আহমেদ ইয়াসীর আবরার

রিসার্চ অফিসার, ডিসমিসল্যাব
সিলেটের ভিডিওকে ভারতের সাম্প্রদায়িক হামলার দৃশ্য দাবিতে প্রচার
This article is more than 2 months old

সিলেটের ভিডিওকে ভারতের সাম্প্রদায়িক হামলার দৃশ্য দাবিতে প্রচার

আহমেদ ইয়াসীর আবরার

রিসার্চ অফিসার, ডিসমিসল্যাব

রাতের বেলা একটি সড়কে যানবাহন ভাংচুর করা হচ্ছে এবং আগুন দেওয়া হচ্ছে– এমন একটি ভিডিও সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট হতে দেখা গেছে ভিন্ন ভিন্ন দাবিতে। কোথাও বলা হয়েছে এটি ভারতের পশ্চিমবঙ্গে মুসলমানদের বাড়ি-ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলার দৃশ্য। কোথাও আবার দাবি করা হচ্ছে এটি ভারতে হিন্দুদের বাড়ি, দোকানপাটে আগুন দেওয়ার দৃশ্য। তবে যাচাইয়ে দেখা যায় ভিডিওটি ভারতের নয়। এটি ২০২৩ সালের ২৬ নভেম্বর সিলেটের সুবিদবাজারে বিএনপির ডাকা অবরোধের সমর্থনে মশালমিছিল ও যানবাহনে আগুন দেয়ার ঘটনার দৃশ্য।

“অবশেষে পশ্চিমবঙ্গে হিন্দুত্ববাদী সন্ত্রাসী গুষ্ঠীগুলো মুসলিমদের লক্ষ করে  তান্ডব শুরু করে দিয়েছে!”- এমন দাবিতে ভিডিওটি বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট হতে দেখা গেছে ফেসবুক (, , , ), এক্স (, ২), ইনস্টাগ্রাম (, , ) এবং ইউটিউবে (, , )। ভিডিওতে কয়েকজন ব্যক্তিকে বিভিন্ন যানবাহন ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করতে দেখা যাচ্ছে। ফেসবুকে এমন দাবিতে ভিডিওটি গত ২৮ মার্চ থেকে প্রচারিত হতে দেখা যাচ্ছে। একই দাবিতে এটি আজ, ১৫ এপ্রিলও শেয়ার করা হয়েছে ফেসবুকে (, , )।

একই ভিডিও আবার ভারতের সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়েছে ভিন্ন দাবিতে। সেখানে বলা হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের মালদহের মোথাবাড়িতে মুসলমানরা হিন্দুদের দোকানপাট ভাংচুর করেছে এবং যানবাহনে আগুন দিয়েছে। এ নিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ভারতীয় তথ্যযাচাইকারী সংস্থা ফ্যাক্ট ক্রেসেন্ডো এবং সংবাদ মাধ্যম আজতাক বাংলা

ভিডিওটির সূত্র যাচাই করতে গেলে দেখা যায় এটি ২০২৩ সালের ২৬ নভেম্বরে ঘটা সিলেটের একটি ঘটনার দৃশ্য। সিলেটে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ও সমমনা দলের ডাকা অবরোধ কর্মসূচি চলাকালে সিলেটের সুবিদবাজারে এই ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। সিলেট টু নিউ ইয়র্ক (Sylhet2NewYork) নামের একটি ইউটিউব চ্যানেল থেকে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয় ২০২৩ সালের ২৭ নভেম্বরে। ভিডিওর শিরোনাম ছিল, “সিলেটের সুবিদবাজারে তান্ডব !! রোববার সন্ধ্যার পরপর এই ঘটনা ঘটে !!”। ভিডিওটির ৬ সেকেন্ড থেকে ভাংচুরের দৃশ্যের সাথে ভুল দাবিতে ছড়ানোর ভিডিওটির হুবহু মিল পাওয়া যায়। এই ঘটনায় প্রথম আলোর প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, “অবরোধের সমর্থনে সিলেটে মশালমিছিল করেছেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। এ সময় কয়েকটি যানবাহন ভাঙচুর ও আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। রোববার সন্ধ্যা সাতটার দিকে নগরের সুবিদবাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।” অর্থাৎ, ভিডিওটি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের নয় এবং পোস্টে করা দাবিগুলোর সঙ্গে ভিডিওটির কোন সম্পর্ক নেই।

একই ভিডিও ২০২৪ সালের জানুয়ারির ৭ তারিখে বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগের রাতে ছড়িয়ে পড়ে ঢাকার ঘটনা হিসেবে। সেই সময় দাবিটি খন্ডন করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন করে ডিসমিসল্যাব।

প্রসঙ্গত, চলতি মাসের ২ তারিখে ভারতের লোক সভায় ওয়াকফ (সংশোধনী) বিল, ২০২৫ পাশ করা হয়। বিতর্কিত এই বিল পাশের পর ভারত জুড়ে প্রতিবাদ চলছে। পশ্চিমবঙ্গে ওয়াকফ বিরোধী আন্দোলনে তিন জন নিহত এবং শতাধিক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানাচ্ছে দেশটির গণমাধ্যম দ্য টাইমস অফ ইন্ডিয়া।

আরো কিছু লেখা