ফারিহা আফরীন

রিসার্চ অফিসার, ডিসমিসল্যাব
ফ্যাক্টচেকঃ প্রথম আলোর ডাকসু ভিপি পদপ্রার্থীদের নিয়ে জরিপ করার দাবিটি মিথ্যা

ফ্যাক্টচেকঃ প্রথম আলোর ডাকসু ভিপি পদপ্রার্থীদের নিয়ে জরিপ করার দাবিটি মিথ্যা

ফারিহা আফরীন

রিসার্চ অফিসার, ডিসমিসল্যাব

প্রথম আলোর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদের (ডাকসু) ভিপি পদ নিয়ে করা মাঠ জরিপ দাবি করে একটি তথ্যচিত্র সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ছড়িয়েছে। তবে, ডিসমিসল্যাবের ফ্যাক্টচেকে দেখা যায় ডাকসু নিয়ে প্রথম আলো পরিচালিত কোনো জরিপ গণমাধ্যমটি প্রকাশ করেনি। মূলত, বাংলাদেশ পাবলিক একাডেমি ও ভলান্টিয়ার সংস্থা ‘বেসরকারি’ নামের দুটি প্রতিষ্ঠানের চালানো একটি জরিপের ফলাফলকে প্রথম আলোর নামে প্রচার করা হয়েছে।

৯ ডিসেম্বর ফেসবুকের একাধিক (, ) ব্যক্তিগত প্রোফাইল থেকে “প্রথম আলো ডাকসু মাঠ জরিপ” দাবি করে একটি তথ্যচিত্র ছড়িয়ে পড়েছে। তথ্যচিত্র অনুযায়ী ছাত্রদল মনোনীত ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের (বাগছাস)-এর আব্দুল কাদের, স্বতন্ত্র হিসেবে লড়াই করা উমামা ফাতেমা এবং ছাত্র শিবিরের মোঃ আবু সাদিককে নিয়ে জরিপটি করা হয়। তথ্যচিত্রে আরও বলা হয়, চলতি বছরের ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫-এ প্রকাশিত এই জরিপটির স্যাম্পল সাইজ ছিল ২৪০, যার মধ্যে ১৮০ জন ছাত্র এবং ৬০ জন ছাত্রী। টার্গেট মেথড ছিল দৈবচয়ন (র‍্যান্ডম)।

জরিপের বিষয়ে যাচাই করতে গেলে ডিসমিসল্যাবের সামনে আসে চলতি বছরের ৮ সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত দৈনিক যুগান্তরের একটি প্রতিবেদন। প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল, “বিপিএর জরিপে শীর্ষ ৪ প্রার্থীর মধ্যে এগিয়ে আবিদ।” বাংলাদেশ পাবলিক একাডেমি (বিপিএ) এবং ভলান্টিয়ার সংস্থা ‘বেসরকারি’র দ্বারা পরিচালিত একটি জরিপ এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।

জরিপের ফল সম্পর্কে বলা হয়, “২৪০ ইচ্ছুক ভোটারের ভোটে বাগছাসের (বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন) ভিপি প্রার্থী আব্দুল কাদির ১৮ শতাংশ, ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান ৪৬ শতাংশ, স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য প্যানেলের ভিপি প্রার্থী উমামা ফাতেমা ১২ শতাংশ এবং ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট প্যানেলের সহসভাপতি (ভিপি) প্রার্থী মো. আবু সাদিক কায়েম ৯ শতাংশ ভোট পেয়েছেন।” বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) তাদের অফিশিয়াল ফেসবুক পেইজ থেকেও বিপিএ-এর করা জরিপের ফলাফল প্রচারিত হয়েছিল। জরিপটির তথ্যের সঙ্গে ফেসবুকে প্রথম আলোর দাবিতে ছড়িয়ে পড়া তথ্যচিত্রের হুবহু মিল পাওয়া যায়।

একই জরিপ নিয়ে আলোচনা করা হয় একাধিক গণমাধ্যমে (, )। ডাকসু নির্বাচনের পূর্বে একাধিক জরিপ প্রকাশ হয়। বিভিন্ন কিওয়ার্ড সার্চ করে ডাকসু নিয়ে প্রথম আলোর করা কোনো জরিপ খুঁজে পায়নি ডিসমিসল্যাব। তবে, সোচ্চার এবং ন্যারেটিভের করা দুটি পৃথক জরিপ নিয়ে ৬ সেপ্টেম্বরে প্রথম আলোর প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটির শিরোনাম ছিল, “ডাকসু নিয়ে দুই জরিপ, নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন প্রার্থীদের।” প্রতিবেদনে উল্লেখিত দুটি জরিপেই দেখা যায় ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট নির্বাচনে জয়লাভ করবে। তবে এই জরিপগুলোর নিরপেক্ষতা নিয়ে বিভিন্ন দলের প্রশ্ন তোলার বিষয়েও উল্লেখ করা হয়।

অধিকতর নিশ্চিত হতে ডিসমিসল্যাব যোগাযোগ করে প্রথম আলোর ডেপুটি হেড অব রিপোর্টিং (অনলাইন) রাজীব আহমেদ-এর সঙ্গে। ডাকসু নিয়ে প্রথম আলো কোনো জরিপ পরিচালনা করেছিল কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান গণমাধ্যমটি ডাকসু নিয়ে কোনো জরিপ করেনি।

প্রসঙ্গত, আজ ০৯ সেপ্টেম্বর প্রথম আলো আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে “জাতীয় জনমত জরিপ ২০২৫” এর ফলাফল প্রকাশ করে। যেখানে নির্বাচনে কোন দল জিততে পারে, প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সম্ভাবনা কার বেশি, নির্বাচনে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রভাব পড়বে কি-প্রভৃতি বিষয় নিয়ে জরিপ পরিচালনা করা হয়।

অর্থাৎ, ডাকসু ভিপি পদপ্রার্থীদের নিয়ে মাঠ জরিপটি প্রথম আলোর করা নয়।

আরো কিছু লেখা