আহমেদ ইয়াসীর আবরার
কারও বিজ্ঞাপন বাতিল, কারও চললো বাধাহীন
ডাকসু নির্বাচনে রাজনৈতিক বিজ্ঞাপনের ২৫ শতাংশই শনাক্ত করতে পারেনি মেটা
আহমেদ ইয়াসীর আবরার
এবারের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনকে দেশের গণতন্ত্র ও ছাত্র রাজনীতির জন্য একটি পরীক্ষা হিসেবে দেখেছেন অনেকেই। একই সঙ্গে এটি প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনে অনলাইন প্রচারণা ও সামাজিক মাধ্যম প্লাটফর্মগুলোর ভূমিকারও একটি বড় পরীক্ষা ছিল। ডাকসু নির্বাচন শেষ পর্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবেই শেষ হয়েছে। কিন্তু পরীক্ষায় সামাজিক মাধ্যম প্লাটফর্মগুলো কি উৎরাতে পেরেছে? নির্বাচনে সামাজিক মাধ্যমের ভূমিকার একটি ক্ষেত্র হলো, বিজ্ঞাপন নির্ভর অনলাইন প্রচারণায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা। এর মাধ্যমে ভোটদাতারা জানতে পারেন বিজ্ঞাপনটি কারা চালােচ্ছন এবং এর পেছনে কারা টাকা খরচ করছেন। কিন্তু ইউটিউব বা গুগল বাংলাদেশে রাজনৈতিক বিজ্ঞাপনের তথ্য প্রকাশ করে না। টিকটক রাজনৈতিক বিজ্ঞাপন প্রচারই করতে দেয় না। বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে শুধু মেটা, তাদের স্বচ্ছতার নীতির অংশ হিসেবে বাংলাদেশেও নির্বাচনী বা রাজনৈতিক বিজ্ঞাপনের তথ্য প্রকাশ করে। ডিসমিসল্যাবের এই প্রতিবেদনে, মেটার প্লাটফর্মগুলোতে (ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রাম) নির্বাচনী বিজ্ঞাপনে স্বচ্ছতা নিশ্চিতের ক্ষেত্রটিকে খতিয়ে দেখা হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে প্রার্থীদের অনেকেই সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রচারণা চালিয়েছেন। শুধু ৭ সেপ্টেম্বর, মেটার অ্যাড লাইব্রেরিতে “ডাকসু” লিখে সার্চ করে প্রচারণার ২৩১টি বিজ্ঞাপন খুঁজে পায় ডিসমিসল্যাব। প্রার্থী এবং তাদের সমর্থকেরা তাদের প্রোফাইল বা পেজ থেকে এই বিজ্ঞাপন প্রচার করেছেন এবং এর জন্য অর্থ খরচ করেছেন।
ফেসবুক বা ইনস্টাগ্রামে যখন রাজনীতি বা নির্বাচন নিয়ে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়, তখন মেটা বিজ্ঞাপনদাতার পরিচয় যাচাই করে এবং বিজ্ঞাপনে একটি ছোট্ট লেখা দেখায় – “পেইড ফর বাই” অর্থাৎ কারা এর খরচ দিয়েছে। এতে সাধারণ ব্যবহারকারীরা সহজেই বুঝতে পারেন, রাজনৈতিক বিজ্ঞাপনের পেছনে কার অর্থায়ন আছে এবং এই বিজ্ঞাপনের পেছনে কত টকা খরচ হয়েছে। এই নিয়মের উদ্দেশ্য হলো স্বচ্ছতা বাড়ানো এবং গোপন অর্থায়ন বা ভুয়া প্রচারণা ঠেকানো।
সাধারণ বিজ্ঞাপন অ্যাড লাইব্রেরিতে শুধু ততদিন পর্যন্ত পাওয়া যায়, যতদিন সেটি সক্রিয় বা সচল থাকে। কিন্তু রাজনৈতিক বিজ্ঞাপনের বেলায় প্রচারণা বন্ধ হয়ে গেলেও স্বচ্ছতার জন্য সেটি ৭ বছর লাইব্রেরিতে রেখে দেওয়া হয়। বিজ্ঞাপনদাতা স্বেচ্ছায় রাজনৈতিক বিজ্ঞাপনে “ডিসেক্লইমার” বা পরিচিতি তথ্য দিতে পারেন। সেটি না হলে মেটার স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা বিজ্ঞাপনটিকে রাজনৈতিক হিসেবে শনাক্ত করে এবং বিজ্ঞাপনদাতাকে তথ্য দিতে বলে। কেউ যদি তথ্য না দেন, তাহলে মেটা স্বচ্ছতার ঘাটতির কারণে রাজনৈতিক বিজ্ঞাপনটি সরিয়ে নেয়।
কিন্তু ৭ সেপ্টেম্বর, অ্যাড লাইব্রেরিতে পাওয়া ডাকসুর নির্বাচনী প্রচারণার ২৩১টি বিজ্ঞাপন বিশ্লেষণ করে ডিসমিসল্যাব দেখতে পায়, মেটা এদের ২৫ শতাংশকেই রাজনৈতিক বা নির্বাচনী বিজ্ঞাপন হিসেবে শনাক্ত করতে পারেনি। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, কোনো প্রার্থীর বিজ্ঞাপন ডিসেক্লইমার না থাকায় সরিয়ে নেওয়া হয়েছে, আবার অন্য প্রার্থী তথ্য না দিয়েই বাধাহীন ভাবে বিজ্ঞাপন চালিয়ে গেছেন; একই প্রার্থীর একটি বিজ্ঞাপন সরানো হয়েছে, কিন্তু অন্যগুলো ডিসক্লেইমারবিহীন অবস্থাতেই প্রচারিত হয়েছে।
এর ফলে ভোটাররা কোনো কোনো প্রার্থীর ক্ষেত্রে মেটায় প্রচারিত নির্বাচনী বিজ্ঞাপনের পেছনে খরচ হওয়া টাকার পরিমাণ জানতে পেরেছেন, এবং কোনো কোনো প্রার্থীর খরচের তথ্য জানতে পারেননি। ইস্ট-ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালেয়র আইন বিভাগের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক এবং অস্ট্রেলিয়ার মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি গবেষক মো. পিজুয়ার হোসেইনের মতে, এতে করে প্রার্থীদের মধ্যে বৈষম্য তৈরি হয়, এবং একজন প্রার্থী অপরজনের তুলনায় বেশি সুবিধা পান। তিনি বলেছেন, মেটার রাজনৈতিক বিজ্ঞাপন শনাক্তকরণের স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থার দুর্বলতাই এর কারণ।
মেটার রাজনৈতিক বিজ্ঞাপনে যে “পেইড ফর বাই” ডিসক্লেইমার দেখানো হয়, তাতে বিজ্ঞাপনদাতার পরিচয় সংক্রান্ত কিছু বাধ্যতামূলক তথ্য থাকে। এগুলো হলো:
- অর্থায়নকারীর পূর্ণ নাম (ব্যক্তি বা সংগঠন)
- নিবন্ধিত ঠিকানা
- ফোন নম্বর
- ওয়েবসাইট
- ইমেইল
রাজনৈতিক বিজ্ঞাপনে ক্লিক করলে যে কোনো ব্যবহারকারী লাইব্রেরিতে গিয়ে দেখতে পাবেন:
- বিজ্ঞাপনের প্রচারের শুরু ও শেষ তারিখ
- আনুমানিক কত টাকা খরচ হয়েছে
- বিজ্ঞাপনটি কতবার দেখানো হয়েছে
- কাদের লক্ষ্য করে বিজ্ঞাপনটি চালানো হয়েছে (বয়স, লিঙ্গ, অঞ্চল)
- বিজ্ঞাপনের একাধিক সংস্করণ, যদি থাকে
মেটা যখন কোনো বিজ্ঞাপনকে রাজনৈতিক বলে চিহ্নিত করে, তখন সেটি কিছু বাড়তি শর্তের মুখোমুখি হয়। যেমন: বিজ্ঞাপন প্রচারের অনুমোদন পেতে সময় লাগে, “পেইড ফর বাই” ডিসক্লেইমার দেখাতে হয় এবং এতে বিজ্ঞাপনের প্রভাব ও কার্যকারিতা কমে যায়। কিন্তু যেসব প্রার্থীর বিজ্ঞাপন রাজনৈতিক বলে ধরা পড়ে না, তারা কোনো বাধা ছাড়াই সহজে অনেক মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারেন। ফলে প্রতিযোগিতা সমান থাকে না।
অস্ট্রেলিয়ার মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি গবেষক মো. পিজুয়ার হোসেইন
কারও জন্য নিয়ম আছে, কারও জন্য নেই
মেটা অ্যাড লাইব্রেরিতে “ডাকসু” লিখে সার্চ করে নির্বাচনী প্রচারণার যে ২৩১টি বিজ্ঞাপন পাওয়া যায়, তার ৬৬ শতাংশ রাজনৈতিক বিজ্ঞাপন হিসেবে সংরক্ষিত হয়েছে। এর মানে, এসব বিজ্ঞাপনের ডিসক্লেইমার তথ্য রয়েছে। বিজ্ঞাপনদাতারা নিজে অথবা মেটার হাতে শনাক্ত হওয়ার পর স্বচ্ছতা সংক্রান্ত তথ্য দিয়েছেন। ২১ আগস্ট থেকে ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ের মধ্যে বিজ্ঞাপনগুলো প্রচারিত হয়েছে। এসবের পেছনে কত টাকা খরচ হয়েছে, তা-ও সেখানে পাওয়া যায়।
৯ শতাংশ বিজ্ঞাপনকে মেটা রাজনৈতিক হিসেবে চিহ্নিত করে সেগুলো সরিয়ে নিয়েছে, কারণ সেগুলোতে স্বচ্ছতা সংক্রান্ত তথ্য দেওয়া হয়নি। আর প্লাটফর্মটি ২৫ শতাংশ নির্বাচনী বিজ্ঞাপনকে রাজনৈতিক হিসেবে শনাক্ত করতে ব্যর্থ হয়েছে। অর্থাৎ, স্বচ্ছতার তথ্য ছাড়াই এসব বিজ্ঞাপন বাধাহীনভাবে চলেছে।
ডিসমিসল্যাবের বিশ্লেষণে দেখা যায়, বিজ্ঞাপনের ভাষা একই হলেও কোনোটি রাজনৈতিক হিসেবে শনাক্ত হয়েছে, আবার কোনোটি হয়নি। আরাফাত চৌধুরি ডাকসুতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সাধারণ সম্পাদক পদে, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে। তার দুটি বিজ্ঞাপনকে (১, ২) মেটা সরিয়ে নিয়েছে ডিসক্লেইমার না থাকায়। তবে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী শেখ তানভীর বারি হামিমের নাম যুক্ত ৩টি পেজ থেকে চালানো ৫টি বিজ্ঞাপনে ডিসক্লেইমার না থাকার পরও, মেটা সেগুলোকে সরায়নি।
তথ্য না দেওয়ার কারণে সদস্য পদপ্রার্থী আবির হাসানের একটি নির্বাচনী বিজ্ঞাপন সরিয়ে দেওয়া হয়েছে, কিন্তু তারই অন্তত তিনটি বিজ্ঞাপন ভোটের দিনও চলেছে কোনো ধরনের ডিসক্লেইমার ছাড়া (১, ২, ৩)। সহ-সভাপতি পদপ্রার্থী উমামা ফাতেমার একটি বিজ্ঞাপনও মেটা সরিয়ে নিয়েছে। তার অন্য নির্বাচনী বিজ্ঞাপনে অবশ্য স্বচ্ছতার তথ্য দেওয়া ছিল।
বিজ্ঞাপনের ধরন প্রায় একই রকম হলেও বামপাশের বিজ্ঞাপনটিকে রাজনৈতিক হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে, ডানপাশেরটিকে করা হয়নি।
ডিসক্লেইমার ছাড়া সবচেয়ে বেশি, মোট ৫টি বিজ্ঞাপন চলতে দেখা গেছে আন্তর্জাতিক সম্পাদক পদপ্রার্থী মুস্তাকীম মাহমুদ রাহীমের পেজ থেকে। এছাড়া স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য ও সচেতন শিক্ষার্থী সংসদ নামের প্যানেল থেকে ৩টি করে বিজ্ঞাপন চলতে দেখা গেছে, যেগুলোতে কোনো ডিসক্লেইমার ছিল না। মেটার স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা, এসব বিজ্ঞাপনকে রাজনৈতিক হিসেবে চিহ্নিত করতে পারেনি, তাই এখন আর বিজ্ঞাপনগুলো বা এ সংক্রান্ত তথ্য অ্যাড লাইব্ররিতে নেই।
এই বিষয়ে ইস্ট-ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক মো. পিজুয়ার হোসেইন ডিসমিসল্যাবকে বলেন, “মেটা যখন কোনো বিজ্ঞাপনকে রাজনৈতিক বলে চিহ্নিত করে, তখন সেটি কিছু বাড়তি শর্তের মুখোমুখি হয়। যেমন: বিজ্ঞাপন প্রচারের অনুমোদন পেতে সময় লাগে, “পেইড ফর বাই” ডিসক্লেইমার দেখাতে হয় এবং এতে বিজ্ঞাপনের প্রভাব ও কার্যকারিতা কমে যায়। কিন্তু যেসব প্রার্থীর বিজ্ঞাপন রাজনৈতিক বলে ধরা পড়ে না, তারা কোনো বাধা ছাড়াই সহজে অনেক মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারেন। ফলে প্রতিযোগিতা সমান থাকে না।” তিনি মনে করেন, এভাবে “নির্বাচনে কে জনপ্রিয় বা কার নীতি ভালো, তার চেয়ে বরং মেটার বিজ্ঞাপন নীতি কীভাবে প্রয়োগ হচ্ছে, সেটিই বড় প্রভাবক হয়ে দাঁড়ায়।”
জাতীয় নির্বাচনে এর প্রভাব নিয়ে শঙ্কা
প্রশ্ন হলো, একটি বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক নির্বাচনের প্রচারণা কি, মেটার রাজনৈতিক বিজ্ঞাপন নীতিমালার পরিধির মধ্যে পড়ে? মেটার নির্বাচন, রাজনীতি ও সামাজিক ইস্যু সংক্রান্ত বিজ্ঞাপনের নীতিমালায় বলা হয়েছে, যেকোনো নির্বাচন, গণভোট বা ব্যালট-উদ্যোেগের জন্য এটি প্রযোজ্য এবং ভোট দিতে উৎসাহিত করা বা ভোট সংক্রান্ত তথ্য প্রচারের মতো কার্যক্রমও এর আওতায় পড়বে।
এর আগে ভারত, নেপাল ও শ্রীলঙ্কায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনে মেটা এই নীতি প্রয়োগ করেছে এবং বিজ্ঞাপনে ডিসক্লেইমার না থাকায় সেগুলো সরিয়ে দিয়েছে। একই চিত্র দেখা গেছে, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় গ্র্যাজুয়েট শিক্ষার্থী সংসদ এবং কেমব্রিজ শিক্ষার্থী সংসদের নির্বাচনী প্রচারণাতেও।

ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা এবং যুক্তরাষ্ট্রের ছাত্র সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে পরিচালিত বিজ্ঞাপনকে মেটা রাজনৈতিক বিজ্ঞাপন হিসেবে শনাক্ত করেছে এবং সরিয়ে দিয়েছে
ঐতিহাসিকভাবে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং ডাকসু নির্বাচন বাংলাদেশের জাতীয় রাজনীতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলছেন: ডাকসু, জাকসুসহ যেসব নির্বাচন হচ্ছে এগুলো জাতীয় নির্বাচনের মডেল হিসেবে বিবেচিত হবে। মাত্রা আলাদা হলেও, অনেকেই বিশ্ববিদ্যালয় সংসদ নির্বাচনকে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের প্রতিফলন হিসেবে দেখছেন।
পিজুয়ার হোসেইন বলেন, “যদি জাতীয় নির্বাচনে এই ধরনের অসামঞ্জস্যপূর্ণ ফ্ল্যাগিংয়ের পুনরাবৃত্তি হয়, তাহলে এটি নির্বাচনী [প্রচারণায় স্বচ্ছতার] প্রক্রিয়া এবং এর নিরপেক্ষতার ওপর জনগণের বিশ্বাসকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।” তাঁর মতে, এই বিজ্ঞাপনগুলোর প্রাসঙ্গিকতা কেবল বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ নয়। “মেটার এই প্রেক্ষাপটটি বিবেচনা এবং উপলব্ধি করা উচিত যে, একটি বিশ্ববিদ্যালয় সংসদ নির্বাচনও জাতীয় পর্যায়ে প্রভাব ফেলতে পারে। [তাদের] নীতির যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করা গেলে বিজ্ঞাপন প্রচারের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা, ধারাবাহিকতা ও নিরপেক্ষতা বজায় থাকবে।”
মেটার রাজনৈতিক বিজ্ঞাপন শনাক্তকরণে দুর্বলতা নতুন কিছু নয়। এর আগে ডিজিটালি রাইটের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ২০২৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে প্রতিষ্ঠানটি অপ্রাসঙ্গিক অনেক বিজ্ঞাপনকে রাজনৈতিক হিসেবে “ফ্ল্যাগ” বা শনাক্ত করেছে, আবার অনেক রাজনীতিবিদ ও দলের বিজ্ঞাপনকে শনাক্ত করতে ব্যর্থ হয়েছে। (ডিসমিসল্যাব, মূলত ডিজিটালি রাইটের একটি গবেষণা উদ্যােগ এবং উপরে উল্লেখ করা গবেষণায় পিজুয়ার হোসেইনও যুক্ত ছিলেন।)
কার কত বিজ্ঞাপন
ডাকসু সংক্রান্ত ২৩১টি বিজ্ঞাপন বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, মেটায় সবচেয়ে বেশি বিজ্ঞাপন প্রচারিত হয়েছে ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের পক্ষে। মোট বিজ্ঞাপনের ৭৬টিই ছিল তাদের সমর্থনে। বিভিন্ন স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে চালানো হয়েছে ৪৯টি বিজ্ঞাপন। এছাড়া, স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য প্যানেলের পক্ষে ৩৫টি, “অপরাজেয় ৭১, অদম্য ২৪” প্যানেলের পক্ষে ২১টি এবং ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট প্যানেলের পক্ষে ১৪টি বিজ্ঞাপন চলতে দেখা গেছে।
তবে বলে রাখা ভালো, এই বিজ্ঞাপনগুলো ৭ সেপ্টেম্বর, মাত্র এক দিনের সার্চে পাওয়া। এই দিনের আগে যেসব বিজ্ঞাপন চলেছে, কিন্তু রাজনৈতিক হিসেবে শনাক্ত হয়নি, সেগুলো এই হিসেবে নেই। কারণ, সাধারণ বিজ্ঞাপন যদি সচল না থাকে, সেটি অ্যাড লাইেব্ররিতে সংরক্ষিত হয় না। ফলে, পরে সেগুলোকে আর পাওয়া যায় না।
মোট বিজ্ঞাপনের দুই তৃতীয়াংশ, বা ১৪৯টি প্রার্থীরা নিজের অ্যাকাউন্ট থেকে দিয়েছেন। প্যানেলের নামে খোলা পেজ থেকে চালানো হয়েছে ১৪টি এবং সমর্থকদের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে ৬৮টি। মেটায় বিজ্ঞাপনী প্রচারণায় প্রার্থীদের মধ্যে শীর্ষে ছিলেন সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী আরাফাত চৌধুরী। তিনি বিজ্ঞাপন চালিয়েছেন ১৯টি। এরপরই সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদপ্রার্থী অনিদ হাসান। তার পেজ থেকে চালানো হয়েছে ১৩টি বিজ্ঞাপন। মুস্তাকীম মাহমুদ রাহীম, নাইম হাসান হৃদয় এবং উমামা ফাতেমা ৫টি করে।
সবচেয়ে বেশি বিজ্ঞাপন চালিয়েছেন যে ৫ প্রার্থী | ||
প্রার্থী | প্যানেল | বিজ্ঞাপনের সংখ্যা |
আরফাত চৌধুরী | স্বতন্ত্র | ১৯ |
অনিদ হাসান | স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য | ১৩ |
মুস্তাকীমনামা | স্বতন্ত্র | ৫ |
উমামা ফাতেমা | স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য | ৫ |
নাইম হাসান হৃদয় | অপরাজেয় ৭১, অদম্য ২৪ | ৫ |
প্রার্থী এবং প্যানেলের বাইরে বিভিন্ন সমর্থককেও দেখা গেছে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে প্রার্থী বা প্যানেলের পক্ষে প্রচারণা চালাতে। সবচেয়ে বেশি, ২১টি বিজ্ঞাপন চালাতে দেখা গেছে ‘আমাদের ডাকসু’ নামের একটি পেজ থেকে। এছাড়া ১১টি বিজ্ঞাপন চালিয়েছে ‘আমার ডাকসু’ নামের পেজ। এরপর ৯টি বিজ্ঞাপন চালানো হয়েছে ‘বিএনপি মিডিয়া সেল’ থেকে। এই তিনটি পেজই ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের পক্ষে প্রচারণা চালিয়েছে। এছাড়া ইসলামী ছাত্র শিবির সমর্থিত “ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট” এর পক্ষে প্রচারণা চালিয়েছে “কিশোরকণ্ঠ ২.০” নামের একটি পেজ। তাদের বিজ্ঞাপনের সংখ্যা ছিল ৪টি।
সবচেয়ে বেশি বিজ্ঞাপন চালানো ৫টি সমর্থক পেজ | ||
পেজের নাম | কার সমর্থনে | বিজ্ঞাপনের সংখ্যা |
আমাদের ডাকসু | ছাত্রদল | ২১ |
আমার ডাকসু | ছাত্রদল | ১১ |
বিএনপি মিডিয়া সেল | ছাত্রদল | ৯ |
কিশোরকণ্ঠ ২.০ | ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট | ৪ |
জিয়া সাইবার ফোর্স | ছাত্রদল | ৩ |
ডাকসুর নির্বাচন আচরণ বিধিমালায় অনলাইন/সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, এ ধরনের প্রচার চালানো যাবে আইনসিদ্ধ ইতিবাচক পদ্ধতিতে। প্রচলিত আইনে নিষিদ্ধ– এমন কোনো কর্মকাণ্ড করা যাবে না। ব্যক্তিগত আক্রমণ, চরিত্র হনন, গুজব বা অসত্য তথ্য প্রচার থেকে বিরত থাকতে হবে।
গবেষণা পদ্ধতি:
এই গবেষণার জন্য ২০২৫ সালের ৭ সেপ্টেম্বর, মেটা অ্যাড লাইব্রেরিতে “ডাকসু” কিওয়ার্ড সার্চ করে সংশ্লিষ্ট সব বিজ্ঞাপন সংগ্রহ করা হয়। প্রাথমিকভাবে প্রাপ্ত সব বিজ্ঞাপন থেকে নির্বাচন করা হয় শুধুমাত্র সেসব বিজ্ঞাপন যেগুলোতে বিভিন্ন প্যানেলের প্রার্থীদের পক্ষে ভোট চেয়ে প্রচার চালানো হয়েছে। বাদ দেওয়া হয়েছে জরিপ, তথ্যভিত্তিক পোস্ট ও ডাকসু নির্বাচন ঘিরে প্রকাশিত সংবাদজাতীয় বিজ্ঞাপন।
প্রতিটি নির্বাচিত বিজ্ঞাপন বিশ্লেষণ করে দেখা হয়েছে কোন বিজ্ঞাপনগুলোতে “পেইড ফর বাই” ডিসক্লেইমার ছিল, কোনগুলোতে ছিল না এবং কোন বিজ্ঞাপনগুলো মেটা সরিয়ে নিয়েছে ডিসক্লেইমার না থাকার জন্য। আরও দেখা হয়েছে বিজ্ঞাপনগুলো কোন প্যানেলের প্রার্থীদের পক্ষে প্রচারণার জন্য চালানো হয়েছে এবং সেগুলো কোন ধরনের পেজ বা প্রোফাইল থেকে প্রচারিত হয়েছে:
- প্রার্থীদের পেজ/প্রোফাইল থেকে
- প্যানেলের পেজ/প্রোফাইল থেকে
- সমর্থক পেজ/প্রোফাইল থেকে