানমন্ডি ৩২ ঘিরে ‘পাল্টা অভ্যুত্থানের’ চেষ্টা করতে পারেন, এমন আশঙ্কায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা সবাইকে রাজপথে থাকার আহ্বান জানান।

আরো কিছু লেখা