তৌহিদুল ইসলাম রাসো

রিসার্চ অফিসার, ডিসমিসল্যাব
কোটা সংস্কার আন্দোলনের একাধিক ভিডিওকে সাম্প্রদায়িক আঙ্গিকে প্রচার

কোটা সংস্কার আন্দোলনের একাধিক ভিডিওকে সাম্প্রদায়িক আঙ্গিকে প্রচার

তৌহিদুল ইসলাম রাসো

রিসার্চ অফিসার, ডিসমিসল্যাব

সামাজিক মাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) বাংলাদেশের দাবি করে দুটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়তে দেখা গেছে। প্রথম ভিডিওর ক্যাপশনে বলা হচ্ছে এক হিন্দু নারী কাঁদছেন কারণ তাদের বলা হয়েছে হয় ধর্মান্তরিত হতে হবে, নয়তো দেশ ছাড়তে হবে। তবে যাচাইয়ে দেখা গেছে ভিডিওটি কোনো হিন্দু নারীর নয়। কাঁদতে থাকা নারী আসলে বাংলাদেশের অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন। অপর আরেক ভিডিওতে দাবি করা হচ্ছে বাংলাদেশে হিন্দু নারীরা মুসলিমদের থেকে বাঁচতে সঙ্গে মরিচের গুঁড়া রাখছেন। যাচাইয়ে দেখা গেছে এই দাবিটিও ভুয়া। মূলত সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নিজেদের সুরক্ষার কথা চিন্তা করে মরিচের গুঁড়া মিশ্রিত পানি নিয়ে নেমেছিলেন আন্দোলনকারী নারীরা।

এক্সের একটি ব্যক্তিগত ভেরিফায়েড অ্যাকাউন্ট থেকে গত ১২ আগস্ট পোস্ট করা ভিডিওতে অভিনেত্রী বাঁধনের বক্তব্য দিয়ে ভুয়া দাবি করতে দেখা যায়। ইংরেজিতে লেখা ক্যাপশনের গুগলের স্বয়ংক্রিয় অনুবাদ দেখায়, “বাংলাদেশের ভিডিও। হিন্দু নারীরা কাঁদছে কারণ তাদের বলা হচ্ছে ধর্মান্তরিত হও নয়তো বাংলাদেশ ছাড়ো। নিজেদের বাড়ি ছেড়ে কোথায় যাবে তারা। পৃথিবী তুমি কি তার কষ্ট শুনতে ও অনুভব করতে পারো?” ভিডিওতে নারীকে বলতে শোনা যায়, “কারণ দেশটা আমার। দেশটা সংস্কারও করবো আমরা।” এখন পর্যন্ত ভিডিওটি দেখেছেন প্রায় ৭০ হাজার ব্যবহারকারী।

তবে উক্ত ভিডিও খুঁজতে অনলাইনে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে ডিসমিসল্যাব। সেখানে দৈনিক দেশ বর্তমানের ইউটিউব চ্যানেলের একটি ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। গত ১ আগস্টে আপলোড করা ভিডিওটির শিরোনাম ছিল, “আমার অন্য কোনো দেশের পাসপোর্ট নাই: অভিনেত্রী বাঁধন II (আজমেরী হক বাঁধন) Azmeri Haque Badhon।” জানা যায় সেদিন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে রাজধানীর ফার্মগেটে সমাবেশ করেছিলেন পরিচালক, অভিনয়শিল্পী ও নানা মাধ্যমের কলাকুশলীরা। সেখানে এই অভিনেত্রী যে বক্তব্য দেন তার সঙ্গে ছড়িয়ে পড়া বক্তব্যের হুবহু মিল পাওয়া যায়। অর্থাৎ, বাঁধনের সেদিনের দেওয়া বক্তব্যটি বর্তমানে ছড়িয়ে পড়ছে হিন্দু নারীর বক্তব্যের দাবিতে। 

অপর ভিডিওতে কয়েকজন নারীকে বোতল হাতে দেখতে পাওয়া যায়। লাল রঙয়ের পানিসহ বোতলে আসলে মরিচের গুড়ো মেশানো আছে বলে ভিডিওতে বলেন তারা। হিন্দিতে লেখা ক্যাপশনের গুগলের স্বয়ংক্রিয় অনুবাদ দেখায়, “এখন আমাদের বাংলাদেশের বোনেরা মরিচের গুঁড়া রেখে ইসলামী মোগলদের অবৈধ সন্তানদের হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করছে।” 

যাচাইয়ে দেখা যায় এই দাবিটিও সত্য নয়। ভিডিওতে যে নারীরা মরিচের গুঁড়া মিশ্রিত পানি নিয়ে কথা বলছেন তারা আসলে কোটা সংস্কার আন্দোলনরত শিক্ষার্থী। তারা কেউ মুসলিমদের থেকে আত্মরক্ষার জন্য এমনটি করেননি। ফেসবুকে সার্চ করে এ সংক্রান্ত একটি রিল খুঁজে পাওয়া যায়, যেটি আপলোড করা হয়েছিল গত ১৬ জুলাই।

এছাড়াও ঘটনাটি নিয়ে দৈনিক যুগান্তরের একটি অনলাইন প্রতিবেদন পাওয়া যায়। ওই প্রতিবেদনে যে ছবি ব্যবহার করা হয় তার সঙ্গে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওর ফুটেজের হুবহু মিল পাওয়া যায়। ১৬ জুলাই প্রকাশিত সেই প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, আত্মরক্ষার জন্য সেদিন হাতে মরিচের গুঁড়া পানিমিশ্রিত স্প্রে নিয়ে কোটাবিরোধী আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কয়েকজন ছাত্রী।” অর্থাৎ, ভিডিওটিতে থাকা নারীরা মুসলিমদের থেকে বাঁচতে নয় বরং আন্দোলনে আত্মরক্ষার্থে মরিচের গুঁড়ার স্প্রে হাতে রেখেছেন। 

চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনের জেরে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে গিয়ে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। এরপর থেকেই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বিশৃঙ্খলার খবর পাওয়া যায়, যার মধ্যে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর হামলার ঘটনাও রয়েছে। ঠিক এই সময়ে প্রকৃত ঘটনার পাশাপাশি অপতথ্যের বিস্তারও দেখা যায় সামাজিক মাধ্যমে। ভিন্ন ঘটনার বা পুরোনো ঘটনার ফুটেজ ছড়িয়ে ভুয়া দাবিতে অসংখ্য পোস্ট দেখা যায় এক্সে। সেগুলো নিয়ে এর আগে একাধিক বিস্তারিত প্রতিবেদন (, , ) প্রকাশ করে ডিসমিসল্যাব।

আরো কিছু লেখা