মিনহাজ আমান
বিভ্রান্তিকর পোস্ট, ভুয়া পেজ ও নামসর্বস্ব সাইট: ডিভি লটারির ক্লিকবেইট ব্যবসা
মিনহাজ আমান
অনলাইনে সামাজিক মাধ্যমসহ বিভিন্ন প্লাটফর্মে বাংলাদেশিদের জন্যে যুক্তরাষ্ট্রের ডাইভার্সিটি ভিসা বা ডিভি লটারি আবেদনের খবর ছড়িয়ে পড়েছে। বিভিন্ন সাল ও শিরোনামে খবরটি ফেসবুক ও ইউটিউবসহ একাধিক অনলাইন প্লাটফর্মে পাওয়া যাচ্ছে। যদিও ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের ওয়েবসাইট জানাচ্ছে, ২০১২ সালে ডিভির কোটা পূরণ হয়ে যাওয়ায় বাংলাদেশ এই তালিকা থেকে বাদ পড়েছে, ফলে বাংলাদেশিদের আর এই ভিসা পাওয়ার সুযোগ নেই।
ডিসমিসল্যাবের ওপেন সোর্স গবেষণায় উঠে এসেছে, ডিভি লটারির এই বিজ্ঞাপন বা পোস্টগুলোর একটি বড় উৎস হলো কিছু ওয়েবসাইট, ফেসবুক পেজ ও গ্রুপের একটি নেটওয়ার্ক যারা মূলত চাকরির তথ্য বা বিজ্ঞপ্তি প্রচার করে থাকে। কখনো সরকারি প্রতিষ্ঠান বা প্রতিষ্ঠিত জব-সাইটের নামে পেজ খুলে, আবার কখনো নিজেদের পেজ ও গ্রুপ থেকে, এ ধরনের ভুয়া তথ্য বা ক্লিকবেইট পোস্ট ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। এই গবেষণায় ১০টি ওয়েবসাইট এবং ৯টি ফেসবুক পেজ, ২০টি গ্রুপ ও ২৩ জন ব্যক্তির প্রোফাইল বিশ্লেষণ করা হয়েছে। দেখা গেছে এদের মধ্যে আটটি ওয়েবসাইটই যশোরের ঠিকানায় নিবন্ধিত, বেশিরভাগ গ্রুপের অ্যাডমিন এবং পোস্টদাতারাও একই জেলার।
এই গবেষণায় বিভিন্ন প্রোফাইল থেকে ছড়ানো ১০০র বেশি পোস্ট ও মন্তব্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে। তাতে দেখা গেছে, মূলত নির্দিষ্ট কিছু ওয়েবসাইটে ডিভি লটারিতে আবেদনের পোস্ট প্রকাশ করা হয়, তারপর সেটি বিভিন্ন পেজে শেয়ার করা হয়। নির্দিষ্ট কিছু ব্যক্তি, নিজ নামে বা বেনামে খোলা প্রোফাইল থেকে বিভিন্ন গ্রুপে সেটি পোস্ট করেন। বিভিন্ন ব্যাক্তি অন্য পোস্টের নিচে মন্তব্য হিসেবেও ওয়েবসাইটের লিংক শেয়ার করেন। লিংকগুলো মূলত ডিভি লটারির তথ্য সংবলিত একটি পেজে নিয়ে যায় এবং বেশিরভাগ ওয়েবসাইটের ডিভি লটারি সংক্রান্ত পেজে দুই থেকে আটটি পর্যন্ত বিজ্ঞাপন (প্রধানত গুগল অ্যাড) পাওয়া যায়।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, গোটা কর্মকাণ্ডই পরিচালিত হয় ওয়েবসাইটে ভিজিট বা ক্লিক বাড়ানোর জন্য এবং এভাবে সাইটগুলো বিজ্ঞাপন থেকে আয় করে থাকে; এই বিভ্রান্তিকর প্রচারণা থেকে গুগলের মত প্রযুক্তি প্লাটফর্মগুলোও মুনাফা করে।
ওয়েবসাইটে বিভ্রান্তিকর পোস্ট ও বিজ্ঞাপন
ওয়েবসাইটগুলোতে দুইভাবে ডিভি লটারির প্রচারণা চালানো হয়। প্রথমত, একটি ওয়েবপেজ যেখানে আবেদনের বিস্তারিতসহ একটি বিজ্ঞপ্তি থাকে; দ্বিতীয়ত, একটি বিজ্ঞাপন যাতে ক্লিক করলে ডিভি বিজ্ঞপ্তির পেজটিতে নিয়ে যায়। এই বিজ্ঞাপন বা প্রোমোশনাল, বিভিন্ন চাকরির পোস্টে জুড়ে দেওয়া হয়।
“আমেরিকান ডিভি লটারিতে ১৮-৪০ বছর বয়সীদের জন্য ২০২২/২৩ এ বাংলাদেশ থেকে আবেদন শুরু হয়েছে! বাড়ি বসে নিজেই আবেদন ফর্ম পূরণ করুন। আবেদন করতে চাইলে নিচের DV Apply Now তে ক্লিক করুন” – গুগলে এই টেক্সট বসিয়ে সুনির্দিষ্টভাবে সার্চ করলে আড়াই হাজারের বেশি ফলাফল আসে। কারণ, সাইটগুলো বিভিন্ন চাকরির বিজ্ঞপ্তিতে হুবহু একই ভাষায় একটি বিজ্ঞাপন বা প্রোমোশনাল লিংক দিয়ে রেখেছে।
যে ১০টি ওয়েবসাইট নিয়ে গবেষণাটি করা হয়েছে, জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত তাদের ৯টিতেই এই ধরনের বিজ্ঞাপন পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি (১১৭০ বার) পোস্ট করেছে টপ সার্কুলার বিডি নামের সাইটটি। তার পরেই (২৭১ বার) রয়েছে স্কলারশিপ সার্কুলার ডট কম। জবসপাগল ডটকম হুবহু একই বিজ্ঞাপন দিয়েছে ইমেজ বা ছবি হিসেবে। এটি দেখে মনে হতে পারে, বাংলাদেশের জন্য ডিভি লটারির দরজা আবার খুলে গেছে।
কিন্তু বিষয়টি আসলে সেরকম নয়। এই টেক্সটে ক্লিক করলে তা ডিভি আবেদনের একটি নির্দিষ্ট ওয়েবপেজে নিয়ে যায়। তাতে আবেদন করার দীর্ঘ পদ্ধতির বিবরণ আছে, ইংরেজিতে। পেজের শেষ দিকে গিয়ে কোন কোন দেশ ডিভির জন্য যোগ্য নয় তার একটি তালিকা দেওয়া। তাতে বাংলাদেশেরও নাম আছে। দুটি সাইট অযোগ্য দেশের তালিকায় (বর্ণক্রমে) ওপরের দিকে থাকা বাংলাদেশের নাম সরিয়ে একেবারে নিচে বসিয়ে দিয়েছে।
আরো নিচে গেলে ইংরেজিতে আরেকটি ব্যাখ্যা পাওয়া যায়, যার মর্মার্থ হলো: বাংলাদেশ অযোগ্য হলেও আপনি আবেদন করতে পারেন যদি, আপনার স্বামী/স্ত্রী বা পিতা/মাতার কেউ আবেদনের জন্য যোগ্য বলে বিবেচিত দেশের নাগরিক হন, এবং আপনি সেই দেশের নাগরিকত্ব “ক্লেইম” করেন। প্রায় প্রতিটি সাইটের পোস্টেই এ ধরনের ব্যাখ্যা পাওয়া যায়।
অর্থাৎ, ফেসবুক পোস্ট এবং ওয়েবসাইট বিজ্ঞাপনে বলা হচ্ছে বাংলাদেশ থেকে আবেদন শুরু হয়েছে, কিন্তু মূল পেজে একেবারে শেষে গিয়ে বলা হচ্ছে বাংলাদেশীরা আবেদনের জন্য যোগ্য নন। এর ফলে অনেক ব্যবহারকারী বিভ্রান্তিতে পড়েছেন। যেমন: রেজাল্টমামা নামের একটি সাইটে ডিভি বিজ্ঞপ্তিতে ৬০টি মন্তব্য পাওয়া যায় যেখানে পাঠকেরা ডিভি আবেদন এবং যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করছেন।
ভুয়া পেজ ও ক্লিকবেইট সাইটের নেটওয়ার্ক
গত ১৪ ডিসেম্বর ‘ডাইরেক্টরেট অফ প্রাইমারি এডুকেশন’ (Directorate Of Primary Education) নামের একটি ফেসবুক পেজ ডিভি লটারির খবর জানিয়ে একটি পোস্ট প্রকাশ করে: “আমেরিকান ডিভি লটারি ২০২৪ ❐ বাংলাদেশ থেকে (১৮–৪০) বয়স হলে ছবি, NID নাম্বার দিয়ে মোবাইল থেকে আবেদন করুন।”
পোস্টটির সঙ্গে একটি আবেদন ফর্মের ছবি সংযুক্ত, কিন্তু সেটির সঙ্গে আমেরিকার ডিভি কর্মসূচির কোনো সম্পর্ক নেই।
যাচাই করে দেখা যায়, ছবির ফর্মটি মূলত বাংলাদেশী মেশিন রিডেবল পাসপোর্টের, যেটি পাসপোর্ট অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট থেকে বিনামূল্যে ডাউনলোড করা যায়। এই পোস্টের মন্তব্য সেকশনে ব্যবহারকারীরা জানতে চাচ্ছেন “কীভাবে আবেদন করতে হয়”, ”চার্জ কত”, “বয়স ৪৭ হলে আবেদন করা যাবে কিনা”, ইত্যাদি।
প্রায় ৯৩ হাজার ফলোয়ারের পেজটি দেখে মনে হতে পারে এটি বোধ হয় বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। আসলে তা নয়। সরকারি এই সংস্থার প্রকৃত ফেসবুক পেজের নাম নকল করে ২০১৮ সালে ভুয়া পেজটি খোলা হয়েছে। অধিদপ্তরের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে তাদের আসল ফেসবুক পেজের লিংক দেওয়া আছে। আবার, নকল পেজটির ফলোয়ার-সংখ্যা আসল পেজের চেয়ে বেশি। নকল পেজের রিভিউ সেকশনে কিছু সচেতন ব্যবহারকারী সতর্কও করে দিয়েছেন যে “এই পেজ ভুয়া খবর দেয়।”
‘ডাইরেক্টরেট অফ প্রাইমারি এডুকেশন’ পেজ থেকে ডিভি লটারি সংক্রান্ত খবরটি গত এক বছরে অন্তত ৬২ বার পোস্ট করা হয়েছে। প্রতিটির মন্তব্য সেকশনে টপসার্কুলারবিডি ডট কম নামের ওয়েবসাইটের একটি লিংক দেওয়া। তাতে বলা হচ্ছে, এই লিংক থেকে ডিভি লটারির জন্যে আবেদন করা যাবে। ক্লিক করে পেজটিতে প্রবেশ করলে, তাতে ডিভি লটারি সংক্রান্ত বিবরণ এবং আবেদনের জন্য আরো একাধিক লিংক পাওয়া যায়। তবে ভেতরে যে লিংকেই ক্লিক করা হোক না কেন, সেটি একই ডিভি লটারি সংক্রান্ত পেজে ফিরিয়ে নিয়ে যায়। অর্থাৎ, এভাবে একই পেজে বার বার ক্লিক করার জন্য প্রলুব্ধ করা হয়।
গবেষণায় টপ সার্কুলার বিডি নামে ফেসবুক পেজ ও ফেসবুক গ্রুপ এবং Job circular-নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি নামে আরেকটি পেজের সন্ধান মেলে। এরা পরস্পর সংযুক্ত এবং এদের প্রত্যেকটি থেকেই একই ওয়েবসাইটের লিংক শেয়ার করা হয়। দুটি পেজের বিবরণেই একই ওয়েব ঠিকানা ও ইমেইল ঠিকানা দেওয়া রয়েছে। গ্রুপের অ্যাডমিন ও মডারেটর তালিকায় পেজটিরও নাম রয়েছে।
আরো নেটওয়ার্ক, একই স্কিম এবং যশোর সংযোগ
ডোমেইন নিবন্ধন তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ১০টি সাইটের ৮টিই যশোরের ঠিকানায় নিবন্ধিত। যেমন, টপসার্কুলারবিডি ডটকম ওয়েবসাইটটির নিবন্ধন যশোরের নিউটাউনের একটি ঠিকানায়। নিবন্ধনে যে নারীর নাম রয়েছে, তাদের ফেসবুক গ্রুপের অ্যাডমিন তালিকায়ও সেই একই নাম পাওয়া যায়। গবেষণায় আরো ৭টি ফেসবুক প্রোফাইলের সন্ধান মেলে যারা একাধিক গ্রুপে টপ সার্কুলার বিডি ডটকমের ভুয়া ডিভি লটারির লিংক পোস্ট করে থাকেন। এদের মধ্যে ৪ টি প্রোফাইলের ঠিকানা যশোরে।
‘টপসার্কুলারবিডি ডট কম’ গ্রুপের অ্যাডমিন তালিকায় দুই ব্যক্তির সন্ধান মেলে যারা জবনোটিস২৪ ডটকম নামের আরেকটি সাইট চালান। এই সাইটেও ডিভি লটারির পুরনো বিজ্ঞাপন পাওয়া গেছে এবং এটি যশোরের কারবালা রোডের ঠিকানায় নিবন্ধিত।
ডিভি লটারি সংক্রান্ত একই ধরনের পোস্ট ছড়ানো আরেকটি নেটওয়ার্কের কেন্দ্রে রয়েছে জবপাগল ডট কম। এই সাইটের ডিভি লটারি সংক্রান্ত পোস্টটি ছড়ানো হয় মূলত bdjobs.com নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে। তারা গত বছরের আগষ্ট মাস থেকে বিভিন্ন সময়ে এই লিংকটি পোস্ট করে আসছে এবং ‘ডিভি লটারি-২০২৪’ এ আবেদনের বিজ্ঞাপন প্রচার করছে। এই পেজটি আদতে জনপ্রিয় চাকরি খোঁজার প্লাটফর্ম বিডিজবস ডটকমের নয়। তাদের নাম নকল করে পেজটি খোলা হয়েছে। জবপাগল ডটকম যে ব্যক্তির নামে নিবন্ধিত, তার ঠিকানা যশোরের কাজীপাড়ায়।
একই এলাকার ঠিকানায় জব নিউজ ২৪ আওয়ার্স ডটকম এবং বিডি লেটেস্ট আপডেট ডটকম নামে আরো দুটি সাইট নিবন্ধন করা হয়েছে। এখানেও ডিভি লটারির বিজ্ঞপ্তি পাওয়া যায়। এই দুটি সাইটের নিবন্ধন একই ব্যক্তির নামে। প্রায় ৩৪ লাখ সদস্যের ‘Bd Job Circular – নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি’ নামের একটি ফেসবুক গ্রুপে এ দুটি ওয়েবসাইটের বিজ্ঞপ্তি প্রায়ই পোস্ট করা হয়। গ্রুপটির অ্যাডমিন প্যানেলে ওয়েবসাইট নিবন্ধনকারীর নাম রয়েছে।
‘বিডি জব সার্কুলার – নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি’ নামের গ্রুপটির একজন মডারেটরের নামে নিবন্ধন করা হয়েছে ডিভি লটারির বিভ্রান্তিকর বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা আরেক ওয়েবসাইট, স্কলারশিপ সার্কুলার ডটকম। নিবন্ধন তথ্য অনুযায়ী এই ব্যক্তির ঠিকানাও যশোরে। ওয়েবসাইটটিতে যে ফেসবুক গ্রুপের লিংক যুক্ত করা আছে তার নাম, আপডেট চাকরির খবর (247)। গ্রুপটির একমাত্র অ্যাডমিনের ঠিকানা একই জেলায়।
স্কলারশিপ সার্কুলারের ডিভি লটারি আবেদনের বিজ্ঞপ্তিটি গত এক বছরে দুটি ফেসবুক গ্রুপে অন্তত ৪৪ বার পোস্ট করা হয়েছে। গ্রুপ দুটির নাম ‘সাপ্তাহিক চাকরির খবর’ এবং ‘bdjobs’ যাদের সদস্য সংখ্যা যথাক্রমে প্রায় ৫ লাখ ও ২ লাখ। এ দুটি গ্রুপের অ্যাডমিনদের অন্তত ৪ জনের ফেসবুক প্রোফাইলের ঠিকানায় যশোর যুক্ত করা আছে।
একইভাবে আপডেট জবসার্কুলার ডটকম ও বিডি অল রেজাল্টস ডটকম নামের দুটি ওয়েবসাইটে ডিভি বিজ্ঞাপন পাওয়া যায়। তাদের নিবন্ধনের ঠিকানাও একই জেলায়।
ক্লিকবেইট ও বিজ্ঞাপন যেখানে মূল লক্ষ্য
১০টি ওয়েবসাইট আলাদাভাবে ঘেঁটে দেখা গেছে, এদের অন্তত ৭টিতে, শুধু ডিভি লটারির পেজে, ২ থেকে ৮ টি অনলাইন বিজ্ঞাপন আছে, যার অধিকাংশই গুগল অ্যাডসেন্স থেকে আসা। ৯টি ওয়েবসাইটই বস হোস্ট বিডি নামের একটি প্রতিষ্ঠান থেকে হোস্টিং সেবা নিয়েছে। সাইটগুলো দেখতেও প্রায় একই রকম এবং তাদের ডিজাইন একই টেমপ্লেট ধরে তৈরি করা।
ওয়েবসাইটগুলো অবশ্য ডিভি লটারি আবেদনের নামে কারো কাছে অর্থ চাইছে না। সরাসরি প্রতারণার মতো কোনো প্রমাণও গবেষণায় উঠে আসেনি। এই সাইটগুলো চাকরির বিজ্ঞপ্তি ও বিভ্রান্তিকর পোস্ট দিয়ে পাঠকদের সাইটে ক্লিক করতে উৎসাহিত করছে। এভাবেই তারা আয় করে থাকে।
এই দশটি সাইটের প্রতিটিতেই গুগল অ্যাডসেন্স অনুমোদন রয়েছে। এদের কোনটি কত আয় করে তা সুনির্দিষ্টভাবে জানা যায় না। তবে ওয়েবসাইট গবেষণার জন্য পরিচিত সাইট সিমিলারওয়েবের তথ্য অনুযায়ী, পাঁচটি সাইট মাসে ২০ হাজার থেকে ৫০ হাজার পর্যন্ত পেজভিউ পেয়ে থাকে।
এ বিষয়ে বিডিজবস ডটকমের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী এ. কে. এম. ফাহিম মাশরুর ডিসমিসল্যাবকে বলেন, “অনলাইনে পোর্টাল খুলে অনেক মানুষই ক্লিকবেইটের এই ব্যবসা করে। তাদের উদ্দেশ্যই এটা যে তার পেজে বা পোর্টালে পাঠক ক্লিক করবেন এবং পোর্টালের মালিক টাকা পাবেন। এ জন্য বিভিন্নভাবে চটকদার জিনিসপত্র থাকে, যার মাধ্যমে ট্রাফিক বাড়ানোর চেষ্টা থাকে, অর্থাৎ পাঠক বা দর্শককে যেন আকৃষ্ট করা যায়। সে সব সংবাদে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়, সেই বিজ্ঞাপনে ক্লিক করলেই গুগল বা বিভিন্ন অ্যাড নেটওয়ার্ক তাদের টাকা দেয়; সেটাই হলো তাদের ব্যবসা।”
তিনি আরো বলেন, “যাদের কনটেন্ট ভালো, দিনশেষে তারাই টিকে থাকবে। যাদের কনটেন্ট নাই তারা হয়তো এমন বিভিন্ন উৎস থেকে সামান্য কিছু অর্থ পাবে। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে এরা টিকে থাকে না।” কোনো বিজ্ঞাপন দেখলেই সেখানে ক্লিক করা থেকে বিরত থাকতেও পাঠকদের পরামর্শ দেন ফাহিম মাশরুর।
তাঁর মতে, কোন ওয়েবসাইট থেকে পাঠক তথ্য নিচ্ছে সে ব্যাপারে সচেতন হওয়া উচিত।
ফ্যাক্টচেক হয় কিন্তু ভুয়া খবর থেকে যায়
বাংলাদেশিদের জন্যে ডিভি আবেদনের ভুয়া খবর ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে ফ্যাক্টওয়াচ, রিউমর স্ক্যানার এবং বুম বাংলাদেশে একাধিক ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। দৈনিক আজকের পত্রিকাও এ ধরনের ভুয়া আবেদন চিহ্নিত করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। কিন্তু এখনো ফেসবুকে ডিভি আবেদনের অসংখ্য বিভ্রান্তিকর বিজ্ঞপ্তি ও বিজ্ঞাপন ঘুরে বেড়াচ্ছে।
২০১২ সালে বাংলাদেশিদের জন্যে ডিভি কর্মসূচি বন্ধ ঘোষণা করা হয়। ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের ওয়েবসাইটে এই তথ্য উল্লেখ করে ডিভি কর্মসূচির নামে যেকোনো বিজ্ঞাপনে প্রতারিত না হওয়ার আহ্বানও জানানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে মার্কিন দূতাবাসের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তারা ডিসমিসল্যাবকে জানায়, “আমরা ভিসা আবেদন সংক্রান্ত ভুয়া সেবাদানকারী, ইমেইল, চিঠি, ওয়েবসাইট, ফোনকল, এসএমএস এবং ছাপা বিজ্ঞাপনের অভিযোগগুলো মনিটর করে থাকি। এদের কেউই বাংলাদেশে মার্কিন দূতাবাসের সাথে যুক্ত নন বা দূতাবাস এই পরিষেবাগুলির কোনোটিকে স্বীকৃতি দেয় না, প্রত্যয়িত বা অনুমোদন করে না। প্রতারণার শিকার হবেন না!”
এ বছরের এপ্রিলে ভুয়া ডিভি লটারি ড্রয়ের নামে কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া বাংলাদেশের একটি ভিসা পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলাও করেছে মার্কিন দূতাবাস। গুগল স্টোরে সেই প্রতিষ্ঠানের অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ এখনো পাওয়া যায় এবং তাদের ওয়েবসাইটটিও সক্রিয় রয়েছে। গত সেপ্টেম্বরে খোলা একটি ফেসবুক পেজ থেকে একই প্রতিষ্ঠানের নামে ডিভি লটারির ভিডিও বিজ্ঞাপন পোস্ট করা হয়েছে।