আহমেদ ইয়াসীর আবরার
এইচএমপিভি কোনো নতুন ভাইরাস নয়, মহামারির শঙ্কাও দেখেননা বিশেষজ্ঞরা
আহমেদ ইয়াসীর আবরার
সম্প্রতি এশিয়ার বিভিন্ন দেশে হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস (এইচএমপিভি) নামের একটি ভাইরাস সংক্রমণের খবর প্রকাশিত হয়েছে। চীনে এই ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে এবং জাপান, মালয়েশিয়া ও ভারতে এর সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমও খবরটিকে গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করেছে। কিছু খবরে বলা হচ্ছে এটি একটি “নতুন ভাইরাস” এবং এতে “মহামারির শঙ্কা” আছে। গণমাধ্যমের এমন খবরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক মাধ্যমেও। সামাজিক মাধ্যমে অনেক ব্যবহারকারী ও পেজ এটিকে মহামারির সঙ্গে তুলনা করছেন।
ডিসমিসল্যাব এই প্রতিবেদনে যাচাই করেছে, এইচএমপিভি একটি “নতুন ভাইরাস” কিনা এবং এটি থেকে “মহামারির শঙ্কা” আছে কিনা। যাচাইয়ে দেখা গেছে, এইচএমপিভি নতুন কোনো ভাইরাস নয়। বিশেষজ্ঞদের মতে ভাইরাসটি অনেক আগে থেকেই আছে এবং এই ভাইরাসে আক্রান্তের ঘটনা আগেও ঘটেছে। ভাইরাসটির সাম্প্রতিক প্রাদুর্ভাব নিয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিলেও এটি কোভিডের মতো বৈশ্বিক মহামারি হয়ে ওঠার আশঙ্কা নেই বলেও মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
এইচএমপিভি ভাইরাস কী?
হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস বা এইচএমপিভি ভাইরাস একধরনের শ্বাসপ্রশ্বাসজনিত রোগের কারণ। এটি একটি সংক্রামক ভাইরাস যা ব্যক্তি থেকে ব্যক্তি অথবা বস্তু থেকে ব্যক্তিতে সংক্রমিত হতে পারে। ভাইরাসে আক্রান্তের লক্ষণগুলো হল– কাশি, জ্বর, সর্দি এবং শ্বাসপ্রশ্বাসে সমস্যা। গবেষণা প্রকাশনা সংস্থা এলসেভিয়ারে প্রকাশিত এক স্বাস্থ্যবিষয়ক গবেষণায় বলা হয়, ২০০১ সালে নেদারল্যান্ডসে এই রোগটি প্রথম চিহ্নিত হয়। এ সম্পর্কে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) ভাইরাল ডিজিসেসের রোগতাত্ত্বিক ড. এলিন স্নাইডার বলছেন, “প্রতি বছর যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ২০ হাজার শিশু এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়। এদের বেশিরভাগের বয়স ৫ বছরের কম।” তিনি আরও বলেন, অন্তত ১৯৫৮ সাল থেকে এই ভাইরাসের উপস্থিতির সেরোলজিক্যাল (রক্তে ভাইরাল বা ব্যাকটেরিয়াল অ্যান্টিজেন বা অ্যান্টিবডি আছে কি না তা শনাক্তের পরীক্ষা) প্রমাণ পাওয়া যায়।
এইচএমপিভি নিয়ে বাংলাদেশের গণমাধ্যমে কি বলা হচ্ছে
বাংলাদেশের একাধিক গণমাধ্যম আলোচিত ভাইরাসটি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে এবং বেশিরভাগ প্রতিবেদনের সূত্র হল ভারতীয় গণমাধ্যম। দ্য ইকোনমিক টাইমসের সূত্র উল্লেখ করে জাগো নিউজ টুয়েন্টিফোরের একটি প্রতিবেদনে বলা হয় – ২০২০ সালের করোনা মহামারির পর চীনে এবার “নতুন এক ভাইরাসের সংক্রমণ” দেখা দিয়েছে এবং হাসপাতালগুলোতে আক্রান্তদের ভিড় বাড়ছে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কার কথা জানিয়ে প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, এই ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়লে অনেক বড় সংকট তৈরি হতে পারে।
যুগান্তরের প্রতিবেদনে ভারতের এনডিটিভিকে সূত্র উল্লেখ করে বলা হচ্ছে, “কোভিড-১৯ এর ভয়াবহতা এখনো ভুলতে পারেনি বিশ্ব। ঠিক এই সময়ে কোভিডের উৎপত্তিস্থল চীনে নতুন এক সংক্রামক ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। এর নাম হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস (এইচএমপিভি)। বিভিন্ন প্রতিবেদন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত পোস্ট বলছে, হাসপাতাল এবং শ্মশানগুলোতে চাপ বাড়ছে ক্রমেই।” এটিকে নতুন ভাইরাস বলা হয়েছে দ্য ডেইলি ক্যাম্পাস, কালবেলা, ও কালের কন্ঠের প্রতিবেদনে।
এসব প্রতিবেদনে সূত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে ভারতের এনডিটিভি, ইকোনোমিক টাইমস, ও হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদনকে।
দৈনিক ইত্তেফাক তাদের প্রতিবেদনে “নতুন ভাইরাস” বললেও সূত্র হিসেবে বলেছে রয়টার্সের নাম। তবে এই ভাইরাস নিয়ে রয়টার্সের ওয়েবসাইটে যত প্রতিবেদন পাওয়া গেছে, তার কোনোটিতেই একে কোনো নতুন ভাইরাস বলা হয়নি আর ইউনাইটেড নিউজ অব বাংলাদেশ (ইউএনবি) তাদের প্রতিবেদনে কোনো সূত্র উল্লেখ করেনি।
দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসের প্রতিবেদনে বলা হয়, “নতুন ভাইরাস এইচএমপিভি নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। পাঁচ বছর আগে যে ভয়ংকর পরিস্থিতির মুখে পড়তে হয়েছিল বিশ্বকে, আবারও সে রকম কিছু হবে কি না, তা নিয়ে আশঙ্কায় ভুগতে শুরু করেছেন নেটিজেনদের একাংশ।” একাত্তর টিভির প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, “ভাইরাসটি করোনার মতোই ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে বলে সতর্ক করেছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তাদের শঙ্কা, ২০২৫ সালে আবার করোনার মতো নতুন কোনো মহামারির উদ্ভব হতে পারে। তবে এইচএমপিভিই যে সে মহামারি হবে, তা নিশ্চিত না।”
ইউএনবির বরাতে প্রথম আলোতে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, “নতুন আতঙ্ক দ্য হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাসের (এইচএমপিভি) প্রাদুর্ভাব বেড়েছে চীন আর জাপানে। ইনফ্লুয়েঞ্জা ধাঁচের এই ভাইরাসে এরই মধ্যে আক্রান্ত হয়েছেন অনেকে। ভাইরাসটি করোনার মতোই ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে বলে সতর্ক করেছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।” প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয় ২০২৫ সালে প্রায় ১১টি রোগকে সম্ভাব্য মহামারির তালিকায় রাখা হয়েছে। এসবের মধ্যে হাম, কলেরা, বার্ড ফ্লু ও স্ক্যাবিসের মতো রোগের উল্লেখ থাকলেও এইচএমপিভির নাম নেই। তবে বলা হয় এইচএমপিভির সাম্প্রতিক প্রাদুর্ভাব চিকিৎসক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে। প্রতিবেদনে বিশেষজ্ঞ হিসেবে যুক্তরাজ্যের সাউদাম্পটন বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ গবেষক ড. মাইকেল হেডের নাম দিয়ে তার শঙ্কার কথা উল্লেখ করা হয়।
এইচএমপিভি ভাইরাস নিয়ে গণমাধ্যমে ছড়ানো এই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়তে দেখা গেছে সামাজিক মাধ্যমেও। ইত্তেফাকের একটি সংবাদ প্রতিবেদন শেয়ার করে একজন ব্যবহাকারী লিখেছেন, “করোনা মহামারির পর বিশ্বে নতুন করে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে হিউম্যান মেটোপনিউমো ভাইরাস (এইচএমপিভি)।” আরেকজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, “নামঃ এইচএমপিভি (নিউ করোনা) জন্মস্হানঃ চীন নিজ দেশের গন্ডি পেরিয়ে প্রথম সফর ভারত। আসিতেছে, চীন নিবেদিত ভারত প্রযোজিত এইচএমপিভি।” ভাইরাসকে নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে ফেসবুক আরও কিছু পোস্ট (১, ২, ৩) শেয়ার করতে দেখা গেছে। ভাইরাসটিকে মহামারি দাবি করেও পোস্ট হতে দেখা যাচ্ছে ফেসবুকে (১, ২, ৩, ৪)।
ভারতীয় গণমাধ্যমে এইচএমপিভি
ভারতের একাধিক গণমাধ্যম এই ভাইরাসকে গুরুত্ব দিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছে। রিপাবলিক ওয়ার্ল্ডের একটি প্রতিবেদনের শিরোনাম – “এইচএমপিভি: যে রহস্যজনক ভাইরাসের সঙ্গে চীন যুদ্ধ করছে- আপনাকে কী জানতে হবে?”। আরেক গণমাধ্যম এনডিটিভির একটি সংবাদ প্রতিবেদনের শিরোনাম – “চীনের নতুন ভাইরাস। চীনে এইচএমপিভির প্রাদুর্ভাব: লক্ষণ, সংক্রমণসহ যেসব বিষয়ে আপনাকে জানতে হবে।”
দ্য ইকোনমিক টাইমসের এক প্রতিবেদনে অন্য গণমাধ্যমের বরাতে বলা হয়, “হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস সহ অন্যান্য শ্বাসপ্রশ্বাসজনিত অসুস্থতা বৃদ্ধির ভেতর দিয়ে যাচ্ছে চীন। প্রতিবেদন এবং সামাজিক মাধ্যমের পোস্ট বলছে ভাইরাসটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। হাসপাতাল এবং শ্মশান ভরে গিয়েছে বলেও দাবি করছে কেউ কেউ।” ওই গণমাধ্যমেরই এক ভিডিও প্রতিবেদনের শিরোনাম, “চীন কি নতুন মহামারিকে গোপন করছে? ‘কোভিডের মতো’ এইচএমপিভি ভাইরাস নতুন আতঙ্ক ছড়াচ্ছে, বিশৃঙ্খলা দেখা গেছে হাসপাতালগুলোতে।”
বাংলাদেশের গণমাধ্যমগুলোতে ১১টি রোগকে সম্ভাব্য মহামারির তালিকার কথা উল্লেখ করা হয়েছে যা পাওয়া যায় দ্য ইকোনমিক টাইমসের একটি প্রতিবেদনে। দ্য ইকোনমিক টাইমসের প্রতিবেদনে দ্য মিররের উল্লিখিত সংবাদ প্রতিবেদনটির বরাতে বলা হয় ২০২৫ সালে সমস্যা হিসেবে দেখা দিতে পারে এমন ১১টি রোগ নিয়ে ডাক্তাররা চিন্তিত।
দ্য মিরর ইউএসে ২০২৪ সালের ২৯ ডিসেম্বর প্রকাশিত প্রতিবেদনে সাউদাম্পটন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্যবিষয়ক জেষ্ঠ্য গবেষক মাইকেল হেডের বরাতে বলা হয়, “ডিজিজ এক্স হল এমন একটি সংক্রমণ যার ফলে মারাত্মক প্রাদুর্ভাব ঘটতে পারে, সম্ভবত মহামারিতে পরিণত হতে পারে। যদি হঠাৎ করে এই ধরনের প্রাদুর্ভাব ঘটে, তাহলে বিশ্ব সম্ভবত করোনাভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট বৈশ্বিক ধাক্কার মতোই সতর্ক হয়ে যাবে।” তবে প্রতিবেদনে মাইকেল হেড এইচএমপিভি নিয়ে সরাসরি কোন মন্তব্য করেননি এবং এই প্রতিবেদনের সঙ্গে আলোচিত ভাইরাসটির কোন সম্পর্কও দেখা যায়নি। প্রতিবেদনটিতে ১১টি রোগের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এগুলো হলো ডিজিজ এক্স, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, ওয়েস্ট নীল ফিভার, হাম, কোভিড, কলেরা, বার্ড-ফ্লু, অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল-রেজিস্ট্যান্ট ব্যাকটেরিয়া, হুপিং কাশি এবং স্ক্যাভিস।
আতঙ্কিত হবার কারণ আছে?
এইচএমপিভি ভাইরাস নিয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিলেও এ নিয়ে মহামারির আশঙ্কা নেই বলে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “এইচএমপিভি কোভিড-১৯ এর মতো কিছু নয়, বিশেষজ্ঞদের মতে কয়েক দশক ধরেই মানুষ এই রোগে আক্রান্ত আসছে এবং অতীতের সংক্রমণের কারণে বিশ্ব জনসংখ্যার মধ্যে একটি মাত্রা পর্যন্ত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়েছে।” ব্রিসবেনের মাতের স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সংক্রামক রোগের পরিচালক অধ্যাপক পল গ্রিফিন বলেন, “ভাইরাসটি মহামারি হতে পারে এমন শঙ্কা করার দরকার আছে বলে আমি মনে করি না, তবে আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং এর প্রভাব লক্ষ্য করার মতো।”
ভারতীয় গণমাধ্যম দ্য হিন্দুর এক প্রতিবেদনের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞদের বরাতে বলা হয়– এইচএমপিভি কোন রহস্যজনক ভাইরাস নয়, এটি আমরা প্রতিবছরই দেখতে পাই। ওই প্রতিবেদনে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ শিবারঞ্জনি সান্তোষ বলেন, “সাধারণত প্রতিবছর জুলাই বা আগস্ট থেকে ডিসেম্বর বা জানুয়ারি পর্যন্ত এই রোগে আক্রান্ত হতে দেখা যায়।”
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এর ৭ জানুয়ারির একটি প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে বছরের এই সময়টিতে পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধের অনেক দেশে শ্বাসপ্রশ্বাস জনিত সংক্রামক রোগ বাড়তে দেখা যায়। এটি সাধারণত মৌসুমি ইনফ্লুয়েঞ্জা, রেসপিটরি সিনসিশিয়াল ভাইরাস (আরএসভি) সহ এইচএমপিভি ও মাইকোপ্লাজমা নিউমোনিয়ার মতো শ্বাসতন্ত্রের জীবাণু দ্বারা সৃষ্ট হয়ে থাকে। সম্প্রতি চীনে এইচএমপিভি ছড়ানো নিয়ে আগ্রহ তৈরি হতে দেখা যাচ্ছে উল্লেখ করে প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, “চীনের প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত কয়েক সপ্তাহে তীব্র শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং বিশেষ করে চীনের উত্তরাঞ্চলীয় প্রদেশগুলোতে মৌসুমী ইনফ্লুয়েঞ্জা, রাইনোভাইরাস, আরএসভি, এবং এইচএমপিভি-এর সনাক্তকরণ বেড়েছে। শীতকালীন উত্তর গোলার্ধের এই সময়ে শ্বাসতন্ত্রের জীবাণু সনাক্তকরণের যে বৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে, তা এই সময়ের জন্য প্রত্যাশিত সীমার মধ্যে রয়েছে।”
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ হলো যেসব অঞ্চলে শীতকাল চলছে, সেসব স্থানে শ্বাসতন্ত্রের জীবাণু ছড়িয়ে পড়া প্রতিরোধ এবং এর ঝুঁকি কমাতে স্বাভাবিক সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত, বিশেষ করে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের সুরক্ষার জন্য। মৃদু উপসর্গ থাকলে অন্যদের সংক্রমিত করা এড়াতে বাড়িতে অবস্থান করা এবং বিশ্রাম নেওয়া উচিত। যারা উচ্চ ঝুঁকিতে আছেন বা যাদের উপসর্গ জটিল বা গুরুতর, তাদের যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চিকিৎসা গ্রহণ করা উচিত। এছাড়াও, জনাকীর্ণ বা পর্যাপ্ত বায়ু চলাচলহীন স্থানে মাস্ক পরিধান করা, কাশি বা হাঁচি দেওয়ার সময় টিস্যু বা কনুই ভাঁজ করে ঢেকে রাখা, নিয়মিত হাত ধোয়া, এবং চিকিৎসক বা স্থানীয় জনস্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের পরামর্শ অনুযায়ী প্রস্তাবিত টিকা গ্রহণের বিষয়টি বিবেচনা করা উচিত।
বাংলাদেশের গণমাধ্যম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের একটি প্রতিবেদনে ভাইরোলজিস্ট ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞদের বরাতে বলা হয়েছে এই ভাইরাসটি যেহেতু নতুন নয়, তাই এতে আতঙ্কিত না হয়ে সতর্ক থাকতে হবে। বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক ডা. মইনুল আহসান বলেন, “এইচএমপিভি কোনো নতুন ভাইরাস না। ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো এই ভাইরাস। বাংলাদেশে আগেও এ ভাইরাসে আক্রান্ত কেস পাওয়া গেছে। এটি মৃদু ধরনের ভাইরাস, এটি নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই, সাধারণ স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে।” এছাড়াও, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ল্যাবরেটরি মেডিসিন অ্যান্ড রেফারেল সেন্টারের ভাইরোলজি বিভাগের প্রধান ডাঃ আরিফা আকরাম বলেন, “এইচএমপিভি কোনো মরণব্যাধি নয়। তবে শিশু ও বয়স্ক রোগীদের সতর্ক থাকতে হবে। এ ভাইরাস নিয়ে কোভিডের মত আতঙ্কিত না হয়ে সতর্ক হতে হবে।”
প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময় থেকে চীনে এইচএমপিভি ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকে। সম্প্রতি ভারত এবং মালয়েশিয়াতেও এই ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী চিহ্নিত হয় বলে সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশ করে দেশগুলোর গণমাধ্যম।