
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে চাঁদাবাজির প্রতিবাদ করায় ব্যবসায়ীকে বাড়ির সামনে প্রকাশ্যে পিটিয়ে হত্যা করেছে বিএনপির সন্ত্রাসীরা। ফেসবুকে একটি ভিডিও ছড়িয়ে এমন দাবি করা হয়েছে। তবে, ডিসমিসল্যাবের ফ্যাক্টচেকে দেখা যায়, মূল ভিডিওটি ভারতের দিল্লির। চলতি বছরের ২৯ আগস্ট প্রসাদ নিয়ে বিরোধের জেরে একদল দর্শনার্থী দক্ষিণ-পূর্ব দিল্লির কলকা মন্দিরের একজন সেবাদারকে পিটিয়ে হত্যা করে। সেই ঘটনার দৃশ্য ছড়ানো হচ্ছে বাংলাদেশের দাবিতে।
গত ২৯ ডিসেম্বর ফেসবুকের একটি ব্যক্তিগত প্রোফাইল থেকে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। ক্যাপশনে লেখা, “রাজধানীর কাওরান বাজারে চাঁদাবাজির প্রতিবাদ করায় ব্যবসায়ীকে বাড়ির সামনে প্রকাশ্যে পিটিয়ে হত্যা করলো বিএনপির স/ন্ত্রা/সীরা। এই ব্যবসায়ী আজকে মানববন্ধনে অংশ নিয়েছিল। তারপর সন্ধ্যায় বাড়ির গেটের সামনে পিটিয়ে হ-ত্যা করলো বিএনপির স/ন্ত্রা/সীরা।”

এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ভিডিওটি ৭ হাজার ২০০ বারের বেশি শেয়ার করা হয়েছে। ভিডিওটি দেখা হয়েছে ৪ লক্ষ ২৫ হাজারের বেশি বার।
ফেসবুকে একাধিক ব্যক্তিগত প্রোফাইল (১, ২, ৩, ৪, ৫) থেকে একই দাবিতে ভিডিওটি ছড়িয়েছে। ১১ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, একদল ব্যক্তি রাস্তায় পরে থাকা এক ব্যক্তিকে লাঠি দিয়ে আঘাত করছে।
সত্যতা যাচাইয়ে ভিডিওর বিভিন্ন কিফ্রেম ধরে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে ডিসমিসল্যাবের সামনে আসে ২০২৫ সালের ৩০ আগস্ট ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ‘টাইমস অব ইন্ডিয়া’ এর প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন। শিরোনামে লেখা, “দিল্লি হতবাক: ‘চুন্নি প্রসাদ’ নিয়ে বিবাদের জেরে কলকাজি মন্দিরের সেবাদারকে পিটিয়ে হত্যা।” প্রতিবেদনের ভেতরে ব্যবহৃত ২ মিনিটি ২৪ সেকেন্ডের ভিডিওর প্রথম ১১ সেকেন্ড অংশের সঙ্গে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওর হুবহু মিল পাওয়া যায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, “পুলিশ জানিয়েছে, ‘চুন্নি প্রসাদ’ নিয়ে বিরোধের সময় একদল দর্শনার্থীর পিটিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব দিল্লির কলকাজি মন্দিরের একজন সেবাদারকে মেরে ফেলেছে। ঘটনার শিকার, যোগেন্দ্র সিং, ৩৫, প্রায় ১৫ বছর ধরে মন্দিরে সেবা করছিলেন এবং মূলত উত্তরপ্রদেশের হারদোইয়ের ফত্তেপুরের বাসিন্দা। শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টায় একটি পিসিআর কল আসে হামলার খবরে। পুলিশ দেখেছে যোগেন্দ্র সিংকে একাধিক লোক লাঠি ও মুষ্টি দিয়ে আক্রমণ করেছে। তাকে দ্রুত এআইআইএমএস ট্রমা সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল কিন্তু পরে তিনি মারা যান।”

ভিডিওটি একাধিক (১, ২) ভারতীয় গণমাধ্যমের অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেলেও পাওয়া যায়। ইন্ডিয়া টুডে এর ভিডিও প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল, “দেশের রাজধানীতে প্রসাদ ঝগড়ার জেরে কলকাজি মন্দিরের স্বেচ্ছাসেবককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।”
আরও বিস্তারিত জানতে প্রাসঙ্গিক কিওয়ার্ড সার্চ করে একাধিক (১, ২, ৩, ৪) ভারতীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদন পাওয়া যায়।

এর আগেও ভিডিওটি বাংলাদেশের দাবিতে সামাজিক মাধ্যমে ছড়ালে এ বিষয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে বাংলাদেশের ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান রিউমর স্ক্যানার। ভারতের ভিডিও বাংলাদেশের দাবিতে প্রচার নিয়ে ইতিপূর্বে একাধিক ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ডিসমিসল্যাব।
অর্থাৎ, চাঁদাবাজির প্রতিবাদ করায় ব্যবসায়ীকে হত্যার দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি বাংলাদেশের নয়। ভারতের দিল্লির কলকা মন্দিরের একজন সেবাদারকে পিটিয়ে হত্যার দৃশ্যকে ভুয়া দাবিতে ছড়ানো হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, গতকাল, ২৯ ডিসেম্বর, সোমবার রাজধানী ঢাকার কারওয়ান বাজারে চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করে ব্যবসায়ীরা। সেখানে ব্যবসায়ীদের উপর “বহিরাগতরা” হামলা করলে কয়েকজন ব্যবসায়ী আহত হন। পরবর্তীতে ব্যবসায়ীরা লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলাকারীদের প্রতিহত করেন।