তৌহিদুল ইসলাম রাসো

রিসার্চ অফিসার, ডিসমিসল্যাব
গণমাধ্যমে ভুল শিরোনাম, বিভ্রান্তি সামাজিক মাধ্যমে

করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা

গণমাধ্যমে ভুল শিরোনাম, বিভ্রান্তি সামাজিক মাধ্যমে

তৌহিদুল ইসলাম রাসো

রিসার্চ অফিসার, ডিসমিসল্যাব

দেশে ২৪ ঘন্টায় করোনাভাইরাসে ১৬ জন আক্রান্ত হয়েছেন– এমন একটি দাবি গত ২৩ মার্চ থেকে ছড়াতে দেখা গেছে সামাজিক মাধ্যমে। এমনকি ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে–  এই দাবিও করা হয়েছে ফেসবুকের কিছু পোস্টে। ১৬ জন করোনায় আক্রান্তের তথ্য প্রচারিত হয়েছে সংবাদমাধ্যমের শিরোনামেও। তবে যাচাইয়ে দেখা যায়, করোনায় আক্রান্ত নয়, বরং নমুনা পরীক্ষা করিয়েছেন ১৬ জন। আর আক্রান্ত হয়েছেন এক জন। এই সময়ে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে কেউ মারাও যাননি।

বার্তাসংস্থা ইউনাইটেড নিউজ অব বাংলাদেশ (ইউএনবি)- এর সংবাদ শিরোনাম ও ফেসবুকের গ্রাফিক্স কার্ডে ভুল তথ্য দেওয়ার পর থেকে বিভ্রান্তি ছড়াতে শুরু করে সামাজিক মাধ্যমে।

“দেশে ২৪ ঘন্টায় করোনায় আক্রান্ত ১৬”– এমন শিরোনামে গত ২২ মার্চ, সন্ধ্যা ৭টায় একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় বার্তাসংস্থা ইউনাইটেড নিউজ অব বাংলাদেশ (ইউএনবি)-এর ওয়েবসাইটে। একই লেখা দিয়ে একটি গ্রাফিক্স কার্ডও পোস্ট করা হয় সংস্থাটির অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে। এরপর থেকে ১৬ জন করোনায় আক্রান্তের দাবিটি ছড়াতে শুরু করে সামাজিক মাধ্যমে (, , , , )। কোনো কোনো পোস্টে ৫ জনের মৃত্যুর দাবিও (, , ) করা হয়। ২৩ মার্চ, ড. আনিকা তাবাসসুম, ইওর ডেন্টিস্ট নামের একটি পেজের পোস্টে বলা হয়েছে, “২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত ১৬ জন, মৃত ৫ জন।” পোস্টটি সাড়ে তিন হাজারেরও বেশিবার শেয়ার হয়েছে।

ভুয়া দাবিতে ছড়িয়ে পড়া পোস্টের স্ক্রিনশট

শিরোনামে ১৬ জন করোনায় আক্রান্ত হওয়ার কথা বলা থাকলেও ইউএনবির প্রতিবেদনটির প্রথম লাইনেই বলা হয়েছে, “শুক্রবার (২১ মার্চ) সকাল ৮টা থেকে দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও একজনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত করা হয়েছে। এ সময়ে আক্রান্ত হয়ে কারও মৃত্যু হয়নি।” স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করোনাবিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তির বরাত দিয়ে প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়েছে, “গত ২৪ ঘণ্টায় ১৬ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে।”

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে ২২ মার্চের কোভিড-১৯ সংক্রান্ত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতেও দেওয়া হয়েছে একই তথ্য। সেখানে বলা হয়েছে, ২৪ ঘন্টায় নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ১৬ জনের, শনাক্ত হয়েছে ১ জনের। এবং কোনো মৃত্যু হয়নি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করোনাবিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তি

মূলত, সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনের শিরোনাম ও ফেসবুকের গ্রাফিক্স কার্ডে ১৬ জন আক্রান্ত হওয়ার ভুল তথ্য দেওয়ার পর থেকে এমন বিভ্রান্তি ছড়াতে শুরু করে সামাজিক মাধ্যমে। ফেসবুকে ইউএনবির গ্রাফিক্স কার্ডটি এখন পর্যন্ত শেয়ার করেছেন দেড় হাজারেরও বেশি ব্যবহারকারী। অনেকেই পোস্টটি শেয়ার করে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এক ফেসবুক ব্যবহারকারী পোস্টটি শেয়ার করে লিখেছেন, “আল্লাহ্ আবারও। পুরো দুনিয়া থমকে যাবে।” আরেকজন লিখেছেন, “ফিরে এসেছে করোনা ভাইরাস নতুন রুপে।” কেউ আবার সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।

এর আগে গত ১৮১৯ মার্চও করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা নিয়ে এমন বিভ্রান্তিকর শিরোনাম দিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছিল ইউএনবি। ১৮ মার্চের শিরোনাম ছিল, “দেশে ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত ১৭”। এক্ষেত্রেও শিরোনামে আক্রান্ত ১৭ বলা হলে প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, এসময় আক্রান্ত হয়েছিলেন ১ জন। নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল ১৭ জনের। ১৮ মার্চ, একই ভুল শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করেছিল নয়া দিগন্ত।

বিস্তারিত সংবাদ না পড়ে শুধু শিরোনাম দেখেই সেটি সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করেন অনেকে। কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির একদল গবেষকের বরাতে দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট এক প্রতিবেদনে জানিয়েছিল, সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করা লিঙ্কগুলোর ৫৯ শতাংশ কখনোই ক্লিক করা হয়না; অর্থাৎ বেশিরভাগ ব্যবহারকারী খবর না পড়ে শুধু শিরোনাম দেখেই সেটি শেয়ার করেন। ফলে শিরোনামে ভুল তথ্য থাকলে সেটি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে। সংবাদমাধ্যমের ক্লিকবেইট শিরোনাম কীভাবে সামাজিক মাধ্যমে বিভ্রান্তি ছড়ায়, তা নিয়ে আরও পড়ুন ডিসমিসল্যাবের এই প্রতিবেদনে

আরো কিছু লেখা