ইয়ান ফক্স

পেজের নামে “ফ্যাক্ট” থাকলে ফ্যাক্টচেক করবেন যে কারণে
This article is more than 2 years old

পেজের নামে “ফ্যাক্ট” থাকলে ফ্যাক্টচেক করবেন যে কারণে

ইয়ান ফক্স

ইনস্টাগ্রামে কি সম্প্রতি এমন কিছু অ্যাকাউন্ট লক্ষ্য করেছেন, যেগুলোতে “ফ্যাক্ট” শব্দটি লেখা আছে? @fact, @factsuntold, @blowingfact, @factsdailyy– এমন শত শত অ্যাকাউন্ট থেকে নিয়মিত পোস্ট করা হয়। এবং তাদের ফলোয়ার সংখ্যাও বিশাল অঙ্কের।

পোস্টগুলোতে সাধারণত জনপ্রিয় সংস্কৃতি, খেলাধুলা বা ইতিহাস বিষয়ে একটি ছবি বা ভিডিও থাকে এবং নিচে ছোট বাক্যে দেওয়া থাকে উদ্ভট একটি তথ্য। নিচে দেখুন এমন কিছু দাবির নমুনা:

  • “জানুয়ারিতে জন্ম নেয়া শিশুরা সাধারণত ধনী হয়ে থাকে”
  • “কেয়ামতের জন্য একটি ভল্ট তৈরি করেছে ওরিও”
  • “সুইজারল্যান্ডে, অতি-বিরক্তিকর হওয়ার কারণে আপনার নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হতে পারে”

কিন্তু এই অদ্ভুত “তথ্যগুলোর” কি আদৌ কোনো সত্যতা আছে? আমরা সেগুলো যাচাই করেছি এভাবে।

জরিপের ফল

সাম্প্রতিক একটি জরিপ থেকে দেখা যায়, এখন অর্ধেকেরও বেশি কিশোর-কিশোরীর সংবাদ পাওয়ার প্রধান উৎস সামাজিক মাধ্যম। দ্যা কমন সেন্স মিডিয়ার জরিপটি জানাচ্ছে, ৫৪% কিশোর-কিশোরী সপ্তাহে অন্তত কয়েকবার সংবাদ গ্রহণ করে ইনস্টাগ্রাম, ফেসবুক ও টুইটারের মতো সামাজিক প্ল্যাটফর্মগুলো থেকে, এবং ৫০% সংবাদ পায় ইউটিউব থেকে।

দুর্ভাগ্যজনকভাবে, প্রথাগত সংবাদ সাইটগুলোর বিপরীতে কোনো “সংবাদ” যখন সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট থেকে আসে, তখন যাচাই করা কঠিন হয়ে যায় যে কোনটি প্রকৃত তথ্য আর কোনটি বানোয়াট। উদাহরণস্বরূপ, ৭২% কিশোর-কিশোরী নিয়মিত ইনস্টাগ্রাম ব্যবহার করে থাকে। প্রাথমিকভাবে বন্ধুদের সঙ্গে ছবি শেয়ারের উদ্দেশ্যে তৈরি করা এই সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মটি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিস্তার ঘটিয়েছে পাবলিক পেজগুলোর প্রসার ঘটানোর জন্য। এখন, পোস্টগুলোর প্রচার-প্রসার হচ্ছে এক্সপ্লোর পেজ অপশন এবং এমনকি ব্যবহারকারীদের নিজস্ব ফিডের মাধ্যমেও। ফলে আপনি অনেককে ফলো না করলেও তাদের পোস্ট দেখতে পাবেন। 

দুটি তথ্য যাচাই

আমি আগে যে ফ্যাক্ট-পেজগুলোর কথা উল্লেখ করেছিলাম, সেখান থেকে দুইটি পোস্টের দিকে এবার নজর দেওয়া যাক।

“@notcommonfacts” নামের একটি অ্যাকাউন্ট থেকে দাবি করা হয়েছে যে, “জিহ্বা মানুষের শরীরের সবচেয়ে শক্তিশালী মাংসপেশি।” সেই পোস্টে কেবল এক নারীর জিহ্বা বের করা ছবি ছাড়া আর কিছুই ছিল না। এই একটি পোস্টেই ১০ হাজারের বেশি লাইক আছে। 

এর সত্যতা যাচাই করতে গিয়ে আমি গুগল কিওয়ার্ড সার্চ করি এবং সায়েন্টিফিক আমেরিকানের একটি প্রবন্ধ পাই। সেখানে বলা হয়েছে, এই মিথটি চালু হয়েছিল কারণ অনেক মানুষ ভেবে অবাক হতো যে কেন তাদের জিহ্বা কখনও ক্লান্ত হয় না। এর কারণ জিহ্বা আসলে তৈরি হয়েছে ৮টি ভিন্ন ভিন্ন মাংসপেশীর সংমিশ্রণে।

তবে “সবচেয়ে শক্তিশালী” শব্দটি কিছুটা সাবজেক্টিভ, কারণ পেশীশক্তি ও নড়নক্ষমতার মতো বিষয়গুলোও শরীরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। যেটিই হোক না কেন, প্রবন্ধটি নিশ্চিত করে যে জিহ্বা কোনোভাবেই সবচেয়ে শক্তিশালী নয়। 

আমরা এই দাবিটিকে যুক্তিসিদ্ধ নয় বলে বিবেচনা করব। কিন্তু এই সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর জন্য আপনাকে ইনস্টাগ্রামের বাইরে গিয়ে বাড়তি কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে। 

আবার এই ধরনের পেজগুলোর সব তথ্যও সব সময় ভুল হয় না।

“@blowingfact,” নামের আরেকটি অ্যাকাউন্টের ফলোয়ার সংখ্যা ৭ মিলিয়নের মতো। এখানে একটি পোস্টে বলা হয়েছে, ১৯৭৪ সালের আগপর্যন্ত আমেরিকার শিকাগোতে কুৎসিত চেহারার মানুষদের জনসম্মুখে আসা অবৈধ ছিল। এই পোস্টটিতে ৮০ হাজারের বেশি লাইক আছে। তবে এই দাবির ক্ষেত্রে কিছু সতর্কচিহ্ন লক্ষ্যনীয়। কারণ, এই পোস্টে কোনো লিংক, খবর বা প্রেক্ষাপট ছিল না।

কিওয়ার্ড সার্চের পর, আমি স্নোপসের একটি প্রবন্ধ খুঁজে পাই যেটি আশ্চর্যজনকভাবে এই দাবিটিকে সত্য হিসেবে ঘোষণা করেছে। সেই প্রবন্ধের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে যে, ১৮০০ শতকের শেষ দিকে, শহরগুলোর রাস্তা ভিক্ষুকমুক্ত রাখার জন্য একটি অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছিল, যেটি পরিচিতি পায় “আগলি ল” নামে। 

স্নোপসের ঐ প্রবন্ধটিতে আরো বলা হয়, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর যখন সৈনিকেরা আঘাত ও অঙ্গহানির শিকার হয়ে দেশে ফিরতে শুরু করেন, তখন আইনটির প্রয়োগ দ্রুত বন্ধ করে দেওয়া হয়। যদিও সেটি শিকাগোর আইন হিসেবে টিকে ছিল ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত, ঠিক যেমনটি পোস্টটিতে দাবি করা হয়েছিল।

এই পোস্টটিতে প্রয়োজনীয় প্রেক্ষাপট যুক্ত করা হয়নি বলে রায় দিয়েছি আমরা। 

উভয় সংকট

অদ্ভুতুড়ে, কখনো কখনো অস্বাভাবিক কন্টেন্ট এবং উদ্ভট ছবি ও গ্রাফিক্সের কারণে এই “তথ্য” সংবলিত পোস্টগুলো ইনস্টাগ্রামে খুবই আকর্ষণীয় হয়ে থাকে। এই ধরনের জিনিসগুলো আপনার মস্তিস্কে আটকে যায়। এছাড়াও, অন্য যেকোনো সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের মতো, ইনস্টাগ্রামের অ্যালগরিদমও এনগেজমেন্টকে প্রাধান্য দেয়, যার অর্থ এটি এ ধরনের আশ্চর্যজনক কন্টেন্টগুলোই বেশি সামনে নিয়ে আসবে। ফলে এটি হয়ে দাঁড়ায় একটি দ্বিমুখী আঘাত, যা আপনার মস্তিস্কের যৌক্তিক চিন্তা ক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করে।

কিছু পরামর্শ

সারকথা হলো, এসব “তথ্য” সংবলিত পেজগুলোতে কিছু পোস্ট থাকে পুরোপুরি মিথ্যা, কিছু থাকে সত্যি, এবং তাদের দেওয়া সব তথ্যই যে মিসইনফর্মেশন এমনটাও নয়। ফলে, এখানে আপনি কিছু বিষয়ের দিকে নজর দিতে পারেন, যেগুলো আপনাকে এসব প্রশ্নবিদ্ধ “ফ্যাক্ট” পেজগুলো সনাক্ত করতে সাহায্য করবে:

  • প্রায় ক্ষেত্রেই “ফ্যাক্ট” শব্দটি থাকে এই পেজগুলোর ইউজারনেমে।
  • এই অ্যাকাউন্টগুলো অর্থ উপার্জন করে পণ্যের প্রচার, ফলোয়ার বিক্রি বা ক্লিক-ভিত্তিক বিজ্ঞাপনী মুনাফার মাধ্যমে। অনলাইনে অসত্য তথ্য ছড়ানোর অন্যতম বড় প্রণোদনা হচ্ছে অর্থ! যেমন, @factsuntold পেজটি তাদের বায়োতেই লিখে রেখেছে: “Grow your account. Paid promotion available”. অর্থাৎ আপনি অর্থের বিনিময়ে এই পেজে নিজ পণ্যের বা অ্যাকাউন্টের বিজ্ঞাপন দিতে ও প্রমোশন করতে পারবেন। ফলে সাধারণ একটি পরামর্শ হলো: সবসময় পেজের বায়ো লক্ষ্য করুন।
  • সর্বশেষ ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যনীয় বিষয়টি হলো: এই পেজগুলো তাদের কন্টেন্টের সঙ্গে কোনো তথ্যসূত্র বা লিংক পোস্ট করে না।

এসব “ফ্যাক্ট” পেজের বেশিরভাগ পোস্ট ক্ষতিকর না হলেও, বিষয়টি সব সময় তেমন থাকে না। এবং সেগুলোর সত্যতা যাচাইয়ের পদ্ধতি-কৌশল জানাটা পাঠকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। 


এই প্রতিবেদনটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল পয়েন্টার-এ। অনুমতি নিয়ে এখানে অনুবাদ ও পুনঃপ্রকাশ করা হয়েছে। বাংলায় অনুবাদ করেছেন মাহমুদুল রিফাত।

আরো কিছু লেখা