ফাতেমা তাবাসুম
গুলশান নয়, ছবিটি ১২০ বছর আগের ঢাকার চকবাজারের
ফাতেমা তাবাসুম
পুরান ঢাকার চকবাজারের একটি সুপরিচিত পুরোনো আলোকচিত্র রাজধানীর গুলশানের ছবি হিসেবে কিছুদিন ধরে শেয়ার হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। ১৯০৪ সালে ফ্রেদরিক ফ্রিৎজ কাপ নামে এক জার্মান আলোকচিত্রী ছবিটি ক্যামেরাবন্দি করেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ওই পোস্টগুলোতে সাল নিয়েও ভুল তথ্য যাচ্ছে।
“বর্তমান বাংলাদেশের সবচেয়ে ভিআইপি এলাকা গুলশান দুই নাম্বার এলাকার প্রাচীন চিত্র” – এই রকম ক্যাপশনসহ কয়েকদিন ধরে ছবিটি ফেসবুকে শেয়ার করা হচ্ছে। সময় হিসেবে বলা হচ্ছে এটি “… ১৮৭২ সালের ছবি!”
![](https://i0.wp.com/dismislab.com/wp-content/uploads/2024/04/Story-1-4.jpg?resize=1024%2C576&ssl=1)
ফেসবুকের একটি পেজ থেকে এই প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত ভুল তথ্যসহ এই ছবিটি শেয়ার করা হয়েছে আড়াই হাজারেরও বেশি। একই পোস্টে ৩৪ হাজারের বেশি ফেসবুক ব্যবহারকারীর রিঅ্যাক্ট রয়েছে, মন্তব্য রয়েছে প্রায় ৯০০ টি। এই পেজের পোস্টের নিচে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করছেন এবং তথ্য সংশোধনের দাবি জানাচ্ছেন। গত ১৬ এপ্রিল বিকাল ৩টা ৫৪ মিনিটে ছবিটি পোস্ট করে বলা হয়: ”বর্তমান বাংলাদেশের সবচেয়ে ভিআইপি এলাকা গুলশান দুই নাম্বার এলাকার প্রাচীন চিত্র”। এই প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত পোস্টে কোনো সংশোধনী দেখা যায়নি।
একই ভুল তথ্যের ক্যাপশন ব্যবহার করে অসংখ্য ফেসবুক ব্যবহারকারীকে (১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ৮, ৯, ১০) ছবিটি শেয়ার করতে দেখা যায়। আবার অনেকে ছবিটি পোস্ট দেওয়ার পাশাপাশি বর্তমান গুলশানের সমসাময়িক ছবি পোস্ট করে পরিবর্তনটা বোঝানোর চেষ্টা করছেন।
ক্যাপশনে এই একই ভুল তথ্য লিখে সেই একই ছবি ফেসবুকের নানা পেজ (১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ৮, ৯, ১০) ও ভিন্ন ভিন্ন গ্রুপেও (১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ৮, ৯, ১০) শেয়ার করতে দেখা যায় বিভিন্ন ব্যবহারকারীকে। বেশ কয়েকটি পেজের অনুসরণকারী কয়েক হাজার। অন্যদিকে, গ্রুপগুলোর কয়েকটির সদস্যের সংখ্যা লাখেরও বেশি।
ডিসমিসল্যাবের যাচাইয়ে খুঁজে পাওয়া যায় ছবিটি ঢাকার গুলশান- ২ এর নয়, বরং পুরান ঢাকার চকবাজারের। ছবিটি ১৯০৪ সালে ধারণ করেন জার্মান আলোকচিত্রী ফ্রিৎজ কাপ। অন্যান্য আরও ইউরোপীয় আলোকচিত্রীদের অনুসরণ করে তিনি ভারতবর্ষে আসেন ১৮৮০-র দশকে। “কার্জন কালেকশন” বা “কার্জন সংগ্রহ” নামের একটি ফটো-অ্যালবামের ৩০টি মুদ্রিত ছবির একটি ছিল এটি। ছবিটির উৎস হিসেবে ব্রিটিশ লাইব্রেরির উল্লেখ পাওয়া যায়। বাংলাদেশ ফোরাম ফর হেরিটেজ স্টাডিজের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াকার এ খানের লেখা “ফ্রিৎজ কাপ নামে একজন আলোকচিত্রি” শীর্ষক এক নিবন্ধে লেখেন, তিনি ব্যক্তিগতভাবে “কার্জন সংগ্রহ” খুঁজে পেয়েছিলেন ব্রিটিশ লাইব্রেরিতে।
পিকরিল ও ওল্ডইন্ডিয়ানফটোসহ বিভিন্ন অনলাইন সংগ্রহশালায় ছবিটিকে ১৯০৪ সালে ফ্রিৎজ কাপের তোলা চকবাজারের ছবি হিসেবেই পাওয়া যায়। সবখানেই ছবির একটি অভিন্ন সারাংশ পাওয়া যায়: ১৯০৪ সালে ঢাকায় ফ্রিৎজ কাপের তোলা ছবিটি ছাপা হয়েছিল ‘কার্জন সংগ্রহ’ অ্যালবামের ৩০টি ছবির সঙ্গে। এটি ঢাকার ‘চক’ বা বাজারের একটি দৃশ্য, যাতে চোখে পড়ে সারি সারি বিপনীর উপরের অংশ। চক বাজার পুরান ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত। এর সরু, আঁকাবাঁকা রাস্তাগুলির পাশেই দাঁড়িয়ে পুরানো সব সারবদ্ধ দালান। দোকানগুলোকে হরেক রকমের পণ্য বিক্রি হয়ে থাকে। সামনে রাস্তায় সব ধরনের যানবাহন, প্রধানত রিকশা ভিড় করে থাকে।”
![](https://i0.wp.com/dismislab.com/wp-content/uploads/2024/04/Picryl.jpg?resize=1024%2C576&ssl=1)
গণমাধ্যমেও বিভিন্ন সময় ছবিটি প্রকাশিত হয়েছে ফ্রিৎজ কাপের তোলা ১৯০৪ সালের ছবি হিসেবেই। “যেভাবে চারশ বছর পরও নিজের নাম রৌশন করে চলেছে চকবাজার” শীর্ষক দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের এক সাম্প্রতিক ফিচারে ছবিটিকে সূত্র সমেত খুঁজে পাওয়া যায়।
এক কথায়, ছবিটি ১৫২ বছর পুরোনো গুলশান- ২ এর নয়, বরং ১২০ বছর পুরোনো পুরান ঢাকার চকবাজারের ছবি।
প্রায়শই, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পুরোনো ছবি দিয়ে প্রেক্ষাপট ছাড়াই ভুল তথ্য ছড়াতে দেখা যায়। যেমন: সিরিয়া-লেবাননের বলে প্রচারিত একটি ছবি পরবর্তীতে গাজার ছবি বলে ছড়িয়ে পড়ে। এছাড়া, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর জানাযার ছবি জিয়াউর রহমানের জানাযার ছবি বলে প্রচার হতে দেখা যায়।