ফাতেমা তাবাসুম

ফেলো, ডিসমিসল্যাব
পুরোনো ভিডিও দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের ভারতীয় পণ্য বয়কটের ভুয়া দাবি প্রচার
This article is more than 3 months old

পুরোনো ভিডিও দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের ভারতীয় পণ্য বয়কটের ভুয়া দাবি প্রচার

ফাতেমা তাবাসুম

ফেলো, ডিসমিসল্যাব

বাংলাদেশের নবনিযুক্ত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার “ভারতীয় পণ্য বয়কট” নিয়ে আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু করেছে– এমন দাবিতে সামাজিক মাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়তে দেখা গেছে। ভিডিওতে এক ব্যক্তিকে ভারতীয় পণ্য বাদ দিয়ে দোকানে দেশি পণ্য রাখতে বিক্রেতাদের মাঝে প্রচারণা চালাতে দেখা যায়। তবে যাচাইয়ে দেখা গেছে ভিডিওটি অন্তত পাঁচ মাস আগের। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে হাসিনা সরকার টানা চতুর্থবারের মতো ক্ষমতায় আসলে, ভারতের হস্তক্ষেপের প্রতিবাদে পণ্য বয়কটের প্রচারণা শুরু হয়। ভিডিওটি সেসময় একজন বাংলাদেশি অ্যাক্টিভিস্টের ভারতীয় পণ্য বয়কট প্রচারণার দৃশ্য। 

গত ১০ আগস্ট জিতেন্দ্র প্রতাপ সিং নামের একটি এক্স প্রোফাইল হতে একটি ভিডিও শেয়ার করা হয়। ভিডিওতে দেখা যায় একজন ব্যক্তি বাজারে দোকান ঘুরে বিক্রেতাদের “বেশি বেশি দেশি পণ্য” রাখতে বলছেন। এছাড়াও ভারতীয় পণ্য যেমন “ডাবর হানি,” “প্যারাস্যুট নারিকেল তেল,” “উজালা নীল,” “তাজা চা”– এ ধরনের পণ্য বিক্রি করতে নিষেধ করছেন। একই সঙ্গে দেশীয় পণ্যের তালিকা ধরিয়ে দিচ্ছেন এবং অনুরোধ করছেন প্রাণ, চমক নীল, রাঁধুনি, স্কয়ার, জুঁই নারিকেল তেল ইত্যাদি দেশি পণ্য বা ব্র্যান্ডের জিনিস বিক্রি করে নাগরিকদের দেশি পণ্য ব্যবহারে অভ্যস্ত করতে। ভিডিওটির ক্যাপশনে জিতেন্দ্র প্রতাপ সিং দাবি করেন এটি বাংলাদেশের নতুন সরকারের “ভারতীয় পণ্য বয়কট” এর আনুষ্ঠানিক প্রচারণার একটি ভিডিও।

তিনি দাবি করেন, বিএনপি নেতারা শহর ঘুরে দোকানদারদের প্যারাসুট অয়েল, ডাবর হানি, উজালা ওয়াশিং পাউডারের মতো ভারতীয় ব্র্যান্ডের পণ্য বিক্রি বন্ধ করার পাশাপাশি ভারতের ব্যবসায়ী আদানিকে বয়কটের আহ্বানও করছেন। এছাড়াও বাংলাদেশ ভারতের জন্য হুমকিস্বরূপ উল্লেখ করে হিন্দিতে লেখা তার ক্যাপশনের বাংলা অর্থ দাড়ায়, “ভারত সরকারের এখন বোঝা উচিত যে আমাদের পূর্ব সীমান্তে পাকিস্তানের চেয়েও বড় হুমকি হয়ে উঠছে বাংলাদেশ। আর বাংলাদেশকে তাদের ভাষাতেই জবাব দেওয়া উচিত।” এখন পর্যন্ত ভিডিওটি দেখেছেন প্রায় ছয় হাজার ব্যবহারকারী। এবং ভিডিওটি এক্সে রিপোস্ট করা হয়েছে ১৯৮ বার। 

ডিসমিসল্যাব ভিডিওটির কিফ্রেম ধরে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে, একটি পাঁচ মাস পুরোনো ইউটিউব ভিডিও খুঁজে পায়। যাচাইয়ে এ বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি সামাজিক মাধ্যম ইউটিউবে প্রায় এক লাখ ফলোয়ার বিশিষ্ট তারেক’স টাইম নামে একটি ইউটিউব চ্যানেলে আসল ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়। ভিডিওতে থাকা ব্যক্তির নাম মোঃ তারেক রহমান। তিনি নিজেকে গণ অধিকার পরিষদ নামে একটি দলের কর্মী হিসেবে দাবি করেন। এছাড়াও, ৮ আগস্টে শপথ নেয়া বাংলাদেশের নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ভারতীয় পণ্য বয়কট করার ডাক দিয়েছে এমন কোন সংবাদ পাওয়া যায়নি।

গত ফেব্রুয়ারিতে আল-জাজিরার একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, “বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভারতীয় হস্তক্ষেপের অভিযোগে ব্যাপক পরিসরে “ইন্ডিয়া আউট” প্রচারণা শুরু হয়।” একই মাসে বিবিসি এক প্রতিবেদনে জানায়, সেসময় এই হ্যাশট্যাগ প্রচারণাটি ফেসবুক, এক্স এবং ইন্সটাগ্রামেও শীর্ষে চলে এসেছিল। তারেক’স টাইমের ভিডিওটি মূলত ফেব্রুয়ারির অর্থাৎ সে সময়েরই। তার ইউটিউব চ্যানেলের এরকম আরও অনেক প্রচারণা কার্যক্রমের ভিডিও (, , ) পাওয়া যায়। অর্থাৎ ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের কোনো ঘটনা নয়, বরং বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতির সঙ্গে এই ঘটনার কোনো যোগসূত্র নেই। অথচ ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়লে অনেকে এটি শেয়ার করে বাংলাদেশকে উদ্দেশ্য করে বিদ্বেষপুর্ণ মন্তব্য করেন। 

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে গত জুলাইয়ে শুরু হওয়া কোটা সংস্কার আন্দোলন ধীরে ধীরে রূপ নিয়েছিল সরকারবিরোধী আন্দোলনে। কয়েক সপ্তাহের প্রাণঘাতী সংঘর্ষ, ইন্টারনেট শাটডাউন ও কারফিউ শেষে ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরবর্তীতে সামাজিক মাধ্যমে বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সহিংসতা নিয়ে ভারতে গুজব ছড়িয়ে পড়তে দেখা যায়। ডিসমিসল্যাবের একাধিক প্রতিবেদনে (, , ) এক্সসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে অপ্রাসঙ্গিক ক্লিপ বা ছবি ছড়িয়ে ভুয়া প্রচারণার বিষয়টি উঠে আসে।

আরো কিছু লেখা