আহমেদ ইয়াসীর আবরার
ভারতের ঘটনাকে বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক হামলা বলে প্রচার
আহমেদ ইয়াসীর আবরার
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স (সাবেক টুইটার)-এ একটি ভিডিও এবং একটি ছবি পোস্ট হতে দেখা যাচ্ছে, যার সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে সাম্প্রদায়িক হামলার দাবি। ভিডিও এবং ছবি যুক্ত পোস্ট দুটি যাচাইয়ে দেখা যায় ভিডিওটি বাংলাদেশের নয়, এবং ছবিটি ২০২২ সালের একটি সাম্প্রদায়িক সহিংসতার দৃশ্য, সাম্প্রতিক নয়।
সামাজিক মাধ্যম এক্সে একটি ভিডিও প্রচারিত হয়েছে যেখানে বিছানায় এক নারীকে এবং মেঝেতে তিন শিশুকে শুয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে (১, ২, ৩, ৪, ৫)। মেঘ আপডেট নামের এক্স অ্যাকাউন্টের পোস্টে দাবি করা হচ্ছে যে এই ভিডিওটি বাংলাদেশের এবং উগ্র ইসলামপন্থীরা ময়মনসিংহের গিরিপুর গ্রামের হিন্দু জনগোষ্ঠীর বাড়িতে আক্রমণ করে তাদের আহত করেছে। পোস্টে আরও বলা হয় এই ঘটনায় বাড়ি লুটপাট ও ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে।
ঘটনাটি যাচাই করতে গেলে ডিসমিসল্যাবের সামনে আসে ভারতীয় তথ্য যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান অল্ট নিউজের একটি ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন। এই প্রতিবেদনে বলা হয় যে এই ভিডিওটির সঙ্গে বাংলাদেশের কোন সম্পর্ক নেই। এটি ভারতের বিহার রাজ্যের একটি ঘটনার দৃশ্য। প্রতিবেদনটিতে ভারতীয় গণমাধ্যমে টাইমস অফ ইন্ডিয়ার বরাতে বলা হয় চলতি বছরের ৬ নভেম্বরে ববিতা দেবি তার তিন সন্তানকে হত্যা করে নিজে আত্মহত্যা করেন। ঘটনাটি ঘটে বিহারের পুরনিয়া জেলার কিলপারা গ্রামে। এছাড়া, হিন্দি কিওয়ার্ড ব্যবহার করে তারা একটি ইউটিউব ভিডিওরও সন্ধান পায় যার সঙ্গে বাংলাদেশের ঘটনা বলে প্রচারিত ভিডিওটির মিল পাওয়া যায়। অর্থাৎ, এটি বাংলাদেশে হওয়া কোন সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা নয়।
এছাড়া আরেকটি ছবি ছড়াচ্ছে সামাজিক মাধ্যমে। ছবিতে একটি পুড়ে যাওয়া ঘরের দৃশ্য দেখা যাচ্ছে (১, ২)। ছবিটির মাধ্যমে বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থার দিকে ইঙ্গিত করা হচ্ছে। রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে ছবিটির সূত্র পাওয়া যায় দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের একটি প্রতিবেদনে। ২০২২ সালের ১৮ জুলাই প্রকাশিত এই প্রতিবেদনের শিরোনাম হলো, “নড়াইলে যা হলো: পুড়েছে ঘর, পুড়িয়েছে আমাদের।” সেখানে ২০২২ সালে নড়াইলে হওয়া একটি সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে। এই ঘটনায় ১০টিরও বেশি বাড়ি ঘরে হামলা এবং ভাঙচুর চালানো হয়। ছবিটি মূলত সেই ঘটনার। তবে এক্সে ছবিটি সম্প্রতি পোস্ট করে একটি ক্যাপশনে বলা হয়, “বাংলাদেশের ইসলামী প্রজাতন্ত্রে হিন্দুদের ভাগ্য।” পোস্টগুলোর ক্যাপশনে একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘বাংলাদেশের হিন্দুদের অবস্থা খুবই খারাপ’। অন্য একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘বাংলাদেশি হিন্দুদের বাঁচাও’। যদিও ছবিটি দুই বছর পুরোনো।
মেঘ আপডেট নামের এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে অপতথ্য ছড়ানোর বিষয়ে ইতিমধ্যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ডিসমিসল্যাব (১, ২)। এছাড়া অল্ট নিউজও ইতিমধ্যে একাধিকবার বাংলাদেশ সংক্রান্ত অপতথ্য ছড়ানোর জন্যে এই অ্যাকাউন্টকে চিহ্নিত করেছে (১, ২)।