আহমেদ ইয়াসীর আবরার
যশোরের মাদ্রাসায় অভিনয়ের দৃশ্যকে জঙ্গি সমাবেশ দাবিতে প্রচার
আহমেদ ইয়াসীর আবরার
একে-৪৭ হাতে জঙ্গিরা সমাবেশ করছে– এমন দাবিতে একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে। তবে যাচাইয়ে দেখা যায়, ভিডিওটি কোনো জঙ্গি সমাবেশ নয় বরং একটি মাদ্রাসার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে হওয়া অভিনয়ের অংশ।
একে-৪৭ রাইফেল নিয়ে যশোরে জঙ্গিদের সমাবেশ হয়েছে এমন দাবিতে ফেসবুকে একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে (১, ২, ৩, ৪, ৫)। ভিডিওটি পোস্ট হয়েছে সামাজিক মাধ্যম এক্সেও (সাবেক টুইটার) (১, ২)। আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের ফেসবুক পেজ এবং এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে (১, ২) ভিডিওটি শেয়ার করা হয়েছে। সজীব ওয়াজেদ জয়ের পোস্টটি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পেজ থেকেও শেয়ার হতে দেখা যায়। ভিডিওটিতে যশোর জামিয়া ইসলামিয়া নামের একটি প্রতিষ্ঠানের ব্যানার দেখতে পাওয়া যায়। ঠিকানা দেওয়া হয়েছে রামনগর, রাজারহাট, যশোর। ভিডিওটিতে একজন সাদা স্কার্ফ পরা ব্যক্তি আরবী ভাষায় বক্তব্য দিচ্ছেন এবং তার দু’পাশে কালো পোশাকে অস্ত্রসহ দুইজনকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। এছাড়াও মঞ্চে সাধারণ পোশাকে বিভিন্ন ব্যক্তিকে বসে থাকতে দেখা যায়।
ভিডিওর সূত্র যাচাই করতে গেলে ডিসমিসল্যাবের সামনে আসে যশোর জামিয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা মহাপরিচালক মুফতি লুৎফুর রহমান ফারুকির একটি বক্তব্যের ভিডিও। যশোর জামিয়া ইসলামিয়া নামের পেজ থেকে পোস্ট করা সেই ভিডিওর শুরুতে তিনি বলেন, “গত ১৭ ডিসেম্বর যশোর জামিয়া ইসলামিয়ায় আমাদের ছাত্ররা বাৎসরিক একটা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করে। যেটা বিনোদনমূলক এবং বক্তব্য, হামদ-নাদ, গজল শিক্ষামূলক। এই অনুষ্ঠানের মধ্যে আরবীতে একজন ছেলে বক্তৃতা দিয়েছে, আরবীতে বক্তব্য দেওয়ার পাশে দুইটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে অস্ত্র আকৃতির শোলা দিয়ে তৈরি করা স্কচ টেপ দিয়ে পেঁচানো এরকম সাদৃশ্য বস্তু নিয়ে।” মুফতি লুৎফর রহমান ফারুকির ভাষ্যমতে এটি একটি অভিনয়ের অংশ ছিল। তিনি বলেন, আরবী বক্তব্যটিতে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের কথা বলা হয়েছে।
এই ঘটনা নিয়ে সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে একাধিক গণমাধ্যমে। বাংলা ট্রিবিউনের প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়, “মাদ্রাসার শিক্ষা সচিব মাকফুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এই মাদ্রাসায় প্রতি বছর শিক্ষার্থীদের নিয়ে বার্ষিক প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। সেখানে যারা উপস্থিত বক্তৃতা, হামদ-নাত, গজল ও অভিনয়ে ভালো করে তাদের পুরস্কৃত করা হয়। গত ১৭ ডিসেম্বর এই মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ছাত্ররা ফিলিস্তিনের মুক্তিকামী মানুষের পক্ষে অভিনয় করে দেখান।’”
যশোর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ভিডিওটি ফেসবুকে দেখেছি। মাদ্রাসার ছাত্রদের একটি প্রতিযোগিতার অংশ এটি। তারা ডামি অস্ত্র ব্যবহার করে অভিনয় করেছেন।’ এ ব্যাপারে যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এসপি) নূর ই আলম সিদ্দিকী সমকালকে জানান, “ভিডিওটি মাদ্রাসাটির বার্ষিক যেমন খুশি, তেমন সাজো অনুষ্ঠানের। ককশিট দিয়ে তারা নকল অস্ত্র বানিয়ে উপস্থাপন করেছে। ঘটনাটি ভাইরাল হবার পর পুলিশ রাতেই মাদ্রাসা পরিদর্শন ও ডামি অস্ত্রসহ অন্যান্য উপকরণ পুলিশ হেফাজতে নিয়েছে। ভিডিওটি নিয়ে বিভ্রান্ত না হবার পরামর্শ দেন তিনি।”