নোশিন তাবাসসুম

ফেলো, ডিসমিসল্যাব
অক্টোবর ৫, ২০২৫
১৭:৪৮:৫০
“জয় বাংলা” স্লোগান দেওয়ায় আটকের দাবিতে ছড়াচ্ছে শিশুদের উদ্ধারের ছবি

“জয় বাংলা” স্লোগান দেওয়ায় আটকের দাবিতে ছড়াচ্ছে শিশুদের উদ্ধারের ছবি

অক্টোবর ৫, ২০২৫
১৭:৪৮:৫০

নোশিন তাবাসসুম

ফেলো, ডিসমিসল্যাব

“জয় বাংলা” স্লোগান দেওয়ায় শিশুদের আটক করা হয়েছে – এমন দাবিতে একটি ছবি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে ফ্যাক্ট চেক করে দেখা গেছে, ছবিটি চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে পাহাড়ে হারিয়ে যাওয়া সাত শিশুকে উদ্ধারের দৃশ্য। একাধিক সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদন অনুসারে, চলতি বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর বাঁশখালী সরকারি মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির সাত শিক্ষার্থী বাড়ি থেকে বের হয়ে পরে পথ হারিয়ে ফেলে। পরবর্তীতে পুলিশ শিক্ষার্থীদের উদ্ধার করে। 

সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছবিটিতে সাত ছেলে শিশুকে দেখা যায়, তাদের পিছনে একটি ব্যানার। ব্যানারে লেখা “বিশেষ অভিযান বাঁশখালী থানা চট্টগ্রাম জেলা”। ছবিটির সর্ববামে থাকা শিশুটির মাথায় ক্যাপ, বাঁ থেকে তৃতীয় শিশুর পরনে হলুদ রঙা গেঞ্জি। পলিটিক্স ইনসাইডার নামক একটি পেজ ছবিটি পোস্ট করে ক্যাপশনে লেখে, “জয় বাংলা স্লোগান দেওয়ার অপরাধে ছোট বাচ্চাদের গ্রেফতার করেছে খুনি ইউনূসের পুলিশ”।

ফেসবুকের একাধিক ফেসবুক প্রোফাইল (, , , , , , , , ) এবং গ্রুপ থেকে একই দাবিতে ছবিটি শেয়ার হতে দেখা যায়। এছাড়া ইন্সটাগ্রামেও একটি প্রোফাইল থেকে একই দাবিতে ছবিটি পোস্ট করা হয়। এক্স এ একটি প্রোফাইল থেকে একই দাবিতে ছবিটি পোস্ট করা হয়, সেখানে ক্যাপশন দেওয়া ইংরেজিতে।

ছবিটির কিফ্রেম নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে ডিসমিসল্যাব একটি প্রতিবেদন খুঁজে পায়। চলতি বছরের ২৭ সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ব্যবহৃত ছবিটির সাথে শিশুদের আটক করার দাবিতে ছড়িয়ে পড়া ছবিটির হুবহু মিল লক্ষ্য করা যায়। প্রতিবেদনটি চট্টগ্রামে সাতজন হারিয়ে যাওয়া শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করার প্রসঙ্গে। এই সাত শিক্ষার্থী বাড়ি থেকে বের হয়, পরে পথ হারিয়ে ফেলে। তারা নির্ধারিত সময়ে বাড়ি না ফেরায় অভিভাবকেরা উদ্বিগ্ন হয়ে পুলিশের কাছে খবর দেন। পরবর্তীতে, বাঁশখালী থানা পুলিশ ২৭ সেপ্টেম্বর, শনিবার সকালে ডাকভাঙা পাহাড় থেকে সাত শিক্ষার্থীকে সুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করে। 

ঘটনাটি নিয়ে আরও অনুসন্ধান করলে ফেসবুকে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ নামের পেজের ২০২৫ সালের ২৭ সেপ্টেম্বরের একটি ভিডিও ডিসমিসল্যাবের সামনে আসে। ছড়িয়ে পড়া শিশুদের ছবির সঙ্গে ভিডিওটির সাদৃশ্য রয়েছে। ভিডিওর সাত শিশুর সাথে ছড়িয়ে পড়া ছবির সাত শিশুর পোশাক, চেহারা এবং পেছনের ব্যানারের দৃশ্য হুবহু মিলে। ভিডিওর ক্যাপশনে পুলিশের উদ্ধার প্রক্রিয়া এবং উদ্ধারকৃত সাত শিক্ষার্থীর পরিচয় উল্লেখ করা হয়েছে। একই তারিখে একাধিক ফেসবুক প্রোফাইল (, , , , , )  থেকেও ভিডিওটি একই দাবিতে পোস্ট করা হয়। ফেসবুকের একাধিক পেজ (, , , , , ) থেকেও একই দাবিতে ভিডিওটি প্রচার করা হয়।

একাধিক সংবাদমাধ্যমেও (, , ) ঘটনাটি নিয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। চলতি বছরের ২৭ সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল, “পথ হারিয়ে পাহাড়ে কাটে সারা রাত, এরপর যেভাবে উদ্ধার হলো সাত শিশু”। প্রতিবেদনে বলা হয়, “চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে গতকাল শুক্রবার বিকেলে পাহাড়ে গিয়ে নিখোঁজ হওয়া সাত শিশুকে আজ শনিবার ভোরে উদ্ধার করে পুলিশ। উদ্ধার হওয়া শিশুদের বিবরণে উঠে আসে পাহাড়ে গিয়ে তাদের পথ হারানো ও উদ্ধার হওয়ার ঘটনা। পুলিশ জানিয়েছে গতকাল রাতে শিশুদের অভিভাবকেরা সন্তানদের সন্ধান চেয়ে থানায় ডায়েরি করেন। এরপর সারা রাত উৎকণ্ঠায় থানায় কাটিয়ে দেয় তারা। পুলিশের তিনটি দল রাতেই তাদের খোঁজে পাহাড়ে যায়। পরে ভোর পাঁচটার দিকে নিখোঁজ হওয়ার ১২ ঘণ্টা পর জঙ্গল জলদির ৪ নম্বর ওয়ার্ডের পাহাড়ি এলাকা থেকে তাদের উদ্ধার করা হয়।”

অর্থাৎ, সম্প্রতি ছড়ানো এই ছবিটির সঙ্গে শিশুদের আটক করার কোনো সম্পর্ক নেই। অর্থাৎ, দাবিটি ভুয়া। 

আরো কিছু লেখা