তাসনিম তাবাস্সুম মুনমুন

জাতিসংঘে নেতানিয়াহুর ভাষণের সময় বাংলাদেশের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকার দাবিটি মিথ্যা
তাসনিম তাবাস্সুম মুনমুন
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বক্তব্যের সময় প্রতিবাদ জানিয়ে অধিবেশন কক্ষ থেকে বের হয়ে যান বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা। সামাজিক মাধ্যমে একটি ছবি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে বিশ্বনেতারা বয়কট করলেও নেতানিয়াহুর বক্তৃতার সময় ওয়াক-আউট করেননি ড. ইউনূসসহ বাংলাদেশের অন্যান্য প্রতিনিধিরা। তবে ডিসমিসল্যাবের ফ্যাক্টচেকে দেখা যায়, দাবিটি সত্য নয়। অধিবেশনে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বক্তৃতার সময় বাংলাদেশের কোনো প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন না।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসংঘের ৮০তম সাধারণ অধিবেশনের সাধারণ বিতর্ক চলছে। ২৬ সেপ্টেম্বর সাধারণ বিতর্কের সকালের সেশনে বক্তৃতা দেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) গ্রেপ্তারি পরোয়ানাপ্রাপ্ত এই প্রধানমন্ত্রী পোডিয়ামে উঠতেই অধিবেশন কক্ষ ত্যাগ করেন কয়েক ডজন দেশের প্রতিনিধি। ইতিমধ্যে ফিলিস্তিনের ওপর ইসরায়েলের চলমান আগ্রাসনের জন্য বিশ্বব্যাপী নিন্দার মুখে ইসরায়েল।

ভুয়া দাবিতে ছড়িয়ে পড়া ফেসবুক পোস্ট
এদিকে সামাজিক মাধ্যমে “নেতানিয়া*হুর জাতিসংঘে বক্তব্য বিশ্বনেতারা বয়কট করলেও এরা নির্লজ্জের মতো বসে আছে”- এই একই বর্ণনা দিয়ে একাধিক ফেসবুক প্রোফাইল ও পেজ (১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ৮) থেকে একটি ছবি শেয়ার করতে দেখা যায়। বাংলাদেশের প্রতিনিধিদের “ইসরাইলের এজেন্ট” (১, ২), “ইহুদীর দালাল” বলে কালীহাতী উপজেলা যুবলীগ, মঞ্চ ৭১ নামে একাধিক আওয়ামী লীগ সম্পৃক্ত পেজ ও প্রোফাইল থেকে একই দাবিতে ছবিটি ছড়াতে দেখা যায়।
জাতিসংঘের ইউটিউব চ্যানেলের ঐ দিনের লাইভ সম্প্রচারে দেখা যায়, ৮ মিনিট ১৪ সেকেন্ডে নেতানিয়াহু পোডিয়ামে পৌঁছানোর পর বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা অধিবেশন কক্ষ থেকে বের হয়ে যেতে শুরু করেন। ৭ মিনিট ২৮ সেকেন্ড পর্যন্ত পাওয়া ফুটেজে অধিবেশন কক্ষে বাংলাদেশের জন্য নির্ধারিত স্থানে কোনো প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন না। নেতানিয়াহুর বক্তৃতা শুরু হওয়ার পর ১২ মিনিট ৩৩ সেকেন্ডের ফুটেজে বাংলাদেশের জন্য নির্ধারিত আসনে কাউকে দেখা যায়নি। বক্তৃতা শেষ করে নেতানিয়াহু ভিডিও-এর ৫০ মিনিট ১৬ সেকেন্ডে পোডিয়াম ত্যাগ করেন। পোডিয়ামে তার অবস্থানের ৪২ মিনিটের বিভিন্ন সময়ের ১৪টি ফুটেজে দেখা যায়, অধিবেশন কক্ষে বাংলাদেশের জন্য নির্ধারিত স্থান ফাঁকা ছিল।
চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং-এর বক্তৃতার সময় ভিডিওটির ১ ঘন্টা ২৮ মিনিট ১১ সেকেন্ডে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি সালাহউদ্দিন নোমান চৌধুরীকে এসে বসতে দেখা যায়। এর কিছুক্ষণ পর ১ ঘন্টা ৩৪ মিনিটে দেখা যায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্য সচিব তাসনিম জারাকে।
অর্থাৎ, জাতিসংঘে নেতানিয়াহুর ভাষণের সময় বাংলাদেশের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকার দাবিটি সত্য নয়।



