আহমেদ ইয়াসীর আবরার
ভারতের ধর্মীয় উৎসবের দৃশ্যকে মন্দিরে হামলা বলে প্রচার
আহমেদ ইয়াসীর আবরার
বাংলাদেশের হিন্দু মন্দিরে হামলার দাবিতে একটি ভিডিও প্রচারিত হচ্ছে আরটি ইন্ডিয়া নামের একটি ভেরিফায়েড এক্স (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্ট থেকে। তবে যাচাইয়ে দেখা যায় ভিডিওটি মূলত ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বর্ধমান জেলার সুলতানপুর এলাকার একটি ধর্মীয় উৎসবের দৃশ্য।
“বাংলাদেশের হিন্দু মন্দিরে হামলা- ফুটেজে দাবি করা হচ্ছে প্রতিমা ভাঙচুর এবং ধ্বংস করছে দুষ্কৃতিকারীরা”- এমন বিবরণীতে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়েছে আরটি ইন্ডিয়া নামের একটি এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে। ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে একটি প্রতিমা ভাঙার চেষ্টা করা হচ্ছে। ভিডিওটি ২০০ বারেরও বেশি রিপোস্ট হয়েছে। একই ভিডিও একই দাবিতে পোস্ট করা হয় উইকলি ব্লিটজের সম্পাদক সালেহ উদ্দিন শোয়েব চৌধুরির এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে। তিনি ভিডিওটি পোস্ট করে বিবরণী লেখেন ইংরেজিতে, যার বাংলা অর্থ দাড়ায়- “বাংলাদেশে ইসলামপন্থীরা যখন হিন্দু মন্দিরে হামলা করছে, দেবতাদের প্রতিমা ভাংচুর করছে, তখন তাদের নেতারা ভারত থেকে আলু, মশলা, মসুর ডাল, ডিম ইত্যাদি প্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রী আমদানি করে প্রচুর নগদ অর্থ উপার্জন করছে।” এই ভিডিওটিও রিপোস্ট হয়েছে ৭৫০ বারেরও বেশি। একই ভিডিও ভারতীয় গণমাধ্যম জি নিউজের অফিসিয়াল এক্স অ্যাকাউন্ট থেকেও পোস্ট করে ক্যাপশনে দাবি করা হয় যে মৌলবাদীরা বাংলাদেশের কালী বাড়ির কালী প্রতিমায় আক্রমণ করছে।
ডিসমিসল্যাব এই ভিডিওটির সূত্র যাচাই করতে গেলে সামনে আসে ২৯ নভেম্বর ফেসবুকে পোস্ট করা একটি ভিডিও। ভিডিওটির বিবরণীতে হ্যাশট্যাগ দিয়ে লেখা #সুলতানপুরকালীমাতানিরঞ্জন। এই বিবরণীর সূত্র ধরে জানা যায়, ঘটনাটি মূলত ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বর্ধমান জেলার খন্ডকোষের সুলতানপুরের কালী প্রতিমা নিরঞ্জনের একটি দৃশ্য। এটি সুলতানপুরের একটি অভিনব আরাধনা উৎসব। প্রতি ১২ বছর পর পর এখানে কালী প্রতিমা নিরঞ্জন (বিসর্জন) দেয়া হয়। উৎসবে ১২ ফুট উচ্চতার কালী প্রতিমাটি একটু একটু করে ভেঙে পুকুরের জলে ভাসিয়ে দেয়া হয়। এরপর নতুন প্রতিমা গড়া হয় ১২ বছর পর বিসর্জন দেয়ার জন্য। এই পূজার আরো দৃশ্য পাওয়া যায় সুলতানপুর কিরনময়ী পাঠাগার নামক একটি পেজ থেকে। এই পোস্টে যুক্ত প্রতিমার ভিডিওটির সঙ্গে আরটি ইন্ডিয়ার পোস্ট করা ভিডিওটির হুবহু মিল আছে। অর্থাৎ, এটি কোন মন্দিরে হামলার ঘটনা না।
আরেকটি ভিডিও পোস্ট করা হয়েছে ‘বাবা বেনারস’ নামক একটি এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে। পোস্টের বিবরণী হল, “দেখুন গতকাল বাংলাদেশে কীভাবে হিন্দু মন্দির ভাঙচুর এবং হিন্দু ভক্তদের বিভিন্ন শহরে পেটানো হয়েছে। কিন্তু পুরো পৃথিবী বাংলাদেশের এই হিন্দু গণহত্যার বিষয়ে নীরব।” ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে কিছু লোক একটি স্থাপনা ভাঙচুর করছে।
যাচাই করতে গেলে দেখা যায় এটি গতকাল, ১ ডিসেম্বরের কোনো ঘটনা ছিল না। গত ২৯ আগস্ট সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার প্রত্যন্ত চরাঞ্চল মনসুরনগর ইউনিয়নের বামনজানি বাজারের পাশে অবস্থিত আলী পাগলার মাজারে এই ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এই মাজারে হামলার ঘটনায় একটি ভিডিও প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় দ্য মেট্রো টিভি নামের একটি ইউটিউব চ্যানেল থেকে। ভিডিওটির শিরোনাম ছিল, “ভেঙ্গে ফেলা হচ্ছে সিরাজগঞ্জের কাজিপুরের আলী পাগলার মাজার।” এই ভিডিওটির সঙ্গে বাবা বেনারস নামের অ্যাকাউন্ট থেকে পোস্ট করা ভিডিওটির মিল পাওয়া যায়। অর্থাৎ, এই ভিডিওটি হিন্দু মন্দিরে হামলার নয়।
বাবা বেনারস অ্যাকাউন্টটি থেকে এর আগেও একাধিক সাম্প্রদায়িক অপতথ্য প্রচারিত হয়েছে এবং তা নিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। চলতি বছরের আগস্টে রথযাত্রায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে হতাহতের ঘটনাকে বাংলাদেশি হিন্দু আন্দোলনকারীদের উপর সেনাবাহিনীর হামলা দাবিতে প্রচার করতে দেখা যায়। নভেম্বরে কোহিনুর আক্তার নামের কৃষক লীগের নেত্রী আওয়ামী লীগের কর্মসূচিতে গিয়ে হামলার শিকার হলে বাবা বেনারস অ্যাকাউন্ট থেকে এই ঘটনার ভিডিও পোস্ট করে, এটিকে হিন্দু নারী ধর্ষণের ঘটনা বলে প্রচার করে।