ফাতেমা তাবাসুম

রিসার্চ অফিসার, ডিসমিসল্যাব
নিহত শিক্ষার্থীদের তালিকা দাবিতে ছড়ানো ছবিটি এআই দিয়ে তৈরি

নিহত শিক্ষার্থীদের তালিকা দাবিতে ছড়ানো ছবিটি এআই দিয়ে তৈরি

ফাতেমা তাবাসুম

রিসার্চ অফিসার, ডিসমিসল্যাব

মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভবনে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহত শিক্ষার্থীদের তালিকা দাবিতে সামাজিক মাধ্যমগুলোতে একটি ছবি শেয়ার হতে দেখা যাচ্ছে। ছবিতে মোট ২০ জন ছেলে ও মেয়েকে স্কুলের নির্ধারিত পোশাকে দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। একই ছবি অভিন্ন দাবিতে শেয়ার হতে দেখা যাচ্ছে ফেসবুক, এক্স ও ইউটিউবে। তবে ডিসমিসল্যাবের যাচাইয়ে দেখা গেছে, ছবিটি তৈরি করা হয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করে। এছাড়া, মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ কর্তৃপক্ষও ছবিটি ভুয়া বলে নিশ্চিত করেছে ডিসমিসল্যাবকে। 

ফেসবুকে গত ২২ জুলাইয়ের একটি ফেসবুক পোস্টে স্কুলের পোশাকে থাকা ২০ জন শিক্ষার্থীর ছবি দেখা যায়। একই ছবি প্লাটফর্মটির বেশকিছু প্রোফাইল (, , , ), পেজগ্রুপ থেকে শেয়ার করা হয়। এছাড়া ছবিটি শেয়ার হতে দেখা যায় এক্স ও ইউটিউবের একাধিক চ্যানেলে (, , )। “আজকের তাজা খবর” নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে পোস্ট করা ছবিটি এখন পর্যন্ত তিনশোর বেশিবার শেয়ার করা হয়েছে। পোস্টটিতে এখন পর্যন্ত প্রায় সাড়ে তিন হাজার প্রতিক্রিয়া এবং সাড়ে চারশোর বেশি মন্তব্য রয়েছে।

ভুয়া দাবিতে ছড়ানো এআই দিয়ে বানানো ছবি

ছড়িয়ে পড়া ছবিটি বিশ্লেষণে দেখা যায়, এর উপরের দিকে একটি বৃত্তাকার লোগো আছে। লোগোটির ঠিক মাঝখানে ইংরেজিতে “২০০১” লেখা ও খোলা বইয়ের চিহ্ন দেখা যায়। আর উপরের দিকে কিছু লেখা থাকলেও সেটি কোনো অর্থবোধক শব্দকে নির্দেশ করে না। লোগোর ঠিক নিচেই বাংলা ও ইংরেজিতে বড় অক্ষরে লেখা– “মাইলস্টন কুল এন্ড কলেজ Milestone School & College”। এর নিচে ২০ জন শিক্ষার্থীর স্কুলের পোশাক পরিহিত স্ট্যাম্পসাইজ ছবি। ছবির একদম নিচে লেখা, “নিহত ছাত্র ছাত্রী” — যা বার্তা দেয় এটি গত ২১ জুলাই রাজধানীর উত্তরায় বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে নিহত শিক্ষার্থীদের তালিকা। 

ছবিটি সত্যতা যাচাই করতে গিয়ে দেখা যায়, এটি ভুয়া এবং এআই দিয়ে বানানো। খালি চোখে পর্যবেক্ষণেই ছবিতে বেশ কয়েকটি অসঙ্গতি ধরা পড়ে। প্রথমত, ছবিতে ব্যবহার করা স্কুলের নামের বানানে ভুল রয়েছে। ইংরেজি অংশে “Milestone School & College” সঠিক থাকলেও বাংলা অংশে “মাইলস্টোন” শব্দটি ভুলভাবে লেখা হয়েছে “মাইলস্টন” হিসেবে। একইভাবে “স্কুল” শব্দের বানান বিকৃত হয়ে “কুল” লেখা আছে। এছাড়া ছবির উপরে থাকা লোগোটি মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের আসল লোগোর সঙ্গে মেলে না। ছড়িয়ে পড়া ছবিতে থাকা লোগোটির নকশা ও গঠন ভিন্ন, এবং ভেতরে লেখা শব্দগুলোও বিকৃত– যেটি কোনো অর্থবহন করে না।  

ছবিতে নিহতের তালিকায় দেখানো শিক্ষার্থীদের মুখের মধ্যেও রয়েছে অসম্ভব রকমের মিল। প্রায় প্রতিটি ছাত্র-ছাত্রীর মুখাবয়ব দেখতে ঠিক একই রকমের– মুখাবয়বের বিন্যাস, ঠোঁটের আকার এবং নাকের গঠন সবই অভিন্ন। এমন চেহারাগত পুনরাবৃত্তি সাধারণত এআইয়ের সাহায্যে বানানো ছবির ক্ষেত্রে দেখা যায়।

ছবিটি সম্পর্কে অধিকতর নিশ্চিত হতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রধান শিক্ষিকা মিসেস খাদিজা আক্তার ও সমন্বয়কারী (কো-অর্ডিনেটর) মিসেস লুৎফুন্নেসা লোপার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, প্রতিষ্ঠান থেকে এমন কোনো তালিকা এখন পর্যন্ত প্রকাশ করা হয়নি। তারা এও নিশ্চিত করেন যে, “ছবিটি ভুয়া।” স্কুলটির সমন্বয়কারী শিক্ষিকা ডিসমিসল্যাবকে বলেন, “এটি আমাদের শিক্ষার্থীদের ছবির তালিকা নয়।” শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির ফেসবুক পেজে কিংবা ওয়েবসাইটেও এ ধরনের কোনো তালিকা প্রকাশ করতে দেখা যায়নি।

  • এআইঅরনট টুল বলছে ছবিটি এআই দিয়ে তৈরির সম্ভাবনা প্রবল
  • ইলুমিনার্টি টুল বলছে ছবিটি এআই দিয়ে তৈরির সম্ভাবনা ৭০ শতাংশ

এছাড়া বিমান দুর্ঘটনায় নিহতের তালিকার এই ছবিটি এআই দিয়ে তৈরি কি না তা যাচাইয়ে ‘ইলুমিনার্টি’ ও ‘এআইঅরনট’ টুলে আলাদাভাবে ছবিটি যাচাই করা হয়। দেখা যায় এই দুটি টুলই বলছে ছবিটি এআই দিয়ে তৈরির সম্ভাবনা প্রবল।

প্রসঙ্গত, রাজধানী ঢাকার উত্তরায় গত ২১ জুলাই দুপুরে মাইলস্টোন স্কুল ও কলেজের একটি ভবনে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩১ জনে। আহত ১৬৫ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন বিভিন্ন হাসপাতালে। উক্ত ঘটনায় আহত, নিহত ও নিখোঁজ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের প্রকৃত সংখ্যা নির্ধারণ করে ঠিকানাসহ তালিকা প্রস্তুতের জন্য মাইলস্টোন কর্তৃপক্ষ অধ্যক্ষ মোহাম্মদ জিয়াউল আলমকে সভাপতি করে একটি ছয় সদস্যের কমিটি গঠন করেছে। 

প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনাটিকে ঘিরে ইতোমধ্যে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে একাধিক এআই-জেনারেটেড ছবি। বিধ্বস্ত বিমানের দাবিতে বেশকিছু এআই জেনারেটেড ছবি ঘটনার দিন ছড়িয়ে পড়লে তা নিয়ে যাচাই প্রতিবেদন প্রকাশ করে ডিসমিসল্যাব।

আরো কিছু লেখা