ডিসমিসল্যাব
নাইজেরিয়ার ফ্যাক্টচেকাররা যেভাবে ভুল তথ্য মোকাবেলায় এআইকে ব্যবহার করছে
ডিসমিসল্যাব
এআই-এর মাধ্যমে দ্রুত সময়ে ভুল তথ্য ছড়ানো অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠা নিয়ে যখন উদ্বেগ বাড়ছে, তখন অনেকেই এই একই প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে একটি বিশুদ্ধ তথ্য পরিবেশের নিশ্চয়তা দেওয়ার চেষ্টা করছে।
গত ২৫ ফেব্রুয়ারি নাইজেরিয়ার ২০২৩ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের আগে যুক্তরাজ্যভিত্তিক ফ্যাক্টচেকিং সংস্থা ফুল ফ্যাক্ট বেশ কয়েকটি আফ্রিকান ফ্যাক্ট চেকিং সংস্থার সঙ্গে যৌথভাবে নির্বাচন নিয়ে কাজ করে। ফুল ফ্যাক্ট তিনটি টুলের সমন্বয়ে কাজ করা একটি এআই স্যুট নিয়ে আসে যার সাহায্যে ফ্যাক্টচেকিং-এর দীর্ঘ কাজ সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যেই সমাপ্ত করা সম্ভব হবে। নাইজেরিয়ার মতো জনবহুল দেশ যেখানে ভুল তথ্যের ব্যাপ্তি অনেক বেশি সেখানে ফ্যাক্ট চেকিংয়ের বিস্তার ঘটাতে আনা হয় এসব টুল।
ফুল ফ্যাক্টের সিনিয়র প্রোডাক্ট ম্যানেজার কেট উইলকিনসন বলেন, “এসব টুলের উদ্দেশ্য ফ্যাক্টচেকার বা তাদের গুরুত্বপূর্ণ কাজের জায়গা দখল করে নেওয়া নয়। বরং, স্বল্প সময়ে, ম্যানুয়াল মনিটরিং ও রিভিউয়িংয়ের কাজে সহায়ক হবে টুলগুলো। এর ফলে ফ্যাক্ট চেকাররা যে কাজগুলোতে সবচেয়ে পারদর্শী যেমন, পাবলিক ডিবেট বা জনবিতর্কের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কী তা বোঝা, বিভিন্ন দাবি অনুসন্ধান, ডেটা পর্যবেক্ষণ, বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা ও প্রাপ্ত ফলাফল তুলে ধরা ইত্যাদি কাজে আরও সময় দিতে পারবেন”।
ফুল ফ্যাক্টের টুল তিনটি হলো- সার্চ, এলার্টস এবং লাইভ ফাংশন- অর্থাৎ, রিয়েল টাইমে কাজের মাধ্যমে যেকোনো দাবি চিহ্নিত করা, একই ভুয়া দাবি বারবার প্রচারিত হলে ফ্যাক্টচেকারদের অ্যালার্ট বা সতর্ক করা এবং টেলিভিশন ও রেডিও সাক্ষাৎকারগুলো মুহূর্তের মধ্যে ট্রান্সক্রিব করে ফেলা (বক্তব্যগুলো ইতোমধ্যে যাচাইকৃত ফ্যাক্ট চেকের তথ্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ কি না, তা যাচাই করা)।
“এর অর্থ দলের সদস্যদের ঘটনা ট্রান্সক্রিবে বা দাবি খোঁজায় সময় দিতে হবে না,” বলেন তিনি।
পরিমাপযোগ্য এই টুলগুলো নিয়ে নাইজেরিয়ার ফ্যাক্টচেকিং সংস্থাগুলোর বিশেষ আগ্রহ ছিল। ২০০ মিলিয়নের বেশি জনগোষ্ঠী নিয়ে জনবহুল (এবং একই রকম ভুয়া তথ্যবহুল) দেশ হওয়ায় তাদের জন্য এই বিপুল পরিমাণের ভুয়া তথ্যের বিরুদ্ধে কাজ করা কখনো কখনো বেশ কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।
দেশটিতে জাল নথি, মহাজাগতিক নানান ঘটনার কারণে আবহাওয়ার ওপর প্রভাব থেকে শুরু করে নির্বাচনী যোগসাজশের মতো নানান বিষয়ে ভুয়া দাবি দেখা যায়। নাইজেরিয়ান একজন ফ্যাক্টচেকার জানান, লেবার দলের রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী পিটার ওবি এএফপির একটি ফ্যাক্টচেক সামনে আনলে ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি হয়।
আফ্রিকা চেকের সম্পাদক ডেভিড আজিকোবি বলেন, “রাজনীতিবিদরা বিভিন্ন রাজনৈতিক দাবির সত্যতা যাচাইয়ে ফ্যাক্ট-চেকারদের প্রচেষ্টা প্রতিহত করার চেষ্টা করেন। বহুবার খণ্ডন করা হয়েছে এমন দাবিও অনেকে আরও দ্বিগুণ উদ্যোগী হয়ে প্রচারের চেষ্টা করেন। এমনকি এমন ঘটনাও আছে যেখানে রাজনীতিবিদ ও তাদের সমর্থকরা ফ্যাক্ট চেকারদের দমাতে যাচাইয়ে ত্রুটি- পক্ষপাতদুষ্টতার অভিযোগ তুলে মিডিয়ার ওপর চড়াও হয়।”
“আফ্রিকা চেকের সহায়তায় ডেভলপ করা এই এআই টুলগুলোর সাহায্যে একইসঙ্গে বিভিন্ন সংবাদ ওয়েবসাইট, সামাজিক মাধ্যমের পেজ মনিটরিং এবং লাইভ টিভি বা রেডিও ট্রান্সক্রিব থেকে ফ্যাক্টচেক করার মতো দাবি বের করা যায়। এর মাধ্যমে নির্বাচন সম্পর্কিত ভুয়া দাবি ও বিভ্রান্তিকর তথ্যের বিস্তার ও প্রভাব উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করার বিষয়টি আরও সুসংঘবদ্ধ হয়েছে,” বলেন আজিকোবি।
দক্ষিণ আফ্রিকার স্বাধীন ফ্যাক্ট চেকিং অর্গানাইজেশন দুবাওয়ার এডিটর কেমি বুশারি বলেন, “ফুল ফ্যাক্টের এআই নাইজেরিয়ার ২০২৩ সালের নির্বাচনের সময় বেশ সাহায্য করেছে। দাবি অনুসন্ধানে এবং যারা ক্রমাগত মিথ্যা ছড়ায় তাদের শনাক্ত করতে আমি এই টুলগুলো ব্যবহার করেছি। টুলগুলোর সমন্বিত ব্যবহার রাজনীতিবিদদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে এবং মানুষের কাছে নির্বাচন সম্পর্কিত সঠিক তথ্য পৌঁছে দিতে আমাদের ফ্যাক্ট চেকারদের সহায়তা করবে।”
ফুল ফ্যাক্টের প্রতিনিধিরা জানান এই প্রকল্পে গুগলের দুই মিলিয়ন ইউএস ডলারের অর্থায়ন রয়েছে।
“এই অনুদান লাভের আগে ফুল ফ্যাক্ট প্রতিদিন প্রায় ১০০টি দাবি শনাক্ত করত,” বলেন উইলকিনসন। “গুগলের সহায়তায় এআই টুলসগুলোর মাধ্যমে এখন আমরা প্রতিদিন এক লাখ দাবি শনাক্ত ও পর্যালোচনা করতে পারি। অর্থাৎ আগের চেয়ে এক হাজার গুণ বেশি”।
২০২৩ সালের নির্বাচনের আগে নাইজেরিয়ার রাজনীতিবিদদের উদ্দেশ্যে লেখা একটি খোলা চিঠিতে ফ্যাক্ট-চেকাররা বলেন, “মিডিয়া, বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়া, বিভিন্ন রাজনৈতিক ও অন্যান্য এজেন্ডা ছড়াতে প্রচুর তথ্যে ভরপুর। এসব দাবি ও পাল্টা দাবির মধ্যে কিছু কিছু ধর্মীয় ও জাতিগত বিভিন্ন বক্তব্য আরও জোরালোভাবে প্রচারের মাধ্যমে নাইজেরিয়ানদের মধ্যে অবিশ্বাসের সৃষ্টি হয়”।
চিঠিটিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে রয়েছে আফ্রিকার জাতীয় ও আঞ্চলিক বিভিন্ন ফ্যাক্টচেকিং সংস্থা, যেমন: আফ্রিকাচেক, দুবাওয়া, ফ্যাক্টচেকহাব, ফ্যাক্টসম্যাটারএনজি, ডেইলি ট্রাস্ট, দ্য ক্যাবল, ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ইনভেস্টিগেটিভ রিপোর্টিং এবং সেন্টার ফর জার্নালিজম ইনোভেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট।
উইলকিনসন বলেন এআই টুলগুলো তৈরির সঙ্গে আফ্রিকা চেক জড়িত ছিল। তবে এর অংশগ্রহণ পশ্চিম আফ্রিকা ভিত্তিক ফ্যাক্ট-চেকিং গ্রুপ দুবাওয়া এবং ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ইনভেস্টিগেটিভ রিপোর্টিংয়ের ফ্যাক্টচেক গ্রুপ ফ্যাক্টচেকহাব পর্যন্ত সম্প্রসারিত হয়েছে।
উইলকিনসন বলেন, “নাইজেরিয়ার ফ্যাক্ট-চেকিং দলগুলো থেকে আমরা ব্যাপক সহায়তা ও আগ্রহ দেখতে পেয়েছি। আমরা ২৩ জন নতুন ফ্যাক্ট-চেকারকে এর প্রশিক্ষণ দিয়েছি। এখন পর্যন্ত তারা (ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত) নির্বাচন সংক্রান্ত ৩০টির বেশি যাচাইযোগ্য দাবি শনাক্ত করতে পেরেছে”।
এই প্রতিবেদনটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল পয়েন্টার-এ। অনুমতি নিয়ে এখানে অনুবাদ ও পুনঃপ্রকাশ করা হয়েছে। বাংলায় অনুবাদ করেছেন তামারা ইয়াসমীন তমা।