ডিসমিসল্যাব

অফিসিয়াল ডেস্ক
যেভাবে প্রেক্ষাপটহীন বা বানোয়াট ভিডিও শনাক্ত করবেন
This article is more than 1 year old

যেভাবে প্রেক্ষাপটহীন বা বানোয়াট ভিডিও শনাক্ত করবেন

ডিসমিসল্যাব

অফিসিয়াল ডেস্ক

অনলাইনে ভুয়া কিংবা বিভ্রান্তিকর ভিডিওগুলো বিভিন্নভাবে ছড়ায়। যেমন, ইন্সটাগ্রামে পোস্ট করা এই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে এক নারী গোপন একটি দরজা খুলছেন, যেটি চলে গেছে ভূগর্ভস্থ একটি থিয়েটারে। 

ক্যাপশনে লেখা, “মানুষ এগুলো দেখার আগে ষড়যন্ত্র তত্ত্ব বলে উড়িয়ে দেয়…মানুষ যত দ্রুত জেগে উঠবে, দুঃস্বপ্নও ততো তাড়াতাড়ি শেষ হবে”।

সেই ইন্সটাগ্রাম ব্যবহারকারীর মতে, এটি কোনো সাধারণ থিয়েটার নয়। এটা এমন একটি জায়গা যেখানে “অভিজাত ব্যক্তিরা শিশুদের বলি দিয়ে থাকে”। কিন্তু এই থিয়েটারের গল্পটি কি আসলেই সত্যি নাকি এর পিছে আরও কিছু আছে?

চলুন, জেনে নিই: কীভাবে আমরা ভিডিওটি ফ্যাক্ট-চেক করেছি। 

শুরু করুন কি-ওয়ার্ড খোঁজা দিয়ে

তথ্য যাচাইয়ের কাজটি শুরু করতে হয় দ্রুত ও সহজ-সাধারণভাবে। এটা শুধু কিছু কি-ওয়ার্ড সার্চও হতে পারে। ভিডিওটি ফ্যাক্ট চেক করতে আমরা প্রথমেই “শিশু বলিদানের থিয়েটার” লিখে সার্চ করি। সার্চে অনেকগুলো ফলাফল আসে, যার মধ্যে অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়।

এপি একটি বিশ্বস্ত সংবাদ সংস্থা। তাই আমি সেখানেই ঢুকি। এপি-র তথ্য অনুযায়ী, ব্যবহারকারী সামাজিক মাধ্যমে ভিডিওটির যে চিত্র তুলে ধরেছে সেখানে পুরো গল্পটা উঠে আসেনি।

এপি লিখেছে, “”ভিডিওর থিয়েটারের নাম টেট্রো ডোনাফুগাটা। এটি সিসিলির রাগুসায় এক দুর্গের ভেতর নির্মিত একটি ভেন্যু, যেখানে সংগীত ও নাটক পরিবেশিত হয়।”

এখানে আরও বলা হয়, গোপন দরজা নিয়ে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। “থিয়েটারের সেন্ট্রাল বক্সে ঢুকতে এই দরজা ব্যবহার হয়”।

প্রাথমিক সূত্র ব্যবহার করুন

উপযুক্ত কিওয়ার্ড সার্চের পরে আমি যা জানতে চাচ্ছিলাম তার বেশিরভাগই পেয়ে যাই। কিন্তু আমি সেখানেই থেমে যাইনি। আরেকটি ট্যাব খুলে থিয়েটারের নাম ‘টেট্রো ডোনাফুগাটা’ লিখে সার্চ দিই এবং এর ওয়েবসাইট ঘাটাঘাটি করি। তারপর ইন্সটাগ্রামের সেই ভিডিও-র সঙ্গে সেখানে পাওয়া ছবি-ভিডিওগুলো মিলিয়ে নিশ্চিত হই যে দুটি ভেন্যুই আসলে এক।

রেটিং

সত্যি নয়। “অভিজাতদের শিশু বলিদানের” জায়গা দাবি করে পোস্ট করা ভিডিওটি সম্পাদিত না হলেও এর সঙ্গে তারা যে তথ্য শেয়ার করেছে– সেটি ভুয়া।

বিভ্রান্তিকর ভিডিও চিহ্নিত করা

মিডিয়াওয়াইজের এক গবেষণায় দেখা যায়, এক-তৃতীয়াংশের বেশি কিশোর-কিশোরী মনে করে যে, তারা প্রতিদিনই অনলাইনে মিথ্যা তথ্য দেখে থাকে। তবে মাত্র ১২ শতাংশ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ভুয়া তথ্য সনাক্ত করতে পারার দাবি করে – যেমনটি আমরা এই ভিডিওটির ক্ষেত্রে করেছি।

ইন্টারনেটে বিভ্রান্তিকর ভিডিওগুলো নানাভাবে ছড়াতে পারে। ওয়াশিংটন পোস্টের একটি প্রতিবেদনে এগুলোকে তিনটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছে।

  • প্রথম বিষয়টি হলো, প্রেক্ষাপটের উল্লেখ না থাকা। যেমন থিয়েটারের এই ভিডিওটিতে ফুটেজ অপরিবর্তিত থাকলেও এরসঙ্গে জুড়ে দেওয়া ভুয়া তথ্য দর্শককে বিভ্রান্ত করে।
  • দ্বিতীয়টি হলো, “প্রতারণামূলক সম্পাদনা”, যেখানে সম্পাদনার মাধ্যমে ফুটেজে পরিবর্তন আনা হয় বা কিছু অংশ ফেলে দেওয়া হয়। 
  • তৃতীয়টি হলো, “ক্ষতিকর রূপান্তর”। চিন্তা করুন ডিপফেকের কথা, যেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে ভুয়া ছবি বা অডিও বানানো হয়। এই ভিডিওগুলো বানোয়াট হিসেবে বর্ণনা করেছে ওয়াশিংটন পোস্ট।

আমরা এরই মধ্যে একটি প্রেক্ষাপটবিহীন ভিডিও দেখেছি। কিন্তু প্রতারণামূলক সম্পাদনা বা ক্ষতিকর উপায়ে রূপান্তর করা ভিডিওগুলো কেমন হয়?

প্রতারণামূলক সম্পাদনা করা ভিডিওর আদর্শ উদাহরণ হতে পারে এই টুইটার ভিডিও, যেখানে দেখা যাচ্ছে, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কাছে থাকা গোপনীয় নথিগুলোর বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে হুট করে প্রেস রুম থেকে বেরিয়ে যাচ্ছেন হোয়াইট হাউজের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারিন জ্য-পিয়ের। দেখে মনে হবে, তিনি প্রতিবেদকের প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যাচ্ছেন।

এই ভিডিওটি আসল কি না, তা জানতে আমি “হোয়াইট হাউজ ব্রিফিংয়ের ট্রান্সক্রিপ্ট” লিখে সার্চ দিই এবং একটি সাইটের সন্ধান পাই যেখানে হোয়াইট হাউজের প্রতিটি প্রেস ব্রিফিংয়ের ট্রান্সক্রিপ্ট পাওয়া যায়। 

সঠিক ও নির্ভুল তথ্য পাওয়ার সবচেয়ে সুনিশ্চিত পন্থা সরাসরি মূল সূত্রে চলে যাওয়া।

আলোচ্য টুইটটির তারিখ দেওয়া ছিল ১১ জানুয়ারি। তাই আমি স্ক্রল করে সেদিনকার ট্রান্সক্রিপ্ট বের করি। এরপর কমান্ড+এফ চেপে ভিডিওতে রিপোর্টারের জিজ্ঞেস করা প্রশ্নটি টাইপ করে ওই লাইনটি খুঁজে পাই।

বিষয়টি পর্যবেক্ষণের পর আমি নিশ্চিত হই যে, প্রেস সচিব আসলে প্রশ্নটির উত্তর দিয়েছিলেন এবং তার বের হয়ে আসার ক্লিপটি আসলে সম্মেলনের একদম শেষে ধারণ করা হয়েছিল। 

তৃতীয় ধরনের বানোয়াট ভিডিওর বিষয়টি বুঝতে হলে এই ভিডিওটি দেখুন যেখানে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি তার সৈন্যদের অস্ত্র ফেলে দিয়ে আত্মসমর্পনের নির্দেশ দিচ্ছেন।

এই ভিডিওটি ইউক্রেনে ভাইরাল হয়েছিল এবং হ্যাকাররা এটিকে ইউক্রেনের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমেও পোস্ট করে। 

এটি একটি ডিপফেক ভিডিওর উদাহরণ। এই ধরনের ভিডিওতে একজন ব্যক্তির চেহারা বা অবয়ব বদলে দেওয়া হয়। ফলে তাদের এমন কথা বলতে বা এমন কাজ করতে দেখা যেতে পারে, যা তারা কখনোই বলেননি বা করেননি।

তবে এটি খুব ভালো কোনো ডিপফেক ভিডিও ছিল না। এনপিআর-এর মতে, দর্শকরা দ্রুতই ধরে ফেলেন যে, কথা বলার সময় জেলেনস্কির উচ্চারণ ঠিক ছিল না এবং তার মাথাটিও অদ্ভুত দেখাচ্ছিল। কিন্তু এটা যে ডিপফেক ভিডিও, তা দ্রুত ধরতে না পারলে অনেক গুরুতর ক্ষতি হতে পারত।

কিছু পরামর্শ

মূল কথা হলো, অনলাইনের কোনো ভিডিও আসল নাকি বানোয়াট এবং এর সঙ্গে থাকা তথ্যগুলো সত্য কিনা– তা ধরতে পারা অনেক সময় কঠিন হতে পারে।

এখানে কিছু পরামর্শ দেওয়া হলো যা এ ধরনের ভিডিও শনাক্ত করতে সাহায্য করবে:

১. সব সময় মূল সূত্রটি খুঁজে বের করার চেষ্টা করুন। কি-ওয়ার্ড সার্চ করুন এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি পড়ুন এবং যা দেখছেন তা বিশ্বাস করার আগে যাচাই করে নিন এটি কোনোভাবে সম্পাদিত কি না।

২. যে সব ভিডিওতে উদ্ভট ও ব্যাখ্যাতীত ফাঁক পাওয়া যায়– সেগুলো সন্দেহজনক এবং হয়তো সেটি সম্পাদনা করা হয়েছে। 

৩. আপনি যদি কোনো সুপরিচিত ব্যক্তিকে অতিরঞ্জিত বা অবিশ্বাস্য কিছু বলতে বা করতে দেখেন তাহলে সেটি ডিপফেক হতে পারে।


এই প্রতিবেদনটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল পয়েন্টার-এ। অনুমতি নিয়ে এখানে অনুবাদ ও পুনঃপ্রকাশ করা হয়েছে। বাংলায় অনুবাদ করেছেন তামারা ইয়াসমীন তমা।

আরো কিছু লেখা