ডিসমিসল্যাব
ফেক নিউজের মনস্তত্ত্ব: একটি গবেষণা
ডিসমিসল্যাব
প্রযুক্তির কল্যাণে দিন দিন তথ্যপ্রাপ্তি যত সহজ হচ্ছে, ততোই বাড়ছে ফেক নিউজ আর ভুল তথ্যের ছড়াছড়ি। কিন্তু এই ফেক নিউজ কীভাবে ছড়াচ্ছে? মানুষ কেনই বা এসবে বিশ্বাস করছে? এর পেছনের মনস্তত্ত্বটা কী?
সাধারণত মনে করা হয়, মানুষ তাদের চিন্তাধারা বা মতাদর্শের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ তথ্যের ওপর বিশ্বাস করে। যেমন, কেউ কোনো নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের অনুসারী হলে, সেই দলের ছড়ানো প্রোপাগান্ডাগুলো নির্দ্বিধায় মেনে নেয়। তবে ২০২১ সালে ট্রেন্ডস ইন কগনিটিভ সায়েন্স সাময়িকীতে প্রকাশিত একটি গবেষণা বলছে ভিন্ন কথা।
“দ্য সাইকোলজি অব ফেক নিউজ” শীর্ষক গবেষণাটিতে বলা হয়, মানুষ কোনো বিষয় গভীরভাবে তলিয়ে দেখার বিষয়ে উদাসীন। যেমন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের ফলে মানুষ এখন খুব দ্রুত স্ক্রল করতে অভ্যস্ত। ফলে অধিকাংশ সময়ই তারা কোনো তথ্য দেখার পর, সেটি গভীরভাবে যুক্তি দিয়ে চিন্তা করে দেখে না। এছাড়া সেই বিষয় সম্পর্কে পূর্ববর্তী ধারণা না থাকার কারণেও সঠিকভাবে সত্য-মিথ্যা নির্ণয় করতে পারে না।
গবেষণাটিতে বলা হয়, মানুষের মধ্যে সার্বিকভাবে তাদের মতাদর্শের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ রাজনৈতিক সংবাদে বিশ্বাস করার প্রবণতা বেশি হলেও বিচক্ষণ ব্যক্তিদের মধ্যে সত্য-মিথ্যা নির্ণয়ে রাজনৈতিক মতাদর্শ তেমন প্রভাব ফেলে না।
এখানে ১৪টি পরীক্ষামূলক গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের সত্য-মিথ্যা যাচাইয়ে দক্ষতা এবং তাদের কগনিটিভ রিফ্লেকশন টেস্টের ফলাফল তুলনা করা হয়। কগনিটিভ রিফ্লেকশন টেস্টে সাধারণত এমন প্রশ্ন রাখা হয় যাতে সক্রিয় ও বিচক্ষণ অংশগ্রহণকারীরা ভালো করেন। ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, যাদের কগনিটিভ রিফ্লেকশন ভালো তাদের সঠিকভাবে সত্য-মিথ্যা যাচাইয়ের সফলতার হারও বেশি। এক্ষেত্রে সংবাদটি অংশগ্রহণকারীদের রাজনৈতিক মতাদর্শের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কি না তা খুব বেশি প্রভাব রাখে না।
গবেষণাটিতে আরও দেখানো হয় যে, মানুষ তাদের শেয়ার করা নিউজ বা পোস্টে সবসময় বিশ্বাস করে না। একটা সময় ভাবা হতো যারা ফেক নিউজে বিশ্বাস করছে তারাই মূলত এই নিউজগুলো ছড়ানোর পেছনে দায়ী। যুক্তরাষ্ট্রের এক হাজার দুইজন অংশগ্রহণকারীর ওপর পরিচালিত এক পরীক্ষায় দেখা যায় অংশগ্রহণকারীরা যে সংবাদগুলো ভুল বলে চিহ্নিত করছে তারা সেসব সংবাদ শেয়ার দিতেই বেশি আগ্রহী।
গবেষণাটির মূল লেখক কানাডার ইউনিভার্সিটি অব রেজাইনার সহযোগী অধ্যাপক গর্ডন পেনিকুক এবং সহলেখক যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেট্স ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি)-র অধ্যাপক ডেভিড জি র্যান্ড।