আহমেদ ইয়াসীর আবরার

রিসার্চ অফিসার, ডিসমিসল্যাব
শিরোনামে বিভ্রান্তি: সরকার নয়, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি বাংলাদেশের

শিরোনামে বিভ্রান্তি: সরকার নয়, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি বাংলাদেশের

আহমেদ ইয়াসীর আবরার

রিসার্চ অফিসার, ডিসমিসল্যাব

বাংলাদেশের সরকারের সঙ্গে প্রথম চুক্তি করেছে ট্রাম্প প্রশাসন এমন কিছু দাবি দেখা গেছে বাংলাদেশের গণমাধ্যম এবং সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে। কিন্তু ডিসমিসল্যাবের যাচাইয়ে দেখা যায়, এই চুক্তিটির সঙ্গে ট্রাম্প প্রশাসনের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। মূলত আর্জেন্ট এলএনজি নামের একটি যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানির সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে একটি চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে।

বাংলাদেশি গণমাধ্যম কালের কন্ঠের একটি প্রতিবেদনের শিরোনাম হলো, “ক্ষমতায় এসেই ট্রাম্প প্রশাসনের প্রথম চুক্তি বাংলাদেশের সঙ্গে”। দৈনিক নয়া দিগন্তের প্রতিবেদনের শিরোনামে বলা হয়, “প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহ : ট্রাম্প প্রশাসনের সাথে বৃহৎ চুক্তি বাংলাদেশের”। দৈনিক মানবকন্ঠের শিরোনাম, “শপথের পর বাংলাদেশের সঙ্গে ট্রাম্প প্রশাসনের প্রথম চুক্তি” অনলাইনভিত্তিক গণমাধ্যম বিডি ২৪ লাইভের শিরোনামে বলা হচ্ছে, “ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে বৃহৎ চুক্তি, বছরে ৫০ লাখ টন এলএনজি কিনবে বাংলাদেশ”। আরেকটি অনলাইনভিত্তিক গণমাধ্যম সময় জার্নালের শিরোনামেও বলা হয়, “বাংলাদেশের সঙ্গে ট্রাম্প প্রশাসনের প্রথম চুক্তি”। মানবকণ্ঠের প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, “বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ সমঝোতা স্মারক সই করেছে মার্কিন প্রশাসন। ডোনাল্ড ট্রাম্পের শপথের পর বাংলাদেশের সঙ্গে এটাই প্রথম চুক্তি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমনটাই জানিয়েছেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী।” একই দাবিতে একাধিক পোস্ট হতে দেখা গিয়েছে সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকেও। একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, “ট্রাম্প প্রশাসনের প্রথম চুক্তি বাংলাদেশের সঙ্গে! গুজববাজদের মুখে ছাই।” ক্যাপস্টোন অ্যাডুকেশন নামের একটি পেজ থেকে পোস্ট করে বলা হয়, “ট্রাম্প সরকার ১ম আন্তর্জাতিক চুক্তি করলো বাংলাদেশের সাথে, USA থেকে বছরে ১.৫-৩ বিলিয়ন ডলার মূল্যের ৫০ লাখ টন LNG কিনবে বাংলাদেশ।”

এই বিষয়ে যাচাই করতে গেলে ডিসমিসল্যাবের সামনে আসে রয়টার্সের একটি প্রতিবেদন। রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, “প্রতি বছর ২৫ মিলিয়ন মেট্রিক টন (MTPA) ক্ষমতাসম্পন্ন লুইজিয়ানার একটি এলএনজি স্থাপনা নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান আর্জেন্ট এলএনজি বাংলাদেশের সরকারের সঙ্গে বার্ষিক সর্বোচ্চ ৫ মিলিয়ন মেট্রিক টন তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (LNG) ক্রয়ের একটি বাধ্যবাধকতাহীন চুক্তি স্বাক্ষর করেছে বলে প্রতিষ্ঠানটি শুক্রবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে।” প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, চুক্তি অনুযায়ী যদি আর্জেন্ট এলএনজির প্রকল্পটি সম্পন্ন হয়, প্রতিষ্ঠানটির কার্গো বাংলাদেশের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান পেট্রোবাংলার কাছে বিক্রি করতে পারবে। অর্থাৎ, চুক্তিটি হয়েছে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি এলএনজি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের।

বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী একটি ফেসবুক পোস্টে বলেন, “বাংলাদেশ সরকার আজকে ট্রাম্পের নতুন এনার্জি এক্সপোর্ট ম্যান্ডেট উপর ভিত্তি করে একটা ল্যান্ডমার্ক এগ্রিমেন্ট সাইন করেছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হবার পর আমরাই প্রথম দেশ কোনো ডিল সাইন করলাম” এই পোস্টে তিনি কোথাও ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে কোনো চুক্তি হওয়ার দাবি করেননি। তবে তিনি এই চুক্তির মাধ্যমে ট্রাম্প সরকারের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদারের বিষয়ে আশাবাদ জানান।

প্রসঙ্গত, চলতি মাসের ২০ তারিখে যুক্তরাষ্ট্রের সদ্য শপথ নেয়া রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে নতুন তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) প্রকল্পের জন্য রপ্তানি অনুমতি আবেদন প্রক্রিয়াকরণ পুনরায় শুরু করার জন্য একটি আদেশ জারি করেছেন। এছাড়া, কালবেলার একটি প্রতিবেদনে বলা হয় বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান এটিকে একটি বাধ্যবাধকতাহীন চুক্তি হিসেবে উল্লেখ করে একটি চুক্তির প্রাথমিক ধাপ বলেন। তিনি বলেন, “এতে করে আমাদের কোনো অবলিগেশন্স ক্রিয়েট (বাধ্যবাধকতা তৈরি) হয়নি। মার্কিন এ কোম্পানিটি গ্যাস এক্সপ্লোর করবে, তারপর এলএনজি আকারে সরবরাহ করবে। এটা সময়ের ব্যাপার।”

শিরোনাম থেকে বিভ্রান্তি ছড়ানোর বিষয়ে ডিসমিসল্যাবের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, “বিস্তারিত সংবাদ না পড়ে শুধু শিরোনাম দেখে এমন সংবাদ সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করা ব্যবহারকারীর সংখ্যা একবারেই কম নয়। কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির একদল গবেষকের বরাতে দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট এক প্রতিবেদনে জানায়, সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করা লিঙ্কগুলোর ৫৯ শতাংশ কখনোই ক্লিক করা হয়না; অর্থাৎ বেশিরভাগ ব্যবহারকারী খবর না পড়ে শুধু শিরোনাম দেখেই সেটি আবার শেয়ার করেন। যার কারণে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পড়ে।”

আরো কিছু লেখা