তামারা ইয়াসমীন তমা
ইন্ডিয়ান অয়েল করপোরেশনের নামে ছড়াচ্ছে ভুয়া সতর্কবার্তা
তামারা ইয়াসমীন তমা
সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে একাধিক পোস্টে (১, ২, ৩, ৪, ৫) একটি সতর্কবার্তা ছড়িয়েছে যেখানে দাবি করা হয়েছে, প্রচণ্ড গরমে বিস্ফোরণের মতো দুর্ঘটনা এড়াতে গাড়ির জ্বালানি ট্যাঙ্ক পুরোটা না ভরে অর্ধেক তেল ভর্তি রাখার পরামর্শ দিয়েছে ইন্ডিয়ান অয়েল করপোরেশন।
তবে ডিসমিসল্যাব-এর যাচাইয়ে দেখা গেছে, ইন্ডিয়ান অয়েল করপোরেশনের তরফ থেকে এমন কোনো বার্তা প্রচারিত হয়নি।
গত কয়েকদিনে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে বাংলায় লিখিত একটি ছবিসহ পোস্টে (১, ২, ৩) সতর্কবার্তাটি ছড়াতে দেখা যায়। ছবির লেখাগুলোই লিখিত পোস্টের আকারে বাংলাদেশে ছড়িয়েছে।
কথিত সতর্কবার্তাটি হুবহু তুলে ধরা হলো- “সতর্ক করেছে ইন্ডিয়ান অয়েল। আগামী দিনে তাপমাত্রা বাড়তে চলেছে, তাই সর্বোচ্চ সীমা পর্যন্ত আপনার গাড়িতে পেট্রোল ভরবেন না। এটি জ্বালানী ট্যাঙ্কে বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে। অনুগ্রহ করে আপনার গাড়ির অর্ধেক জ্বালানী ট্যাঙ্ক পূরণ করুন এবং বাতাসের জন্য জায়গা রাখুন। সর্বোচ্চ পেট্রোল ভরার কারণে চলতি সপ্তাহে ৫টি বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। অনুগ্রহ করে দিনে একবার পেট্রোল ট্যাঙ্ক খুলুন এবং ভিতরে তৈরি গ্যাসটি বেরিয়ে আসতে দিন। দ্রষ্টব্য: আপনার পরিবারের সদস্যদের এবং অন্য সবাইকে এই বার্তাটি পাঠান, যাতে লোকেরা এই দুর্ঘটনা এড়াতে পারে। ধন্যবাদ।”
তবে ইন্ডিয়ান অয়েল করপোরেশন এমন কোনো সতর্কবার্তা দেয়নি। গতকাল ১২ এপ্রিল তাদের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে এক পোস্টে লিখেছে, “#ইন্ডিয়ানঅয়েল-এর তরফ থেকে জরুরি ঘোষণা। শীত হোক বা গ্রীষ্ম; গাড়ি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক নির্দেশিত জ্বালানি ট্যাঙ্কের সর্বোচ্চ সীমা পর্যন্ত জ্বালানি ভরা সম্পূর্ণ নিরাপদ।”
পোস্টে যুক্ত একটি ছবিতে একই বিষয় ব্যাখ্যা করে প্রতিষ্ঠানটি বিবৃতি দেয়। ছবির কথাগুলো বাংলা অনুবাদ করলে দাঁড়ায়: “ঘোষণা। সামাজিক মাধ্যমে একটি গুজব ছড়িয়ে পড়েছে যার দাবি অনুসারে ইন্ডিয়ান অয়েল নিম্নোক্ত বিবৃতি দিয়েছে: তাপমাত্রা বাড়ায় ট্যাঙ্কের সর্বোচ্চ সীমা পর্যন্ত জ্বালানি তেল ভরবেন না। এর ফলে ট্যাঙ্ক বিস্ফোরণ হতে পারে। জ্বালানি ভরতে হলে অর্ধেক ট্যাঙ্ক ভরুন এবং বাকি অংশ বাতাসের জন্য ফাঁকা রাখুন।
ইন্ডিয়ানঅয়েল এই ধরনের বিবৃতির দায় নাকচ করে স্পষ্টভাবে নিম্নোক্ত বার্তা জানাচ্ছে: অটোমোবাইল নির্মাতারা সব দিক বিচার করেই গাড়ি ডিজাইন করে। গাড়ির কর্মক্ষমতা, পরিবেশ, নিরাপত্তা সবকিছুই বিবেচনা করে এগুলো নির্মিত হয়। পেট্রোল বা ডিজেল গাড়িতে জ্বালানির ট্যাঙ্ক তৈরির নির্ধারিত সীমার ক্ষেত্রে এটা প্রযোজ্য। ফলে গাড়ি নির্মাতাদের স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী জ্বালানি ট্যাঙ্কে পূর্ণমাত্রায় তেল ভরা সম্পূর্ণ নিরাপদ, তা সে শীত হোক বা গ্রীষ্ম।”
এর আগেও বিগত বছরগুলোতে ভারতে ইন্ডিয়ান অয়েলের নামে একই ধরনের ভুয়া সতর্কবার্তা ছড়াতে দেখা গেছে। ২০২২ সালে পশ্চিমবঙ্গেও একই দাবি ছড়িয়ে পড়লে ভারতের ফ্যাক্টচেকিং সংস্থা বুমলাইভ গুজবটি খণ্ডন করে। ২০১৯ সালে হিন্দি ভাষাতেও একই দাবি ছড়াতে দেখা যায়, যা যাচাই করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল টাইমস অব ইন্ডিয়া।