শবনম আজিমি

অনলাইনে পণ্যের রিভিউর আসল-নকল চেনা
This article is more than 2 years old

অনলাইনে পণ্যের রিভিউর আসল-নকল চেনা

শবনম আজিমি

আমাদের সম্প্রতি প্রকাশিত একটি গবেষণা থেকে দেখা গেছে, যে ভোক্তারা ব্যক্তিত্বের দিক থেকে উন্মুক্ততার ক্ষেত্রে বেশি স্কোর করেন – যেমন নতুন রোমাঞ্চ/অ্যাডভেঞ্চার ও বুদ্ধিবৃত্তিক কৌতুহলের প্রতি উন্মুক্ত থাকেন – তারা অন্যান্য ধরনের ব্যক্তিত্ব-সম্পন্ন ভোক্তাদের তুলনায় বেশি ভুয়া রিভিউ চিহ্নিত করতে পারেন। অপরদিকে এক্সট্রোভার্ট/বহির্মুখী ব্যক্তিত্বের ভোক্তাদের ভুয়া রিভিউ চিহ্নিত করতে বেশ বেগ পেতে হয়।

এই সিদ্ধান্তগুলোতে পৌঁছানোর জন্য, আমরা শিকাগোর ১৬০০ হোটেল রিভিউয়ের একটি স্বতন্ত্র ডেটাসেট সংকলন করেছি, সেগুলো চিহ্নিত করেছি নকল বা আসল হিসেবে, ২০১১২০১৩ সালে প্রকাশিত পিয়ার রিভিউড গবেষণার জন্য যেটি সংকলন করেছিলেন এ. আই. প্রকৌশলী ও গবেষক মেইল ওট ও তাঁর দল।  

ওট ও তাঁর সহকর্মীরা সত্যি রিভিউ সংগ্রহ করেছেন ট্রিপঅ্যাডভাইজর, হোটেল ডট কম ও এক্সপিডিয়ার মতো ট্রাভেল রিভিউ ওয়েবসাইট থেকে, যেখানে ভুয়া রিভিউয়ের হার ছিল বেশ কম। তারা ভুয়া রিভিউগুলো সংগ্রহ করেছে অ্যামাজন মেকানিক্যাল টার্ক ব্যবহার করে মানুষ নিয়োগের মাধ্যমে, যেখানে নিয়োগকৃতদের এমনভাবে ভুয়া হোটেল রিভিউ লিখতে বলা হয়, যেটি সত্যের মতো শোনাবে।

এরপর আমরাও এভাবে অ্যামাজন মেকানিক্যাল টার্ক ব্যবহার করে ৪০০ জনকে নিয়োগ দেই। এবং কল্পনা করতে বলি যে, শিকাগোতে একটি সফরের জন্য তাদের হোটেল নির্বাচন করতে হবে। প্রত্যেক অংশগ্রহণকারীর জন্য একটি হোটেল নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয় এবং সেই হোটেল সম্পর্কে ৮টি রিভিউ পড়তে বলা হয়। তাদেরকে সনাক্ত করতে হবে যে, কোনটি আসল আর কোনটি ভুয়া এবং ব্যাখ্যা করতে হবে কেন সেগুলো আসল বা ভুয়া মনে হচ্ছে। এই ৮টি রিভিউয়ের মধ্যে ছিল ২টি ইতিবাচক ভুয়া রিভিউ, ২টি ইতিবাচক আসল রিভিউ এবং ২টি করে নেতিবাচক ভুয়া ও আসল রিভিউ। এগুলো রাখা হয়েছিল এলোমেলোভাবে। 

অংশগ্রহণকারীরা এরপর আমাদের কিছু প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন, যেগুলোর মাধ্যমে আমরা তাদেরকে পাঁচটি বড় ব্যক্তিত্বের সাপেক্ষে বিবেচনা করতে পেরেছি: বহির্মূখী ব্যক্তিত্ব, সম্মতিসূচক ব্যক্তিত্ব, উন্মুক্ত চিন্তার ব্যক্তিত্ব, সচেতন ব্যক্তিত্ব ও স্নায়বিক ব্যক্তিত্ব। 

সামগ্রিকভাবে, আমরা দেখেছি যে, ভোক্তারা সাধারণত ইতিবাচক রিভিউয়ের তুলনায় নেতিবাচক রিভিউগুলো বেশি বিশ্বাস করেন। একটি অনলাইন রিভিউ আসল কিনা– তা মূল্যায়ন করতে গিয়ে ভোক্তারা প্রায়ই মিথ্যা হতে পারে– এমন নেতিবাচক রিভিউয়ের সংখ্যাকে ছোট করে দেখেন, অন্যদিকে ধরে নেন যে, কিছু ইতিবাচক রিভিউ মিথ্যা হতে পারে।

আমরা যখন অংশগ্রহণকারীদের কাছে জানতে চাই যে, কেন তারা নেতিবাচক রিভিউ বিশ্বাসযোগ্য বলে ভেবেছেন, তখন আমরা দেখি: তারা এমনটি বিবেচনাতে নেননি যে, কেউ একটি ব্যবসার ক্ষতি করার জন্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে একটি রিভিউ লিখতে পারে– যেমন, শত্রুভাবাপন্ন প্রতিপক্ষ বা রাগান্বিত কোনো ভোক্তা। 

আমরা আরও দেখেছি যে, লেখার ধরন, দৈর্ঘ্য ও প্রাঞ্জলতা রিভিউ সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রভাবিত করে। গবেষণায় অংশগ্রহণকারীরা সেসব ইতিবাচক রিভিউ বেশি বিশ্বাসযোগ্য মনে করেছে, যেগুলোর বাক্য ছোট ছিল, এবং সেসব নেতিবাচক রিভিউ বেশি বিশ্বাস করেছে, যেগুলোর বাক্য বড় ছিল। 

কম আবেগযুক্ত ছোট নেতিবাচক রিভিউগুলোও বেশি বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়েছে।

ব্যক্তিত্বের বিবেচনায় বলতে গেলে, যারা উন্মুক্ত চিন্তার অধিকারী ছিলেন তারা ভুয়া রিভিউ চিহ্নিত করায় অধিক সফল হন। অপরদিকে বহির্মুখী ব্যক্তিত্বের অংশগ্রহণকারীরা ভুয়া রিভিউ চিহ্নিত করতে ঠিক ততটাই ব্যর্থ হয়েছেন। তবে এই সব কিছুই ছিল শুধু ইতিবাচক রিভিউয়ের ক্ষেত্রে। ভুয়া নেতিবাচক রিভিউ খুঁজে বের করার ক্ষেত্রে সব ধরনের ব্যক্তিত্বের মানুষই বেশ বাজেভাবে ব্যর্থ হয়েছেন।

বিষয়টি কেন গুরুত্বপূর্ণ

কোনো কিছু কেনার সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে এই অনলাইন রিভিউগুলোকেই ভোক্তারা সবচেয়ে বিশ্বাসযোগ্য সুত্রের একটি বলে মনে করে থাকেন। তবে, যুক্তরাজ্যের ভোক্তা বিষয়ক শীর্ষ সংগঠন, দ্য হুইচ?-এর ২০১৯ সালের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, অ্যামাজনের মতো জনপ্রিয় ওয়েবসাইটের অনেক রিভিউই ভুয়া হয়ে থাকে।

প্রকৃতপক্ষে পণ্য বা সেবা কেনার সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে ভোক্তারা বরাবরই ভুয়া রিভিউ চিহ্নিত করতে ব্যর্থ হয়ে থাকেন।

আমাদের এই গবেষণা, রিভিউ মুল্যায়নে ভোক্তাদের সচেতন করে তুলতে ভূমিকা রাখতে পারে। বিশেষ করে নেতিবাচক ভুয়া রিভিউ শনাক্তের ক্ষেত্রে।

এখনো যা জানা যায়নি

ভোক্তারা কীভাবে অনলাইন রিভিউ বিশ্বাস করেন– সে বিষয়ে আমাদের গবেষণা, রিভিউগুলোর দৈর্ঘ্য, শব্দচয়ন, গঠন এমনকি ভোক্তাদের ব্যক্তিত্বের মতো কিছু বিষয় সনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু আমরা এখনও জানি না, কেন এই বৈশিষ্ট্যগুলো ভোক্তাদের মধ্যে বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরি করে বা কেন ইতিবাচক ও নেতিবাচক রিভিউ বিশ্বাসের ক্ষেত্রে তারতম্য দেখা যায়।


লেখাটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল দ্য কনভারসেশন-এ। ক্রিয়েটিভ কমন্স লাইসেন্সের অধীনে লেখাটি পুনরায় এখানে প্রকাশ করা হলো। বাংলায় অনুবাদ করেছেন মাহমুদুল রিফাত।

আরো কিছু লেখা