আহমেদ ইয়াসীর আবরার
ভিডিওটিতে আক্রমণের শিকার দুই ব্যক্তি মুসলিম নন
আহমেদ ইয়াসীর আবরার
ভারতে হোলি উৎসবের সময়ে একজন মুসলিম ব্যক্তিকে আক্রমণ করার হচ্ছে এমন ইঙ্গিত দিয়ে একটি ভিডিও প্রচারিত হচ্ছে সামাজিক মাধ্যমে। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে দুইব্যক্তিকে কয়েকজন মিলে গাড়ির ভেতরে পেটাচ্ছে। ভিডিওতে গাড়ি ভাঙচুর করতেও দেখা যায়। যাচাইয়ে দেখা যায়, ভারতের দিল্লির দ্বারকা নামক স্থানে সংগঠিত এই সহিংসতার ভুক্তভোগী মুসলিম নয়।
“অসাম্প্রদায়িকতার সবক দেওয়া ভারতে মুসলমানদের অবস্থা কোন পর্যায়ে আছে তার একটি ছোট্ট নমুনা!”- এই ক্যাপশন দিয়ে একটি ভিডিও পোস্ট হতে দেখা যাচ্ছে সামজিক মাধ্যম ফেসবুকে (১, ২, ৩)। পোস্টে কয়েকজনের একটি দল গাড়িতে বসা দুইজন ব্যক্তিকে মারধর এবং গাড়ি ভাঙচুর করতে দেখা যাচ্ছে। ভিডিওর এক পর্যায়ে একজন ভুক্তভোগীকে গাড়ির ভেতর এবং অন্যজনকে গাড়ির বাইরে আহত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়।

ভিডিওটির সূত্র যাচাই করতে কিওয়ার্ড সার্চ করে ডিসমিসল্যাব। ভিডিওটির ১ মিনিট ২৩ সেকেন্ডে একটি নীল সাইনবোর্ড দেখতে পাওয়া যায় যেখানে লেখা ‘কুতুব বিহারে স্বাগতম’। এই সূত্র ধরে ভারতীয় গণমাধ্যম জি নিউজের একটি প্রতিবেদন খুঁজে পায় ডিসমিসল্যাব। প্রতিবেদন থেকে জানা যায় রাজু কুমার এবং তার বন্ধু রাজেশের উপর এই হামলা হয়েছে। একই ঘটনায় ইন্ডিয়া টুডের সংবাদ প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল “ভারতের হোলি রঙ নিয়ে একদল ছেলের মারধরে দুইজন আহত, মামলা দায়ের”। প্রতিবেদনে বলা হয়, ৩৫ বছর বয়সী রাজু কুমার তার বন্ধুর সাথে হোলি উদযাপন করতে দ্বারকার গোয়লা ডেইরির কাছে ছট ঘাট পার্কে গিয়েছিলেন। উদযাপনের সময়, হোলির রঙ দুর্ঘটনাক্রমে একটি ছেলের উপর পড়ে যায়, যার ফলে উভয়ের মধ্যে তীব্র বাকবিতণ্ডা শুরু হয়। রাজু কুমার ছেলেটিকে মারধর করার অভিযোগে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নেয়। কিছুক্ষণ পরে, ছেলেটি তার বন্ধুদের নিয়ে ফিরে আসে এবং রাজু কুমার ও তার বন্ধু রাজেশকে মারধর করতে শুরু করে। মারামারির সময়, আক্রমণকারীরা রাজুর গাড়িটিও ভাঙচুর করে, গাড়ির কাচের জানালা ভেঙে দেয়।”

এই ঘটনা নিয়ে আরও জানতে ডিসমিসল্যাব যোগাযোগ করে ভারতীয় মুক্ত সাংবাদিক কলিম আহমেদের সাথে। কলিমের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট থানার সাথে যোগাযোগ করে ডিসমিসল্যাব নিশ্চিত হতে পেরেছে যে ভুক্তভোগী ব্যক্তিদ্বয় মুসলিম নন। ভুক্তভোগীর করা অভিযোগপত্রে হামলার শিকার ব্যক্তিদের নাম বলা হয়েছে রাজু কুমার এবং রাজেশ পাসওয়ান। অর্থাৎ, এটি কোনো সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা নয় এবং ভুক্তভোগী মুসলিম নন।
প্রসঙ্গত, গত ১৫ মার্চ ভারতের উত্তর প্রদেশে মসজিদ থেকে ফেরার পথে হোলির রঙ মাখানোকে কেন্দ্র করে বিরোধের জের ধরে হামলার শিকার একজন মুসলিম ব্যক্তি মারা যায়।