ফাতেমা তাবাসুম

ফেলো, ডিসমিসল্যাব

তামারা ইয়াসমীন তমা

রিসার্চ অফিসার, ডিসমিসল্যাব
অপ্রাসঙ্গিক ভিডিও ছড়িয়ে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা বলে দাবি 
This article is more than 4 months old

অপ্রাসঙ্গিক ভিডিও ছড়িয়ে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা বলে দাবি 

ফাতেমা তাবাসুম

ফেলো, ডিসমিসল্যাব

তামারা ইয়াসমীন তমা

রিসার্চ অফিসার, ডিসমিসল্যাব

প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনার প্রস্থান এবং দেশত্যাগের পর বাংলাদেশে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের আক্রান্ত হওয়ার অনেকগুলো ঘটনা ঘটেছে। মন্দির ও বাসাবাড়িতে হামলা এবং অগ্নিসংযোগের মতো খবরের ভিড়ে অনেক গুজবও ছড়িয়ে পড়ছে সামাজিক মাধ্যমে। ডিসমিসল্যাবের যাচাইয়ে দেখা যায়, সাবেক টুইটার বা এক্সে এমন কিছু ভিডিও বা ছবি ছড়ানো হয়েছে যেগুলো সাম্প্রতিক সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা নয়। যেমন কোটাবিরোধী আন্দোলনকালে ছাত্রলীগ নেত্রীদের লাঞ্ছিত হওয়ার কয়েকটি ঘটনাকে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা হিসেবে দাবি করা হচ্ছে। এছাড়া পদত্যাগকারী একাধিক শিক্ষককে ভুলভাবে সনাতন ধর্মের অনুসারী হিসেবেও পরিচয় দেওয়া হচ্ছে।

এক্সের অনেক পোস্টে সেভ বাংলাদেশি হিন্দুজ, হিন্দুজ আর নট সেফ ইন বাংলাদেশ, অল আইজ অন বাংলাদেশি হিন্দুজ, হিন্দু লাইভস ম্যাটার এর মতো হ্যাশট্যাগও ব্যবহার করতে দেখা যায়। সামাজিক মাধ্যম এক্স এ জাতীয় পোস্টদাতাদের অনেকেরই অবস্থান ভারত বলে তথ্য দেয়।

বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলন ধীরে ধীরে রূপ নিয়েছিল সরকারবিরোধী আন্দোলনে। কয়েক সপ্তাহের প্রাণঘাতী সংঘর্ষ, ইন্টারনেট শাটডাউন ও কারফিউয়ের ঘটনা শেষে ৫ আগস্ট পদত্যাগ করেন এবং দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। এরপর আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি এবং দেশের অনেক স্থানে সংখ্যালঘুদের লক্ষ্য করে হামলার ঘটনা ঘটে। ডিসমিসল্যাব দেখেছে, সামাজিক মাধ্যমে এ নিয়ে বিভ্রান্তিও ছড়ানো হচ্ছে।

পদত্যাগকারী মুসলিম শিক্ষকদের সংখ্যালঘু হিসেবে দেখানো

সামাজিক মাধ্যম এক্সে একটি ভিডিও পোস্ট করে একজন ব্যবহারকারী দাবি করেন বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামী এবং বিএনপি সন্ত্রাসীরা এখন হিন্দু সরকারি কর্মকর্তাদের পদত্যাগপত্র লিখতে বাধ্য করছে এবং তাদের সরকারি চাকরি থেকে অপসারণ করছে। 

কীওয়ার্ড সার্চে ভিডিওতে থাকা দুটি ক্লিপ খুঁজে পাওয়া যায় ফেসবুকে। প্রথমটি কবি নজরুল সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ আমেনা বেগমের পদত্যাগের ভিডিও; দ্বিতীয়টি ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সিনিয়র শিক্ষিকা ফারহানা খানমের পদত্যাগের একটি ক্লিপ। দুজনের কেউই সনাতন ধর্মের নন, কিন্তু এক্সের পোস্টটিতে এমন দাবিতে গুজব ছড়ানো হয়।

ঘটনা দুটি ১১ আগস্টের। সেদিন কবি নজরুল সরকারি কলেজে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে সাদা কাগজে ‘আমি পদত্যাগ করলাম’ লিখে পদত্যাগ করেন অধ্যক্ষ আমেনা বেগম। ফেসবুকে ঘটনাটির ভিডিও ভাইরাল হতে দেখা যায়। একই রকম পরিস্থিতিতে সেদিন ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষসহ দুই সিনিয়র শিক্ষক পদত্যাগ করেন। দুজনের একজন সিনিয়র শিক্ষক ফারহানা খানম। পদত্যাগপত্রে তাদের সই করার ভিডিওটিও ফেসবুকে ভাইরাল হতে দেখা যায়। 

তারা আসলে ছাত্রলীগ কর্মী, লাঞ্ছনার পুরোনো ভিডিও

বাংলাদেশের “১০ শতাংশ হিন্দুসহ নিরীহ সংখ্যালঘুদের টার্গেট করা হচ্ছে যা বাংলাদেশের সরকার এবং জনগনের জন্য এক লজ্জার বিষয়”– এমন দাবিতে গত ৯ আগস্ট এক্সে একটি ভিডিও শেয়ার করা হয়। একটি ভাইরাল ফুটেজ যাচাইয়ে দেখা যায়, ভিডিওটি গত ১৭ জুলাইয়ের। আন্দোলনের মুখে ইডেন কলেজসহ ঢাকার অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের  ছাত্রলীগের সক্রিয় নেতাকর্মীরা গোপনে হল ছাড়লেও অনেক ছাত্রলীগ কর্মী ধরা পড়ে যান। এরকমই একজন ছাত্রলীগ কর্মীকে এই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে। ঢাকা ইডেন কলেজের গণিত বিভাগের একজন শিক্ষার্থী ডিসমিসল্যাবকে জানান, আক্রান্ত ওই কর্মী ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের সহসভাপতি সুস্মিতা বাড়ৈর সহযোগী এবং তিনি একজন মুসলিম নারী। কিন্তু পোস্টদাতা আক্রান্ত ব্যক্তিকে সনাতন ধর্মের অনুসারী হিসেবে উল্লেখ করেন। ভিডিওর ক্যাপশনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস, সাবেক প্রেসিডেন্ট ও রিপাবলিকান নেতা ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং এক্সের মালিক ইলন মাস্কের এক্স আইডিগুলো মেনশন করেন। তিনি পোস্টে আরও বলেন, “এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে কোন অর্থপূর্ণ পদক্ষেপ নিতে বা জোড় দিয়ে কথা বলতে ব্যর্থ হয়ে বিশ্ব নীরব থেকেছে”।

এর আগে গত ৭ আগস্ট আরও দুই বাংলাদেশি নারীকে রশি দিয়ে বেঁধে রাখার একটি ভিডিও এক্সে শেয়ার দিয়ে ভুলভাবে দাবি করা হয় আক্রান্ত ব্যক্তিরা সনাতন ধর্মের অনুসারী। এ ঘটনাটি গুজব উল্লেখ করে ৯ আগস্টেই একটি ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে ডিসমিসল্যাব।

এই একই ভিডিওর সঙ্গে আরও দুটি ভিন্ন ঘটনার ক্লিপ জুড়ে দিয়ে গত ৯ আগস্ট এক এক্স ব্যবহারকারী লেখেন, “বাংলাদেশ হিন্দুর জন্য নরক হয়ে গেছে। এখন শুধুমাত্র আলাদা হিন্দুদেশই সমাধান।” ভিডিওটির তিনটি ক্লিপের একটি মূলত ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এক ছাত্রলীগ নেত্রীর বিক্ষুব্ধ জনতার হাতে লাঞ্ছিত হবার ভিডিওআরেকটি ক্লিপ বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ ছাত্রলীগের দুই নেত্রীকে পিলারের সঙ্গে বেঁধে রাখার ঘটনার। অর্থাৎ এই ক্লিপগুলোর সঙ্গে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার কোনো যোগসূত্র খুঁজে পাওয়া যায়নি।

প্রতিবাদকারীরা ছাত্ররা হিন্দু তরুণীকে অপহরণ করেনি 

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছাত্রদের বিরুদ্ধে একটি হিন্দু পরিবারকে হত্যা ও সেই পরিবারের মেয়েকে অপহরণ করার ভুয়া দাবিতে ছড়ানো একটি ভিডিও গত ৯ আগস্ট সামাজিক মাধ্যম এক্সে প্রচার হতে দেখা যায়। আমেরিকার অন্যতম প্রধান হিন্দু সংগঠন ওয়ার্ল্ড হিন্দু কাউন্সিল অব আমেরিকার (ভিএইচপিএ) একটি উদ্যোগ: হিন্দু পলিসি রিসার্চ অ্যান্ড অ্যাডভোকেসি কালেকটিভ বা হিন্দুপ্যাক্ট– এর ভেরিফাইড এক্স অ্যাকাউন্ট থেকেও সেভ বাংলাদেশি হিন্দুজহিন্দু লাইভস ম্যাটার হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে ভিডিওটি শেয়ার করা হয়। ভিডিওতে দেখা যায়, কয়েকজন ব্যক্তি একজন নারীকে একটি মাইক্রোবাসে জোর করে ওঠানোর চেষ্টা করছেন।

ডিসমিসল্যাবের যাচাইয়ে দেখা যায়, ঘটনাটির সঙ্গে ৫ আগস্টের পর ঘটে যাওয়া সাম্প্রতিক সহিংসতার কোনো যোগসূত্র নেই। প্রথম আলোয় প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ঘটনাটি পারিবারিক। গত ৮ আগস্ট নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলায় এই নারীকে অপহরণের চেষ্টা করেছিলেন তাঁর স্বামী। এ সময় তিনজনকে আটক করা হয়, বাকিরা পালিয়ে যান। তথ্য যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান ফ্যাক্টওয়াচ এই গুজবকে কেন্দ্র করে একটি ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

ভিডিওটি বিক্ষোভকারী হিন্দুদের উপর সেনাহামলার নয় 

সাম্প্রদায়িক সহিংসতার প্রতিবাদে অংশ নেওয়া ডজনখানেক হিন্দু আন্দোলনকারী সেনাবাহিনীর হামলায় আহত হয়েছে দাবি করে এক্সে একটি ভিডিও ছড়াতে দেখাতে যায়। বাবা বানারাস অ্যাকাউন্ট থেকে একটি ভিডিও শেয়ার করে লেখা হয়, “বাংলাদেশে হিন্দুদের ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগে উগ্র ইসলামপন্থীদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে অংশ নেওয়ার সময় বাংলাদেশি সেনাবাহিনী হিন্দু আন্দোলনকারীদের উপর হামলা চালায় বলে শোনা যাচ্ছে। এ ঘটনায় নারী ও শিশুসহ কয়েক ডজন মানুষ আহত হয়েছে।”

যাচাইয়ে দেখা যায়, ভিডিওটি গত ৭ জুলাইয়ের। সেদিন বগুড়ায় রথযাত্রায় অংশ নিতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে পাঁচজন নিহত ও ৩০ জন আহত হন। দেশ টিভির ভেরিফায়েড ইউটিউব চ্যানেল দেশটিভি নিউজে গত ৭ জুলাই আপলোড করা একটি সংবাদে ভিডিও ক্লিপটি পাওয়া যায়।

ঠাকুরগাঁওয়ের মন্দির নয়, যশোরের মাজারের ভিডিও 

এক্সে বেশ কয়েকটি অ্যাকাউন্টে (, , ) একটি স্থাপনায় অগ্নিসংযোগের ভিডিও পোস্ট করা হয়েছে। ভিডিওটি পোস্ট করে বাবা বানারাস নামের অ্যাকাউন্টটি থেকে দাবি করা হয় যে এটি ঠাকুরগাঁও জেলার একটি মন্দিরের এবং ইসলামপন্থীরা এই হিন্দু মন্দিরে ভাঙচুর করে আগুন দিয়েছে ও মন্দিরের পূজারীকে হত্যা করেছে। এছাড়া দুই হাজারের বেশি হিন্দুকে হত্যাসহ হিন্দু নারীদের ধর্ষণ ও কয়েক হাজার মন্দির ও হিন্দু বাড়িতে অগ্নিসংযোগের অভিযোগও করা হয়। 

ভিডিও যাচাইয়ে এতে সুন্নী টিভি নামের একটি চ্যানলের লোগো দেখা যায়। স্থাপনাটির গায়ে বাংলায় লেখা, হযরত গরীব শাহ রহঃ মাজার শরীফ। সার্চ ইঞ্জিন অনুসন্ধানে মাজারটি যশোরের বকুলতলায় বলে জানা যায়। এছাড়া ছবি (,) ও গুগল ম্যাপে মাজারের অবস্থান দেখে নিশ্চিত হওয়া যায় যে ঠাকুরগাঁওয়ের দাবি করে ছড়ানো ভিডিওটি যশোরের এই মাজারের। 

মূল ভিডিওটি সুন্নী টিভি নামের একটি ফেসবুক পেজে খুঁজে পাওয়া যায়। ৭ আগস্ট পোস্ট করা ভিডিওটির ক্যাপশনে লেখা হয়, “আন্দোলনটা কি মাজার ভাঙ্গার জন্য করা হয়েছিল??” এখানেও আভাস দেওয়া হয় স্থাপনাটি মাজারের।

ভিডিওটি সিরাজগঞ্জে প্রদীপ ভৌমিক হত্যার নয়  

উলটো করে ঝুলিয়ে রাখা একটি মৃতদেহ নির্যাতনের একাধিক ভিডিও ছড়ানো হচ্ছে বেশ কয়েকটি এক্স অ্যাকাউন্ট (, , , ) থেকে। ক্যাপশনে বলা হচ্ছে নিহত ব্যক্তি বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) নেতা প্রদীপ ভৌমিক। 

সুনন্দা রয় নামের একটি অ্যাকাউন্ট থেকে লেখা হয়, “ইনি কমিউনিস্ট নেতা প্রদীপ। তিনি কমিউনিট পার্টি অব বাংলাদেশ: সিপিবির একজন সদস্য। বাংলাদেশি ইসলামপন্থীরা তাকে পিটিয়ে হত্যা করে ঝুলিয়ে রাখে। তারা আপনার জাত বা মতাদর্শ জিজ্ঞাসা করবে না। তাদের কাছে আপনি একজন কাফির হিন্দু মাত্র।”

গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুসারে, গত ৪ আগস্ট সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ প্রেসক্লাবে কর্মরত অবস্থায় প্রদীপ ধারালো অস্ত্রের আঘাতে খুন হন। প্রদীপ ভৌমিককে পিটিয়ে হত্যার কোনো উল্লেখ পাওয়া যায় না। এছাড়া দৈনিক কালবেলায় প্রকাশিত প্রদীপ ভৌমিকের ছবির সঙ্গে লাশের মুখায়বের কোনো মিল নেই।

ভিডিওটি যাচাই করতে গিয়ে ৭ আগস্টের একটি ফেসবুক পোস্ট পাওয়া যায়। ভিডিওর সঙ্গে ক্যাপশনে ব্যবুহারকারী লিখেছেন, “আমাদের ইউনিভার্সিটির জুনিয়র রবিউল লিমন এর লাশ আন্দোলনকারীদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।”

ভিডিওর একটি ছবি শেয়ার করে আরেকটি আইডি জানায়, তিনি রবিউলের সহপাঠী। রবিউলের একটি ছবির সঙ্গে লাশের ছবি দিয়ে তিনিও লাশটি আবু সাইদের উপর গুলি চালানো পুলিশ সদস্যের নয় বলে উল্লেখ করেন। 

ফেসবুকে রবিউল লিমন আইডিটি ধরে অনুসন্ধান করলে এই হত্যার নিন্দা জানিয়ে তার বন্ধুবান্ধব, সহপাঠী ও সহকর্মীদের অনেকগুলো পোস্ট (, , ,) পাওয়া যায়। তাদের বক্তব্য অনুসারে, গত ৫ আগস্ট উত্তরা হাউজবিল্ডিং এলাকায় পুলিশের গোলাগুলিতে পড়ে  লিমন এক জায়গায় লুকিয়ে পড়েন। ওখান থেকে বের হলে উত্তেজিত জনতা তাকে পুলিশ মনে করে পিটিয়ে হত্যা করে। সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনেও উত্তরা হাউজবিল্ডিং এলাকায় গত ৫ আগসট এক যুবককে গুলি করার অভিযোগে পিটিয়ে হত্যা এবং এরপর উলটো করে গাছে ঝুলিয়ে রাখার উল্লেখ মিলে।

অর্থাৎ, ভাইরাল ভিডিওটি সিরাজগঞ্জে হিন্দু নেতাকে পিটিয়ে হত্যার ভিডিও নয়, বরং রাজধানী উত্তরায় ধারণকৃত ভিডিও।

ঢাকায় হিন্দুদের প্রতিবাদ মিছিল দাবিতে পুরোনো ভিডিও 

গফরগাঁও উপজেলা ছাত্রলীগের ২০২৩ সালের মিছিলের একটি ভিডিও ব্যবহার করে এক্সে গুজব ছড়াতে দেখা যায়। ক্যাপশনে দাবি করা হয় “ঢাকার রাজপথে গেরুয়া রঙের বন্যা … বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর হামলার প্রতিবাদে রাজপথে নেমেছে বাংলাদেশের হিন্দুরা।” ভিডিওটি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৩ সালের ২ সেপ্টেম্বর আপলোড করা হয়েছিল। একই ভিডিও সম্প্রতি “আওয়ামী লীগের মিছিল” দাবিতে ছড়ালে ডিসমিসল্যাব একটি ফ্যাক্টচেক গ্রাফিক্স কার্ড প্রকাশ করে।

দলিত হিন্দু নারীকে ১৪০ জনের ধর্ষণের দাবিটি গুজব

১৪০ জন মিলে বাংলাদেশে এক দলিত হিন্দু নারীকে ধর্ষণ করেছে– দাবিতে একটি ভিডিওপোস্ট ছড়াতে দেখা যায় এক্সে। ভারতের তথ্য যাচাইকারী সংস্থা অল্টনিউজের একটি প্রতিবেদনে দেখা যায় এটি ভারতের ব্যাঙ্গালুরু শহরের ২০২৩ সালের ঘটনার ভিডিও। একই ছবি সামাজিক মাধ্যমে তখন ছড়িয়েছিল বাংলাদেশে হিন্দু নির্যাতনের ঘটনা বলে। বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যম নিউজ বাংলা ২৪– এর প্রতিবেদনে ঘটনাটির বিস্তারিত প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। কিছুদিন আগে এই ভিডিওরই একটি ছবি দিয়ে গুজব ছড়ানো হলে এ নিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে ডিসমিসল্যাব। 

এছাড়াও মৌলভীবাজারে দোকানে অগ্নিকাণ্ডকে কালিমন্দিরে আগুন দাবিতে গুজব ছড়ানো হয়। এরপর এক্সে ভারতের অল্ট নিউজের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ জুবায়ের কিছু স্ক্রিনশট পোস্ট করে লেখেন, “গুজব। মন্দির পুড়িয়ে দেওয়া হয়নি। … মন্দিরটি নিরাপদ আছে।”

ভুয়া দাবিতে ছড়ানো উপরের ১১টি ঘটনা যে ১৩টি এক্স আইডির মাধ্যমে পাওয়া যায় তার ১১টির অবস্থান দেখা যায় ভারত। দুটি যুক্তরাষ্ট্রের। 

ওপেন সোর্স ইন্টেলিজেন্স গবেষক কলিম আহমেদ ডিসইনফরমেশন এবং ফরেন ইনফরমেশন ম্যানিপুলেশন অ্যান্ড ইন্টারফারেন্স (FIMI) নিয়ে কাজ করছেন। সাম্প্রদায়িক বিভ্রান্তি ছড়ানোর ক্ষেত্রে টুইটারের ভূমিকা নিয়ে তার সঙ্গে কথা বলে ডিসমিসল্যাব। তার মতে, টুইটার/এক্স হল কোনো একটি বার্তা বৃহত্তর পরিসরে শ্রোতাদের কাছে পৌছে দেয়ার প্রাথমিক পর্যায়ে। টুইটারে যা শুরু হয় তা শুধু এই প্ল্যাটফর্মেই সীমাবদ্ধ থাকে এমন নয়। অনেক সময় তা খুবই সংক্রামক হয়। এই ধরনের পরিস্থিতিতে নির্ভরযোগ্য সংস্থা হতে যাচাইকৃত সংবাদের জন্য অপেক্ষা করাই বুদ্ধিমানের কাজ বলে মনে করেন তিনি। 

আহমেদ আরও বলেন, বৃহত্তরভাবে দক্ষিণ এশিয়ায় সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ইতিহাস রয়েছে এবং যে কোনও কিছু পূর্ণ মাত্রার দাঙ্গায় রূপ নিতে পারে। তিনি মনে করেন, এটি  বাংলাদেশের সরকার বদলের সুযোগে ভুল তথ্য ছড়িয়ে জনসাধারণের ধারণাকে পরিবর্তন এবং মতামতকে প্রভাবিত করার চেষ্টা।

আরো কিছু লেখা