মিনহাজ আমান
হায়দরাবাদের ছবি দেখিয়ে পাকিস্তানে লাশ ধর্ষণের খবর প্রচার
মিনহাজ আমান
সবুজ খাঁচায় ঘেরা একটি কবরের ছবি দিয়ে দাবি করা হচ্ছে, পাকিস্তানে নারীদের মৃতদেহ ধর্ষণের হাত থেকে বাঁচাতে কবরে খাঁচা দেওয়া হয়েছে। ৩০ এপ্রিল বাংলাদেশের একাধিক গণমাধ্যমে (১, ২, ৩, ৪) এমন খবর প্রচারিত হয়। কিন্তু ডিসমিসল্যাবের যাচাইয়ে দেখা গেছে, ছবিটি পাকিস্তানের কোনো কবরের নয়, বরং লাশ সুরক্ষিত রাখতে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে ভারতের হায়দরাবাদে।
বাংলাদেশি গণমাধ্যমে খবরটির সূত্র হিসেবে পাকিস্তানের ডেইলি টাইমসের কথা বলা হলেও প্রতিবেদনের সঙ্গে যুক্ত ছবিটিতে কোনো উৎসের উল্লেখ নেই। দুটি প্রতিবেদনে “ফাইল ছবি” বলা হলেও বিস্তারিত কোনো তথ্য নেই। এছাড়া ডেইলি টাইমসের প্রতিবেদনেও এমন কোনো ছবি নেই।
সার্চ করে দেখা যায়, পাকিস্তানে নারীদের লাশ ধর্ষণ থেকে রক্ষা করতে কবরে খাঁচা দেওয়া হচ্ছে– এমন দাবির সঙ্গে এই ছবিটি পোষ্ট করে টুইট করা হচ্ছে গত ২৬ এপ্রিল থেকে। এ সংক্রান্ত একাধিক টুইটে ছবিটি পোস্ট করা হয়। পরবর্তীতে ২৮ এপ্রিল থেকে ভারতের একাধিক মূলধারার গণমাধ্যমে পাকিস্তানের এই আলোচিত খবরটির সঙ্গে কবরের ছবিটি ব্যবহার হতে থাকে। পরে ৩০ এপ্রিল থেকে বাংলাদেশের গণমাধ্যমেও ছবিটি পাওয়া যায়।
ভারতের একাধিক মূলধারার গণমাধ্যমে ছবিটি প্রচারিত হতে থাকায় সেটি যাচাইয়ের উদ্যোগ নিয়েছিল দেশটির ফ্যাক্টচেকিং সংস্থা অল্ট নিউজ। সেখানে সবুজ খাঁচায় ঘেরা কবরের ছবিটিকে তারা ভারতের হায়দরাবাদের বলে চিহ্নিত করেছে। অল্ট নিউজের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, এটি সেখানকার মাদন্নোপেট এলাকার দারাব জং কলোনির একটি কবরস্থানের ছবি। স্থানীয় মসজিদ সালার মুলক সংলগ্ন একটি কবরস্থান থেকে ছবিটি নেওয়া হয়েছে।
কবরটির চারপাশে এভাবে খাঁচা দেয়ার কারণ জানতে অল্টনিউজ কথা বলেছে মসজিদটির মুয়াজ্জিনের সঙ্গে। মুয়াজ্জিন মুক্তার সাহেব জানান, “অনেক লোক এখানে আসে এবং অনুমতি ছাড়াই পুরানো কবরের উপর লাশ দাফন করে। যাদের আগে থেকেই এখানে কবরস্থ করা হয়েছে, তাদের কাছের মানুষেরা ফাতেহা পড়তে আসলে তাদের অভিযোগ থাকে। অন্যরা যেন এভাবে এক লাশের ওপর অন্য লাশ দাফন করতে না পারে সেজন্য পরিবারগুলো সেখানে গ্রিল লাগিয়ে দিয়েছে।” মুয়াজ্জিন মুক্তার সাহেব আরও জানান, সবুজ খাঁচায় আটকানো কবরটি একজন সত্তোর্ধ্ব নারীর এবং দেড় থেকে দু বছর আগে তাঁকে দাফন করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, পাকিস্তানে মৃতদেহ ধর্ষণ বা নেক্রোফিলিয়া বৃদ্ধির খবরটির সূত্র হিসেবে ডেইলি টাইমসে প্রকাশিত একটি সম্পাদকীয়-র কথা বলা হলেও ডেইলি টাইমস সেখানে এই বৃদ্ধির পক্ষে কোনো সূত্র বা পরিসংখ্যান উল্লেখ করেনি।