আহমেদ ইয়াসীর আবরার
ইরাকে নারী বেচাকেনার দৃশ্য দাবিতে ছড়াচ্ছে পথনাটকের ভিডিও
আহমেদ ইয়াসীর আবরার
ইরাকের বাজারে নারীদের দাসী হিসেবে বিক্রি করা হচ্ছে- এমন দাবিতে একটি ভিডিও প্রচারিত হতে দেখা যাচ্ছে সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে। তবে যাচাইয়ে দেখা যায় এটি নারীদের বেচাকেনার কোনো বাস্তব দৃশ্য নয়। ভিডিওটি একটি নাট্য পরিবেশনার অংশ।
“ইরাকের বাজারে এভাবেই নারীদের বেচাকেনা হয়েছে দাসী হিসেবে। আলহামদুলিল্লাহ 🤲🤲। পুর্ব পাকিস্থানের বাজারে কবে পাওয়া যাবে?”- (বানান অপরিবর্তিত) এই ক্যাপশন দিয়ে একটি ভিডিও পোস্ট হতে দেখা যাচ্ছে সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে (১, ২, ৩)। ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে একজন বৃদ্ধ লোক সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ানো বোরকা পরিহিতা কয়েকজন নারীর নেকাব তুলে তাদের মুখ দেখছেন এবং আবার নেকাব নামিয়ে রাখছেন। পোস্টের দাবি অনুযায়ী, ইরাকের বাজারে এভাবে নারীদের পণ্য হিসেবে বেচাকেনা করা হচ্ছে।

ভিডিওটির সূত্র যাচাই করতে গেলে ডিসমিসল্যাবের সামনে আসে ভারতীয় তথ্য যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান অল্টনিউজের ২০২৩ সালে প্রকাশিত একটি ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী এই ভিডিওটি ২০২৩ সালে প্রায় একই দাবিতে ছড়িয়েছিল সামাজিক মাধ্যমে। প্রতিবেদনে বলা হয় এটি আরিয়ান রফিক নামের একজন শিল্পীর নাটক। দৃশ্যটি তার ‘দ্য আনহার্ড স্ক্রিমস অব দ্য এজিদখান এঞ্জেলস’ নামের একটি পারফরমেন্স আর্টের দৃশ্য। আরিয়ান রফিক অল্টনিউজকে বলেন, “তিনি ইরাকি কুর্দিস্তানের একজন কুর্দিস শিল্পী। এই ভিডিওটি ইরবিলের বাজারে ধারণ করা হয়েছে। নাটকটি ইয়াজিদি কুর্দিস মেয়েদের নিয়ে করা হয়েছিল যারা ২০১৪ সালে সিরিয়ার মোসেলে এবং রাক্কায় একটি দাস বাজারে ইসলামিক স্টেট (আইসিস) কর্তৃক যৌন নির্যাতনের শিকার এবং বিক্রি হয়েছিল। সেখানে তিনি আরও দেখান, কীভাবে আইসিস জঙ্গিরা হাজার হাজার মেয়েকে গর্ভবতী করে এবং এর ফলে তাদের ভবিষ্যৎ অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে যায়। নাটকটি মূলত ওই নারীদের জীবনের উপর ভিত্তি করে বানানো। এটি ইরবিলের বাজারে পরিবেশন করা হয়েছিল। সেই সময়ে কেউ একজন ভিডিওটি রেকর্ড করে সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ করে।” অর্থাৎ, এই দৃশ্যটি একটি পথনাটকের দৃশ্য।

সশস্ত্র জঙ্গিগোষ্ঠী আইসিসের বিরুদ্ধে ইয়াজিদি নারীদের দাসী হিসেবে বিক্রি করা নিয়ে একাধিক প্রতিবেদন পাওয়া যায়। রয়টার্স ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব জার্নালিজমের একটি গবেষণায় বলা হয় ইয়াজিদিদের বসবাস রয়েছে এমন এলাকা দখলের পর আইসিস ইয়াজিদি নারীদের বন্দি করে এবং তাদের উপর যৌন সহিংসতা চালায়। গবেষণায় বলা হয়, একটি গ্রাম আক্রমণের পর আইসিস সাধারণত পুরুষ ও নারীদের আলাদা করে ফেলে। এরপর হত্যা করে ১৪ বা তার বেশি বয়সী পুরুষদের এবং নারীদের বাজারে বিক্রি করে দেয়, যেখানে কমবয়সী ও সুন্দরী নারীদের দাম হয় সবচেয়ে বেশি। ২০১৪ সালে ‘কম্পেশন ফর কুর্দিস্তান’ নামের একটি গ্রুপের নাটকেও একইভাবে আইসিস কর্তৃক নারীদের দাসী হিসেবে বেচাকেনা করার দৃশ্য পরিবেশিত হয় লন্ডনে। এই নাটক নিয়ে বিবিসির একটি প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়।