মিনহাজ আমান
একটি ভুয়া খবরের দেশভ্রমণ
মিনহাজ আমান
পাকিস্তান বাংলাদেশের ত্রাণ সাহায্য প্রত্যাখ্যান করেছে – এমন দাবি করে গত ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে পরবর্তী কয়েক দিনে বাংলাদেশের একাধিক মূলধারার সংবাদমাধ্যমে একটি খবর প্রকাশিত হয়। দেশ রূপান্তর, দৈনিক ইনকিলাব, আরটিভি অনলাইন, নিউজ২৪, ঢাকা পোস্ট, বাংলাভিশন, ঢাকা টাইমস, আমাদের সময়, রাইজিং বিডি এবং ডেইলি অবজারভারসহ ডজনের বেশি সংবাদ সাইটে খবরটি পাওয়া যায়। শুধু আরটিভি অনলাইনের ভেরিফায়েড পেজ থেকে খবরটি পোস্ট করার পর তা ৫০০ বারের বেশি শেয়ার হয়।
পরদিনই বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ইসলামাবাদে কূটনৈতিক সূত্র মারফত বিবিসি বাংলা নিশ্চিত করে যে বাংলাদেশের ত্রাণ পাকিস্তানের প্রত্যাখ্যান করার খবরটি ‘সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন’। এরপর চ্যানেল২৪, রাইজিং বিডি ও আরটিভি অনলাইন সহ কিছু গণমাধ্যম কোনো ব্যাখ্যা ছাড়াই খবরটি সরিয়ে নেয়। (প্রতিটি সংবাদমাধ্যমের নামে ক্লিক করে প্রকাশিত খবরটি পড়া যাবে। নিচের স্লাইডশো-তে দেখুন এসব প্রতিবেদনের স্ক্রিনশট।)
কিন্তু ততক্ষণে খবরটি ইউটিউবসহ বিভিন্ন সামাজিক প্লাটফর্মে ছড়িয়ে পড়ে। তার মধ্যে Ruposhi Bangla Tv নামের একটি ইউটিউব চ্যানেল থেকেই দেখা হয়েছে দুই লক্ষাধিকবার। একই দাবিতে এরকম আরও বিভিন্ন ইউটিউব চ্যানেলে কিছু ভিডিও পোস্ট হতে দেখা গেছে, যা লক্ষাধিক ব্যবহারকারী দেখেছেন।
খবরটি এরপর বলতে গেলে গোটা দক্ষিণ এশিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে এবং গুগল সার্চে দেখা যায়, ভারত ও পাকিস্তানের (এমনকি নেপালেরও) শতাধিক সাইটে এই খবর এবং তার ফলোআপ প্রকাশিত হয়। এবং পরবর্তী দুই সপ্তাহে টুইটার ও ফেসবুকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনায় জড়িয়ে পড়েন ব্যবহারকারীরা।
প্রসঙ্গত, গত জুন থেকে ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে পাকিস্তানে বন্যা দেখা দেয় এবং এতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি অন্তত ১৬শ লোক নিহত হন বলে খবরে জানা যায়। এমন পরিপ্রেক্ষিতে গত ৩০ আগষ্ট, জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাকিস্তানের বন্যার্তদের সাহায্যে এই ত্রাণ পাঠানোর ঘোষণা দেন। পহেলা সেপ্টেম্বর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সেই সাহায্যের জন্য বরাদ্দের ঘোষণা দেয়।
ঠিক তার দু সপ্তাহ পরে সাহায্য ফিরিয়ে দেওয়ার খবরটি প্রকাশ করে বাংলাদেশের গণমাধ্যমগুলো। এসব খবরের বিস্তারিত অংশে বলা হয়, বাংলাদেশ বন্যাদূর্গত পাকিস্তানকে ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা মূল্যের মানবিক ত্রাণ সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছিল, কিন্তু বিশ্বপরিমণ্ডলে ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হতে পারে এমন আশঙ্কায় সেই প্রস্তাব দেশটি প্রত্যাখ্যান করেছে।
এই খবর যাচাই করতে গিয়ে বেরিয়ে আসে, কীভাবে সন্দেহজনক একটি সাইটে প্রকাশ করা সূত্রহীন একটি খবর ভারত ও বাংলাদেশের মূলধারার গণমাধ্যম হয়ে গোটা অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে।
খবরের সূত্র
বাংলাদেশের গণমাধ্যমের এমন ১০টি খবর পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, তাতে সূত্র হিসেবে মূলত তিনটি ভারতীয় সংবাদ প্রতিষ্ঠানের নাম এসেছে: ইন্দো এশিয়ান নিউজ সার্ভিস (আইএএনএস), এশিয়ান নিউজ ইন্টারন্যাশনাল (এএনআই) এবং বিজনেস-স্ট্যান্ডার্ড। বাংলাদেশের বেশিরভাগ পত্রিকাতেই সূত্র হিসেবে আইএএনএসের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
আইএএনএসের পাশাপাশি ভারতীয় বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে উদ্বৃত করেছে দেশ রূপান্তর। আর ডেইলি অবজার্ভারের সূত্র ছিল এএনআই।
বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড তাদের খবরটি প্রকাশ করে সরাসরি আইএএনএসের বরাত দিয়ে। যাচাই করে দেখা গেছে, খবরের বিষয়বস্তু এক হলেও ওয়েবসাইট পোস্টে দেওয়া ডেটলাইন অনুযায়ী এএনআই প্রতিবেদনটি করেছে ১৫ই সেপ্টেম্বর, বাংলাদেশের ঢাকা থেকে; এবং আইএএনএস করেছে ১৪ই সেপ্টেম্বর, পাকিস্তানের ইসলামাবাদ থেকে।
আইএএনএস খবরটি কোথায় পেল
গত ১৪ সেপ্টেম্বর, আইএএনএস যে খবরটি প্রকাশ করে তার শিরোনাম হলো: “Pakistan rejects flood donation from Bangladesh” এবং খবরের সূচনায় এই তথ্যটি দেওয়া হয়েছে স্থানীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের বরাতে। তাদের পুরো প্রতিবেদনে কোনো সরকারি বা প্রত্যক্ষ সূত্র বা কারো নাম ব্যবহার করা হয়নি। গোটা প্রতিবেদনের উপসংহার টানা হয়েছে, মূলত স্থানীয় গণমাধ্যমের বরাতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি কথিত উক্তিকে উদ্ধৃত করে, যা হুবহু নিচে উল্লেখ করা হলো:
“Pakistan Army is reportedly averse to the proposal of aid from Bangladesh as any such relief assistance may undermine Pakistan’s global image,” she said as per local media.
বাংলাদেশের গণমাধ্যমে প্রকাশিত যে ১০টি খবর পর্যালোচনা করা হয়েছে, তাদের মধ্যে দেশ রূপান্তর, আমাদের সময়, ইনকিলাব ও ঢাকা পোস্ট সেই বাক্যটিকে বাংলায় এভাবে অনুবাদ করেছে: “এ ধরনের যেকোনো ত্রাণ সহায়তা পাকিস্তানের বৈশ্বিক ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে পারে আশঙ্কায় পাকিস্তানের সেনাবাহিনী বাংলাদেশের ত্রাণ সহায়তার প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছে বলে জানা গেছে।” তবে বাংলাদেশের কয়েকটি গণমাধ্যম এই বাক্যটি প্রতিবেদন থেকে বাদ দিয়েছে, যদিও সেটি তাদের মূল উৎস আইএএনএসের প্রতিবেদনে ছিল।
কোন স্থানীয় গণমাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীকে উদ্বৃত করা এই বাক্যটি পাওয়া গেছে তার নাম আইএএনএসের প্রতিবেদনে উঠে আসেনি। তাদের প্রতিবেদনটিতে কেবল খামা প্রেস নামের একটি গণমাধ্যম সূত্রের নাম রয়েছে, এবং তাদের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, “এখন দেখার বিষয় বাংলাদেশের এই বন্ধুভাবাপন্ন এবং মানবিক আচরণকে ইসলামাবাদ গ্রহণ করে কিনা।”
খামা ডট কম (khaama.com) নামের ওয়েবসাইটে খবরটি প্রকাশিত হয় ১৪ সেপ্টেম্বর সকাল ৮টা ৫৬ মিনিটে, অর্থাৎ আইএএনএসে প্রকাশের আগে; তা-ও তাদের নিজস্ব সংবাদদাতার স্ব-নামে। এই সংবাদ সংস্থাটি আবার ভারত, পাকিস্তান বা বাংলাদেশের নয়; এটি অবস্থিত আফগানিস্তানের কাবুলে। খামা প্রেস নিউজ এজেন্সি স্থানীয় গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর উদ্বৃতিটি দিয়েছে, কিন্তু তারাও বলেনি কোন দেশের, কোন কোন গণমাধ্যমে এই উদ্বৃতিটি প্রকাশিত হয়েছিল।
প্রধানমন্ত্রীর কথিত এই উক্তিটি প্রথম কোথায় প্রকাশিত হয়েছে, সেটি জানতে বাক্যটিকে হুবহু বসিয়ে গুগলে সার্চ করা হয়। অ্যাডভান্সড ফিল্টার ব্যবহার করে দেখা যায়, গুগলের ইনডেক্স করা সাইটগুলোর মধ্যে ত্রাণ ফিরিয়ে দেওয়ার খবরটি এবং সেই ইংরেজি বাক্যটি প্রথম এসেছে “বাংলাদেশ লাইভ নিউজ” (www.bangladeshlivenews.com) নামের একটি সংবাদ ওয়েবসাইটে; সেপ্টেম্বরের ১২ তারিখে, সন্ধ্যা ছয়টার দিকে।
অর্থাৎ, একটি খবর বাংলাদেশ নাম-সর্বস্ব একটি সাইট থেকে আফগানিস্তানের একটি বার্তা সংস্থা হয়ে, ভারতীয় একটি বার্তা সংস্থার মাধ্যমে ফের বাংলাদেশে এসেছে এবং বাংলাদেশের ডজনখানেক সংবাদ মাধ্যম সেটি ভারতীয় সূত্রের বরাতে প্রায় হুবহু প্রকাশ করেছে।
এএনআই খবরটি কোথায় পেল
আগেই বলা হয়েছে, বাংলাদেশী গণমাধ্যমে দুটি আলাদা সূত্র দিয়ে খবরটি প্রকাশ করা হয়েছে, যাদের মধ্যে প্রথমটি আইএএনএস, এবং দ্বিতীয়টি হলো এএনআই। এএনআই তাদের প্রতিবেদনে সরাসরি ”বাংলাদেশ নিউজ লাইভ”-এর সূত্র ব্যবহার করেছে। অর্থাৎ, আইএএনএস এবং এএনআই; দুটি ভারতীয় সংবাদ সংস্থার ক্ষেত্রেই সংবাদের মূল ভিত্তি হিসেবে যে বাক্যটিকে ব্যবহার করা হয়েছে, তা একই উৎস থেকে আসা।
তবে দুটি সংবাদ সংস্থার প্রকাশ করা খবরে একটি গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য আছে। আইএএনএস “Pakistan Army is reportedly averse to the proposal of aid from Bangladesh as any such relief assistance may undermine Pakistan’s global image,” – বাক্যটিকে লিখেছে স্থানীয় গণমাধ্যমের বরাতে প্রধানমন্ত্রীর উক্তি হিসেবে। কিন্তু এএনআইয়ের খবরে সেই একই বাক্য এসেছে ”খবরে পাওয়া” তথ্য হিসেবে। এএনআই এই বাক্যের পরের অনুচ্ছেদে পাকিস্তানের অনীহার প্রসঙ্গটি টেনেছে বাংলাদেশ লাইভ নিউজের সূত্র দিয়ে।
পরবর্তীতে এএনআইতে প্রকাশিত খবরকে ভিত্তি করে দ্য প্রিন্ট, বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডসহ একাধিক ভারতীয় গণমাধ্যমে বাংলাদেশের সাহায্য প্রত্যাখ্যানের খবরটি প্রকাশিত হয়। গত ২১ সেপ্টেম্বর, পূর্বে প্রকাশিত খবরের জের ধরে তৈরি হওয়া বিতর্ক নিয়ে একটি ফলোআপ প্রতিবেদনও প্রকাশ করে এএনআই, যা আবার বিভিন্ন সংবাদ সাইটে পুনঃপ্রকাশিত হয়।
বাংলাদেশ ও ভারতে প্রকাশিত এই সূত্রহীন খবরটির উপর ভিত্তি করে টুইটারে টুইট করেন তেহরিকে ইনসাফ পাকিস্তানের সৈয়দ জুলফিকার বুখারি নামের এক নেতা। বিষয়টি নিয়ে পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যমেও খবর বেরোয়।
খবরের মূল উৎস যেখানে
খবরটি যাচাই করতে গিয়ে গুগল সার্চের ফলাফল এবং বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর বিশ্লেষণ করে যা পাওয়া যায় তাতে এটি স্পষ্ট হয় যে, বাংলাদেশ লাইভ নিউজে গত ১২ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত প্রতিবেদনটি এই খবরের প্রধান উৎস। তাদের ওয়েবসাইটে এর বাংলা ও ইংরেজি দুটি সংস্করণই পাওয়া যায়, যা একই সময়, অর্থাৎ ৬টা বেজে ৬ মিনিটে প্রকাশিত হয়।
যে বাক্যটিকে ঘিরে এই প্রতিবেদনটির শিরোনাম দেওয়া হয়েছে – যেটি আইএএনএসের প্রতিবেদনে এসেছে প্রধানমন্ত্রীর উক্তি হিসেবে এবং এএনআইতে এসেছে “খবরে পাওয়া” একটি তথ্য হিসেবে – সেটি বাংলাদেশ লাইভ নিউজও একটি তথ্য হিসেবে ব্যবহার করেছে; উক্তি হিসেবে নয়। তাদের বাংলা সংস্করণে কোনো সূত্রের উল্লেখ ছাড়াই লেখা হয়েছে: “পাকিস্তান সেনাবাহিনী বাংলাদেশের কাছ থেকে সাহায্যের প্রস্তাবের বিরোধিতা করছে বলে জানা গেছে, কারণ এই ধরনের কোনো ত্রাণ সহায়তা পাকিস্তানের বৈশ্বিক ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে পারে।”
বাংলাদেশ নিউজ লাইভের প্রতিবেদনে এই বাক্যটিকে উপস্থাপন করা হয়েছে একটি হাইলাইট করা টেক্সট হিসেবে। এই বক্তব্যের সমর্থনে পাকিস্তান বা বাংলাদেশের কোনো সরকারি উৎসের বরাত দেওয়া হয়নি। এই খবরই পরে এএনআইসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে এসেছে। শুধু তাই নয়, বাংলায় সেই একই বাক্য গুগলে সার্চ করে, শুধু এই একটি সাইটেই বাক্যটি পাওয়া গেছে।
বাংলাদেশ লাইভ নিউজ নামের সাইটটিকে ভারতীয় সংবাদ প্রতিষ্ঠানগুলো ‘বাংলাদেশি’ বলে দাবি করলেও ওয়েবসাইটে তাদের কোনো ঠিকানা পাওয়া যায়না। ওয়েবসাইটটি বাংলাদেশি এবং কানাডায় বসবাসরত সাংবাদিকমণ্ডলী কর্তৃক পরিচালিত দাবি করা হলেও তাতে সম্পাদক বা প্রকাশকের নাম নেই। এমনকি এর কোনো প্রতিবেদনেও কোনো প্রতিবেদকের নাম পাওয়া যায়নি।
ওয়েবসাইট থেকে বাংলাদেশ লাইভ নিউজের একটি ফেসবুক পেজের সন্ধান মেলে। পেজটি ২০১৩ সালের ৯ জানুয়ারি খোলা হয়েছে এবং পেজ ট্রান্সপারেন্সিতে গিয়ে দেখা যায় এটির একমাত্র এডমিন ভারতে অবস্থান করেন। পেজটি বিজ্ঞাপন দিয়ে খবর প্রচার করে এবং অ্যাড লাইব্রেরিতে গিয়ে দেখা যায়, বিজ্ঞাপনের মূল্য শোধ করা হয়েছে ভারতীয় রুপিতে।
খবরটি কি সত্য, উক্তিটি কি আসল
বাংলাদেশের গণমাধ্যমে প্রচারের পর খবরটির সত্যতা জানার চেষ্টা করেছিল বিবিসি বাংলা। ঢাকা ও ইসলামাবাদের কূটনৈতিক সূত্র দিয়ে তাদের একটি প্রতিবেদনে জানানো হয়, ত্রাণের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের খবরটি সঠিক নয়। প্রতিবেদনটিতে পাকিস্তানের এক কূটনৈতিক কর্মকর্তা বিবিসিকে নিশ্চিত করে যে, বাংলাদেশ থেকে তারা এখনো আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব পাননি। আর ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বিবিসি বাংলাকে জানান, ত্রাণ বরাদ্দ হলেও প্রস্তাব পাঠানোর বিষয়টি তখনও প্রক্রিয়াধীন। বিবিসি বাংলার সূত্র দিয়ে একই খবর প্রকাশ করেছে ঢাকা ট্রিবিউনও।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যে কথিত উক্তিটি বিভিন্ন প্রতিবেদনে এসেছে, সেটি আনা হয়েছে জাতীয় শোক দিবসের আলোচনায় তিনি পাকিস্তানের জন্য ত্রাণ প্রদানের যে ঘোষণা দিয়েছিলেন, তার প্রেক্ষিতে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলকের ইউটিউব পেজে সেদিনের বক্তব্য সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। প্রায় তিন ঘন্টার সেই ভিডিওতে কথিত উক্তিটি পাওয়া যায়নি।
এমন সংবাদ পেলে কী করবেন?
এএনআই (www.aninews.in) এবং আইএএনএস (ianslive.in) বার্তাসংস্থা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত এবং তাদের খবর অনেক ভারতীয় গণমাধ্যম নিয়মিত প্রকাশ করে থাকে। কিন্তু উভয়ের বিরুদ্ধেই অতীতে ভুয়া খবর প্রকাশের অভিযোগও রয়েছে। যেমন: এর আগে একটি ‘স্যাটায়ার’ আর্টিকেলকে নিউজ রিপোর্ট হিসেবে প্রকাশ করেছিল আইএএনএস, আর এএনআই-এর একাধিক খবরকে বিভ্রান্তিকর হিসেবে চিহ্নিত করেছে অল্টনিউজসহ বেশকিছু ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান। ইউরোপীয় ইউনিয়নের ডিসইনফো ল্যাব এএনআইকে ‘ভুয়া খবর ছড়ানোর একটি বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক’ এর সাথে সম্পর্কিত দাবি করে বিস্তারিত রিপোর্টও প্রকাশ করেছিল ২০২০ সালে।
তাই এ ধরনের সংবাদমাধ্যমের যেকোনো খবরকে তথ্যসূত্র হিসেবে উল্লেখ করার আগে বাংলাদেশি গণমাধ্যমকে আরও বেশি যাচাই-বাছাই করে নেয়া উচিত বলে মনে করেন সাংবাদিক ও সাংবাদিকতার প্রশিক্ষক কুররাতুল আইন তাহমিনা। ডিসমিসল্যাবকে তিনি বলেছেন, “সাংবাদিকতায় কিছু সাধারণ নিয়ম অনুসরণ করা হয়। তার মধ্যে আছে, সন্দেহ করা, যাচাই নিশ্চিত করা এবং বরাত থাকা। যে খবরের কোনো সুনির্দিষ্ট বরাত নেই, সেই খবরটিকে অবশ্যই সন্দেহ করতে হবে, ডাবল চেক করতে হবে। এছাড়া কোন খবরকে সন্দেহ করার মধ্যে এটিও ভাবতে হবে যে, এই খবরটি এখন ছড়াচ্ছে কেন, কোনো দুরভিসন্ধি এখানে আছে কিনা। কেননা যারা এসব ভুয়া তথ্য বা অপতথ্য ছড়ায় তারা জানে কখন খবরটি বাজারে ছাড়লে লোকে সন্দেহ ছাড়াই লুফে নিবে। এক্ষেত্রে আমরা যদি সতর্ক না হই, বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমগুলো আস্থার সংকটে পড়বে এবং সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে মানুষ।”