স্টিভ সালগ্রা রেমা

ফেলো, ডিসমিসল্যাব
সাজানো ভিডিও যখন বিভ্রান্তির কারণ
This article is more than 2 months old

সাজানো ভিডিও যখন বিভ্রান্তির কারণ

স্টিভ সালগ্রা রেমা

ফেলো, ডিসমিসল্যাব

সাজানো (স্ক্রিপ্টেড) ভিডিও বানানো হয় বিশেষ কিছু দৃশ্য ধারণ করার জন্য, যা দেখতে বাস্তবের মতোই মনে হয়। এইসব কন্টেন্ট বিনোদনের জগতে এক চমকপ্রদ অবদান রাখলেও, অনেক সময় এটি বাস্তবতা ও কল্পনার মধ্যকার সীমারেখাকে ঘোলাটে করে দেয়। 

বাংলাদেশ ও ভারতে সামাজিক মাধ্যম ফেসবুক, টুইটার (এক্স) ও টিকটকে ছড়িয়ে পড়া এমন অন্তত ৭টি সাজানো ভিডিও ডিসমিসল্যাব খতিয়ে দেখেছে। এর মধ্যে আছে রমজানে এক নারীকে বাস থেকে নামানো বা পাঁচ বছরের সম্পর্ক শেষে অন্য মেয়েকে বিয়ে করার মতো ঘটনা, যা সামাজিক মাধ্যমে ভুল তথ্য ছড়ায় এবং জনমতে বিভ্রান্তি তৈরি করে। ভারত বাংলাদেশ মিলিয়ে অন্তত ৬টি আলাদা ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা হয়েছে এই প্রতিবেদনে।

সাজানো ভিডিওর বিস্তার

গত এপ্রিলে প্রকাশিত একটি ভিডিওতে দাবি করা হয় যে যৌতুকের জন্য একজন বর ও তার বাবাকে মেয়ের পরিবার দড়ি দিয়ে বেঁধে রেখেছে। এটি সেসময় ফেসবুকের নানা পেজ, গ্রুপ ও ব্যক্তিগত আইডি থেকে ছড়িয়ে পড়তে দেখা যায়। মূলধারার গণমাধ্যম দৈনিক ইত্তেফাকের নিজস্ব পেজেও এটি রিল আকারে শেয়ার করা হয় এবং ক্যাপশনে লেখা হয়, “যৌতুক চাওয়ায় বর ও বরের বাবাকে রশি দিয়ে বেঁধে রেখেছে মেয়ের পরিবার।” ডিসমিসল্যাবের যাচাইয়ে দেখা যায়, ভিডিওটি কোনো বাস্তব ঘটনার ধারণকৃত দৃশ্য নয়, বরং কিছু ব্যক্তি মিলে নিজেরা বানিয়েছে।

পর্দা না করার কারণে একজন নারীকে বাস থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়– এমন দাবির একটি ভিডিও গত মার্চ মাসে সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে (, , )। এতে দেখা যায়, একজন নারী বাসে উঠতে চাইলে বাস হেলপার তাকে বাসে উঠতে নিষেধ করছেন। এ নিয়ে নারী ও বাস হেলপারের মধ্যে বাকবিতণ্ডা শুরু হয়। রমজান মাসে বেপর্দা নারীকে বাসে তোলা হবে না- এই কারণ দেখিয়ে বাসের চালক ও বাস হেলপার ঐ নারীকে বাস থেকে নামতে বলেন।

ফেসবুক ব্যবহারকারীরা ঘটনাটিকে সত্য বলে মনে করে বিভিন্ন মন্তব্য করেন। ১৫ মার্চ এক ব্যবহারকারী ভিডিওটি শেয়ার করে লেখেন, “রমজান মাসে কোনো বেপর্দা নারীকে কোনো যানবাহনে উঠতে দেওয়া হবে না। দরকার হলে ড্রাইভার ও হেল্পার গাড়ি ছেড়ে পালাবে। রমজান মাসে বেপর্দা নারী দেখলেই রোজা হালকা হয়ে যায়।” আরেকজন ব্যবহারকারী লেখেন, “রমজান মাসে বেপর্দা নারীকে বাসে তুলবেন না। সেলুট মামা।” 

ভিডিওটি বাংলাদেশে তৈরি হলেও এটি সীমানা পেরিয়ে ভারতেও ছড়িয়ে পড়ে। ভারতের একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী পোস্টটি শেয়ার করে লেখেন, “এই হল বাংলাদেশের হিন্দুদের অবস্থা। বাংলাদেশে রমজান মাসে বোরকা পরিহিত না বে-পর্দাশীল হিন্দু নারীদের বাসে তোলা হবে না। ভেবে দেখুন কয়েক বছর পর হিন্দুদের ভবিষ্যৎ কেমন হবে।” পোস্টটির কমেন্ট সেকশনে একজন মন্তব্য করেন, “আমি একটা কথা জানি বাংলাদেশের মুসলিমরা খুব সাম্প্রদায়িক। পাকিস্তান মুসলমানদের চেয়ে অনেক বেশি অত্যাচারী।” 

বাংলাদেশসহ ভারতের একাধিক ফ্যাক্টচেকিং প্রতিবেদন (, , , ) থেকে জানা যায়, রমজান মাসে বেপর্দা একজন নারীকে বাস থেকে নামানোর এই ঘটনাটি আসল নয়। ভিডিওটি বানানো। মূলত বিনোদনের উদ্দেশ্যে তৈরিকৃত সাজানো এক নাটক এটি, যা বাস্তব ঘটনা হিসেবে পরবর্তীতে ভুলভাবে সামাজিক মাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে। 

বাংলাদেশ থেকে তৈরিকৃত সাজানো ভিডিও ভারতে ভুল তথ্য আকারে বিস্তারের ঘটনা এই প্রথম নয়। এর আগে অন্তত ৫টি ভিডিও বাংলাদেশসহ ভারতে সামাজিক মাধ্যমগুলোতে ভাইরাল হতে দেখা গেছে। বিশেষভাবে নজর কাড়ে গত বছরের জুলাই মাসে প্রকাশিত একটি ভিডিও। এতে দাবি করা হয়, বৃদ্ধের সঙ্গে তরুণীর হিল্লা বিয়ে হচ্ছে। যা ভারতে সামাজিক মাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) ব্যাপকহারে ছড়িয়ে পড়ে (, , )। ভারতীয় ফ্যাক্ট চেকিং সংস্থা নিউজচেকারের যাচাইয়ে বলা হয়, এটি কোনো সত্য ঘটনার ভিডিও নয়- বরং স্ক্রিপ্টেড বা সাজানো।

একই মাসে ‘লাভ জিহাদ’ দাবি করে বাংলাদেশ থেকে একটি বানানো ভিডিও ভাইরাল হয় (, , )। ভিডিওটি ভারতে “লাভ জিহাদ” দাবি করে ছড়ানো হচ্ছিল। ভিডিওটিতে দেখা যায়, একজন পুরুষ এবং একজন নারী গোপনে এক বন্ধুর সাহায্যে চলন্ত গাড়িতে উঠছেন। পরে বন্ধুটি অন্যদের সঙ্গে একটি অটোরিকশায় করে দ্রুত সরে পড়েন। এই ভিডিওটি একটি হিন্দি ক্যাপশন দিয়ে শেয়ার করা হয়; যার অনুবাদ: “লাভ জিহাদে এভাবেই একটি সনাতনী মেয়েকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়, তাকে আশ্রয় দিয়ে এবং সম্পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে। এখানে একটি পুরো চক্র জড়িত, যাতে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলা করা যায়।” আল জাজিরার একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, ‘লাভ জিহাদ’ মূলত এক ষড়যন্ত্র তত্ত্ব। এখানে বোঝানো হয় একজন মুসলিম পুরুষ প্রেম বা বিয়ের অজুহাতে কোনো হিন্দু নারীকে ইসলামে ধর্মান্তরিত করছেন। তথ্য যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান বুম লাইভের প্রতিবেদন বলছে, ভিডিওর অভিনেতা মোহাম্মদ সোহাগ তাদের নিশ্চিত করেছেন এটি একটি স্ক্রিপ্টেড ভিডিও এবং বাংলাদেশের চাঁদপুর জেলায় এটি ধারণ করা হয়েছে। সোহাগ ভিডিওটির সঙ্গে ভাইরাল হওয়া সাম্প্রদায়িকতার বিষয়টি অস্বীকার করেন।

এর আগে ২০২৩ সালের মে মাসে “চাচাতো বোনের সঙ্গে ৫ বছর সম্পর্ক শেষে অন্য মেয়েকে বিয়ে” শীর্ষক একটি ঘটনার ভিডিও এবং জুন মাসে “শ্বশুরবাড়ি থেকে ডিসকভার বাইক না দিয়ে ভিন্ন বাইক দেওয়ায় সেই বাইক কবরস্থ করার ঘটনার” ভিডিও ফেসবুকে ভুল অর্থে ভাইরাল হতে দেখা গেছে। 

একই বছরের ডিসেম্বরে ভারতের একটি সাজানো ভিডিও বাংলাদেশে ভাইরাল হয়। এটি শেয়ার করে ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, “ভারতে চিকিৎসা করাতে গিয়ে বৃদ্ধ বাবাকে নিয়ে বিপাকে সন্তান! চিকিৎসা করাতে দিচ্ছে না! ক্রিকেট বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে সমর্থন করায় বাংলাদেশিদের উপর ক্ষেপেছে ভারতীয়রা !” এই বিষয়ে ভারতের ফ্যাক্ট ক্রিসেণ্ডো তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, ভিডিওর দাবিটি বিভ্রান্তিকর এবং পরিকল্পিতভাবে তৈরি ভিডিওকে আসল ঘটনা দাবিতে শেয়ার করা হচ্ছে।

সাজানো ভিডিও যেভাবে ভুল বার্তা ছড়ায়

যখন কোনো সাজানো ভিডিওকে প্রাসঙ্গিক প্রেক্ষাপট থেকে বের করে অন্য পরিস্থিতিতে প্রচার করা হয়, অথবা কাটছাঁট করে অসম্পূর্ণভাবে প্রকাশ করা হয়, তখন তা ভুল বা বিকৃত বার্তা ছড়াতে পারে। আর ভিডিওর মাধ্যমে ছড়ানো বার্তা, যদি তা ভুলও হয়, মানুষের কাছে বেশি বিশ্বাসযোগ্য হয়ে ওঠে। পেনসিলভানিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা মোবাইল অ্যাপে মিথ্যা খবরের ভিডিও দেখেছেন, তাদের মধ্যে ৫৮% মানুষ ভিডিওর গল্পটিকে সত্য মনে করেছেন। অডিও ফরম্যাটে একই গল্প শুনে ৪৮% মানুষ এবং নিবন্ধ পড়ে মাত্র ৩৩% মানুষ সেটি বিশ্বাস করেছেন।

সাজানো ভিডিও হলে তা সতর্কবার্তা বা ডিসক্লেইমার আকারে জানিয়ে দিতে হয়। অনেক ভিডিওতে দেওয়াই হয় না, দিলেও শুরুর দিকে না দিয়ে শেষে রাখা হয়। সিঙ্গাপুরভিত্তিক সংবাদমাধ্যম থিঙ্ক চায়নার প্রতিবেদন বলছে, বিভিন্ন অ্যাপ এবং প্ল্যাটফর্মে বিপুল পরিমাণ স্বল্প দৈর্ঘ্যের ভিডিও থাকায় বাস্তব ও কল্পনার মধ্যে পার্থক্য করা কঠিন হয়ে পড়েছে। ভিডিওতে বেশি ‘ভিউ’ পাওয়ার জন্য কন্টেন্ট নির্মাতারা প্রায়ই মানুষের আবেগকে উস্কে দিয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে স্ক্রিপ্টেড ভিডিও তৈরি করে থাকেন। প্রতিবেদনটির মতে, এই সমস্যা সমাধানে চীনা শর্ট-ফর্ম ভিডিও অ্যাপ ডৌইন একটি নতুন নিয়ম চালু করেছে। এতে বলা হয়, ১ মে, ২০২৩ থেকে নির্মাতাদের সাজানো ভিডিওর ক্ষেত্রে স্পষ্টভাবে ‘লেবেল’ বা লিখিত ঘোষণা দিতে হবে, অন্যথায় তারা প্ল্যাটফর্মের স্থায়ী নিষেধাজ্ঞার ঝুঁকিতে থাকবেন।

এই ধরনের ভিডিও এমনভাবে তৈরি করা হয় যেন তা বাস্তবের মতো মনে হয়, কারণ এতে খুব উন্নত ক্যামেরা বা সাউন্ড ব্যবহার করা হয় না। ফলে দেখলে যে কারোর মনে হবে এটি আসল কোন ঘটনা সরাসরি ধারণ করা। এই কারণে ভিডিওগুলো সবার কাছে বেশি বিশ্বাসযোগ্য এবং আকর্ষণীয় মনে হয়, এবং এটি সত্যি না মিথ্যা– তা বোঝা অনেকের জন্যই কঠিন হয়ে পড়ে।

মানুষ সাধারণত এমন তথ্য সহজে গ্রহণ করে এবং অন্যদের জানায় যা তাদের পূর্ববর্তী বিশ্বাসের সঙ্গে মেলে। সাজানো ভিডিওগুলো এই প্রবণতাকে কাজে লাগিয়ে এমন বার্তা তৈরি করে যা নির্দিষ্ট দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এইভাবে মানুষ সামাজিক মহলে একটি ভ্রান্ত তথ্য আরও বেশি করে ছড়িয়ে দেওয়ার ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। আমেরিকান সাইকোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের (এপিএ) একটি প্রতিবেদন মতে, ‘কনফারমেশন বায়াস’ মানুষকে তথ্যের সঠিকতা যাচাই করার পরিবর্তে নিজস্ব বিশ্বাসকে সমর্থন করে এমন তথ্য খুঁজতে প্রভাবিত করে। 

এছাড়া যেসব কন্টেন্ট মানুষকে বেশি আকর্ষণ করছে সামাজিক মাধ্যমগুলো তা বেশি করে নিউজফিডে দেখিয়ে থাকে। এইভাবে আবেগধর্মী ভিডিও খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। ভুল তথ্য ধরা পড়া বা সংশোধন হওয়ার আগেই চলে যাচ্ছে অনেকের কাছে। মার্কিন ও সুইডেনভিত্তিক এক দল গবেষকের মতে, “সামাজিক মাধ্যমের অ্যালগরিদম মূলত বিজ্ঞাপনভিত্তিক আয়ের জন্য মানুষের মধ্যে নিহিত পক্ষপাতকে বাড়িয়ে তোলে, ফলে ভুল তথ্য এবং মেরুকরণের ঝুঁকি বেড়ে যায়।”

ভুলভাবে ছড়ানো ভিডিও বিশ্লেষণ করে এও দেখা গেছে, অধিকাংশ সময়ই এগুলোতে অপরিচিত পাত্র-পাত্রীরা অভিনয় করছেন। এর ফলেও অনেকে বুঝতে পারেন না যে দৃশ্যের চরিত্রগুলো মূলত অভিনেতা-অভিনেত্রী, বাস্তব কোনো ঘটনার অংশ নন।

সাজানো ভিডিওর সামাজিক প্রভাব

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে উল্লেখিত ঘটনাগুলো বিবেচনা করে বোঝা যায়, আগে লেখা স্ক্রিপ্টভিত্তিক এ জাতীয় ভিডিও ভুল বা বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়াতে পারে। এমনকি ঝুঁকি থাকে লিঙ্গ বা ধর্ম নিয়ে বিতর্ক ও উত্তেজনা সৃষ্টি করে সামাজিক সম্প্রীতি নষ্ট করারও।

বিভ্রান্তিকর ও ভুল তথ্যসমৃদ্ধ ভিডিও কন্টেন্ট সামাজিক সম্প্রীতির ক্ষতি করছে কি না বা লিঙ্গ ও ধর্ম নিয়ে উত্তেজনা ও বিতর্ক সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখছে কি না – এই বিষয়ে জানতে চাওয়া হয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্নালিজম এন্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. সাঈদ আল-জামানের কাছে। তিনি ডিসমিসল্যাবকে বলেন, বাংলাদেশে ডিজিটাল প্রযুক্তির প্রসার ঘটলেও সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারীদের ডিজিটাল স্বাক্ষরতা নেই বললেই চলে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বর্তমান সমাজব্যবস্থার নানা বিপরীতমুখী দ্বন্দ্ব। নারী-পুরুষ, হিন্দু-মুসলিম, শিক্ষক-ছাত্র সম্পর্ক সবকিছুকেই আমরা একে অপরের মুখোমুখি দাঁড় করাচ্ছি। এই বিষয়গুলোকে কাজে লাগিয়েই কন্টেন্ট ক্রিয়েটররা ব্যবসা করার সুযোগ পাচ্ছে এবং বিদ্যমান দ্বন্দ্বগুলোকে আরও উস্কে দিচ্ছে। তিনি আরো বলেন, “এর পেছনে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার মানও দায়ী, যে কারণে মানুষের মাঝে ধর্মীয় বা জেন্ডার সংবেদনশীলতা তৈরি হচ্ছে না। ফলে এই কন্টেন্টগুলো তাদের মাঝে অসন্তোষ ও সহিংস মনোভাব বাড়াতে ভূমিকা রাখছে। এই সমস্যা প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহার এবং আইন প্রয়োগের মাধ্যমে মোকাবিলা করা জরুরি, এবং কন্টেন্ট নির্মাতাদের উচিত হবে তাদের কাজের পরবর্তী প্রভাব বিবেচনা করে কন্টেন্ট তৈরি করা।”

কেন সাজানো ভিডিও বাড়ছে

সস্তা সাজানো ভিডিও কেন তৈরি করা হয়? ফেসবুক মনিটাইজেশনের পাশাপাশি আরও কী ধরনের প্রণোদনা কাজ করে? জানতে চাওয়া হয়েছিল তথ্য যাচাইয়ের প্রতিষ্ঠান, ফ্যাক্টওয়াচের ফ্যাক্টচেকার শুভাশীষ দাস রায় দীপের কাছে। তিনি বলেন, সামাজিক মাধ্যম বিশেষ করে ফেসবুক মনিটাইজেশন নীতির আওতায় আয় করছে কিনা সেটি সরাসরি জানা যায় না, যদি না পেজটি নিজে তথ্যটি প্রকাশ করে।

অবশ্য, বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে কখনো কখনো এর ইঙ্গিত মেলে। “ফেসবুকের নীতিমালা বিতর্কিত সামাজিক কন্টেন্ট মনিটাইজ না করার দিকনির্দেশনা দেয়। মনে হয়, এই কন্টেন্টগুলো বেশি রিয়েকশন ও রিচ পেতে তৈরি করা হয়, যা দ্বিধান্বিত মনোভাবের মানুষের মধ্যে ব্যাপক প্রচার পায়” অভিমত ব্যক্ত করেন ফ্যাক্টচেকার শুভাশীষ।

ভিডিও সত্য নাকি সাজানো- কীভাবে বুঝবেন

তথ্যের সঠিকতা, উৎসের বিশ্বাসযোগ্যতা, এবং প্রকাশের উদ্দেশ্য— এই সব কিছু বিবেচনায় নিয়ে সামাজিক মাধ্যমের যেকোনো ভিডিওর সত্যতা নির্ণয় করা যেতে পারে। ফ্যাক্টচেকার শুভাশীষ সাজানো ভিডিও চেনার কয়েকটি কৌশলের কথা জানিয়েছেন ডিসমিসল্যাবকে। যেমন, 

১) ভিডিওকে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। সাজানো হলে কোনো না কোনো অসামঞ্জস্যতা চোখে পড়বেই। এসব ভিডিও অনেক চিন্তাভাবনা করে বানানো হয় বলে সবকিছুর মধ্যে একটা স্পষ্টতা লক্ষ্য করা যায়। যেমন ভিডিওর মান তুলনামূলকভাবে ভালো হবে, খুব দ্রুত ফ্রেম পরিবর্তন হবে, শব্দ তুলনামূলকভাবে পরিষ্কার থাকবে, ভাষার মধ্যে কিছুটা কৃত্রিমতা থাকবে ইত্যাদি। 

২) ভিডিওর উৎস যাচাই করার চেষ্টা করা যেতে পারে। সর্বপ্রথম ভিডিওটি কোথায় প্রকাশিত হয়েছে তা দিয়ে ভিডিওটি বাস্তব না সাজানো তা সহজেই বুঝা যায়। 

৩) ভিডিওর সঙ্গে কোনো ডিসক্লেইমার আছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে হবে। এগুলো বেশিরভাগ সময় ভিডিওর ক্যাপশনে, বিবরণে, শুরুতে বা শেষে পাওয়া যায়। একটি ভিডিও বাস্তব ঘটনার রেকর্ড, নাকি চিত্রনাট্যের ভিত্তিতে পরিকল্পিতভাবে ধারণ করা হয়েছে তা ডিসক্লেইমার অংশে বলা হয়ে থাকে।

৪) ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যেতে পারে, ধারণের জন্য ব্যবহৃত কোনো যন্ত্রপাতি বা সরঞ্জামের উপস্থিতি রয়েছে কিনা। যেমন, ক্যামেরা বা মাইকের উপস্থিতি ভিডিওতে থাকলে বুঝে নিতে হবে ভিডিওটি বিশেষ কারণে তৈরি। 

৫) ভিডিও থেকে স্ক্রিনশট নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করেও যাচাই করে দেখা যেতে পারে। এ সম্পর্কিত কী-ওয়ার্ড সার্চ অথবা সরাসরি ভিডিও-সম্পর্কিত কী-ওয়ার্ড দিয়েও খোঁজা যায়। 

৬) ভিডিওটি ইতিমধ্যে যাচাই করা হয়েছে কিনা তা জানতে প্রতিষ্ঠিত ফ্যাক্টচেকিং ওয়েবসাইটগুলোতে চোখ রাখতে হবে।  

৭) যদি ভিডিওতে কাউকে শনাক্ত করা যায়, তার সামাজিক মাধ্যমের প্রোফাইল দেখে তথ্য পাওয়া যেতে পারে। আলোচিত পেজ বা প্রোফাইলের অন্যান্য পোস্ট ও ভিডিও খতিয়ে দেখা যায় যে আগেও সেখানে একই ধরনের অভিনীত দৃশ্য আছে কিনা বা একই অভিনেতা-অভিনেত্রীকে অন্য কোনো ভিডিওতেও দেখা গিয়েছে কিনা।

আরো কিছু লেখা