তামারা ইয়াসমীন তমা
এই ফুলগুলোর কোনোটিই ৪০০ বছরে একবার ফোটে না
তামারা ইয়াসমীন তমা
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি ফুলের ছবি (১, ২, ৩) দিয়ে দাবি করা হয়েছে ফুলটি ৪০০ বছরে একবার ফোটে। বলা হচ্ছে, ফুলটির নাম প্যাগোডা ফুল। তবে একাধিক ফ্যাক্ট চেকিং সংস্থার (১, ২, ৩) প্রতিবেদন অনুসারে এটি প্যাগোডা ফুল নয়, এবং এটি ৪০০ বছর পর ফোটে না।
ডিসমিসল্যাব-এর যাচাইয়ে দেখা যায় এর আগেও বেশ কিছু ফুলকে প্যাগোডা ফুল বলে প্রচার করা হয়েছে। সবক্ষেত্রেই দাবি করা হয় ফুলগুলো ৪০০ বছরে একবার ফুটে থাকে।
প্যাগোডা ফুল মূলত লালচে কমলা রঙের একটি ফুল, যা চীন ও ফিলিপাইনের মতো এশিয়ার কিছু অঞ্চলে দেখা যায়। এর বৈজ্ঞানিক নাম ক্লেরোডেনড্রাম প্যানিকুলাম। প্রজাপতি আকৃতির ফুলগুলো সাধারণত প্রতি বছর গ্রীষ্মের মাঝামাঝি সময় থেকে শুরু করে শরৎকাল পর্যন্ত ফুটতে দেখা যায়। অর্থাৎ, ৪০০ বছর পরপর প্যাগোডা ফুল ফোটার ধারণাটি সঠিক নয়।
এর আগে ২০২০, ২০২১ ও ২০২২ সালে সাদা রঙের একটি ফুলকে ৪০০ বছরে একবার ফোটা ‘মহামেরু ফুল’ বলে দাবি করা হয়। তবে যাচাইয়ে দেখা যায় এটি আসলে দক্ষিণ আফ্রিকার জাতীয় ফুল ‘প্রটিয়া সায়নারয়েডস’ বা ‘কিং প্রটিয়া’। এটি গ্রীষ্মকালে বেশি ফুটতে দেখা গেলেও মূলত বারোমাসি ফুল।
এর বাইরেও আরও কিছু ফুলকে মহামেরু ফুল বলে প্রচার করা হয়েছে। যেমন, ২০২০ সালে পুতুলের মতো দেখতে একটি ফুলকে মহামেরু বা আরিয়া ফুল বলে প্রচার করা হয়। এক্ষেত্রেও দাবি করা হয় যে, হিমালয়ে এই ফুলটি ফোটে ৪০০ বছর পরপর। তবে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে দেখা যায়, এগুলো আসলে রঙিন হলিহক ফুল, যা নেটিজেনরা খেলাচ্ছলে পুতুলের মতো সাজিয়ে সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করেছেন।
২০১৯ সালে পাখির মতো দেখতে আরেকটি ফুলকে হিমালয়ের দুর্লভ মহামেরু ফুল (১, ২) বলে প্রচার করা হলেও এর প্রকৃত নাম স্যালভিয়া হট লিপস, যা মূলত যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ-পূর্ব অ্যারিজোনা এবং পূর্ব,পশ্চিম ও দক্ষিণ মেক্সিকোতে পাওয়া যায়। প্রতি বছর গ্রীষ্মের শুরু থেকে বরফ পড়া শুরু হওয়া অবধি এই ফুল ফুটে থাকে।
২০১৯ সালে (১, ২) সাগুয়ারু নামের যুক্তরাষ্ট্রের মরুভূমি অঞ্চলে জন্ম নেওয়া একটি ক্যাকটাস ফুলকেও ৪০০ বছরে একবার জন্ম নেওয়া ‘মহামেরু পুষ্পম’ ফুল বলে দাবি করা হয়। সাগুয়ারু ফুলের বৈজ্ঞানিক নাম কারনেজিয়া জাইজানটিয়া। প্রতিবছর মে মাসের শুরু থেকে জুনের শেষ অবধি এই ফুল ফুটে থাকে।
২০১৯, ২০২০ ও ২০২২ সালে রিউম নোবাইল (Rheum nobile) নামে একটি উদ্ভিদকেও প্যাগোডা ফুল দাবি করে সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট দেওয়া হয়। বহুবর্ষজীবী এই উদ্ভিদ মূলত হিমালয় অঞ্চলে পাওয়া যায়। প্রতিবছর মূলত জুলাই থেকে আগস্ট পর্যন্ত এর ফুল থাকে এবং আগস্ট থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত বীজ পাকতে দেখা যায়। সম্প্রতি ফ্যাক্টচেকিং সংস্থা স্নোপস এ বিষয়ে একটি ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
স্মিথসোনিয়ান মিউজিয়াম অব ন্যাচারাল হিস্ট্রির রিসার্চ বোটানিস্ট লরেন্স ডোর, এএপি ফ্যাক্টচেককে বলেন, ৪০০ বছরে ফুল দেয় কোনো উদ্ভিদের কথা তিনি ভাবতে পারেন না। তিনি এও বলেন খুব কম প্রজাতির গাছই এত দীর্ঘদিন বাঁচে। তিনি আরও বলেন, বাঁশ এমন প্রজাতির যাদের দীর্ঘ সময় পর একবার ফুল ফুটে। অনেক ক্ষেত্রে তাদের ভেজিটেটিভ পর্ব (অঙ্কুরোদ্গম থেকে ফুল ফোটা পর্যন্ত সময়) ১০০ বছর পর্যন্ত হয়ে থাকে।