ফাতেমা তাবাসুম

ফেলো, ডিসমিসল্যাব
ট্র্যাভিস স্কটের কনসার্ট ধানমন্ডি ৩২-এর অনুষ্ঠান দাবিতে প্রচার

ট্র্যাভিস স্কটের কনসার্ট ধানমন্ডি ৩২-এর অনুষ্ঠান দাবিতে প্রচার

ফাতেমা তাবাসুম

ফেলো, ডিসমিসল্যাব

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ১৫ আগস্টের জাতীয় শোক দিবসের ছুটি বাতিল ঘোষণার পর এবছর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের চিত্র ছিল গেল বছরগুলোর থেকে একেবারে ভিন্ন। সাবেক সরকারি দলের নেতাকর্মীরা পাল্টা অভ্যুত্থান ঘটাতে পারে এমন আশঙ্কায় রাজপথে অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়করা-। এরপর সাধারণ শিক্ষার্থীসহ অনেকেই রাত থেকে ওই এলাকায় অবস্থান নেয়। এ সময় ধানমন্ডি ৩২– এর আশেপাশের এলাকায় সাউন্ডবক্সে গান বাজাতে দেখা যায়, যা সোশ্যাল মিডিয়াতেও প্রচার করা হয়। তবে ডিসমিসল্যাব যাচাইয়ে একটি ভিডিও খুঁজে পায় যা আসলে ইতালির একটি কনসার্টের দৃশ্য; যেটিকে ধানমন্ডি ৩২ এর সঙ্গীতানুষ্ঠান দাবিতে প্রচার হতে দেখা যায়। 

বিভিন্ন ফেসবুক পেজ (, , ), গ্রুপ (, , ) ও প্রোফাইল (, , ) থেকে ভিডিওটি পোস্ট বা শেয়ার দিয়ে দাবি করা হয় অনুষ্ঠানটি ১৫ আগস্টের। ক্যাপশনে লেখা হয় “ধানমন্ডি ৩২ থেকে সরাসরি ভিডিও টি করে পোস্ট দিলাম”, “১৫-ই আগষ্ট ধানমন্ডি ৩২” বা “ধানমন্ডি ৩২ এর বর্তমান অবস্থা”। রিভার্স ইমেজ সার্চ কৌশলে ডিসমিসল্যাব দেখেছে অনুষ্ঠানটি বাংলাদেশেরই নয়। ভিডিওক্লিপটি “ট্র্যাভিস স্কট কনসার্ট” শিরোনামের একটি ইউটিউব ভিডিও থেকে নেওয়া হয়েছে। জনপ্রিয় মার্কিন র‍্যাপার ও গায়ক ট্র্যাভিস স্কট ইতালির রোমে গত বছর দ্য সার্কাস ম্যাক্সিমাস ট্যুর নামের কনসার্ট ট্যুরে এটি পরিবেশন করেন।

ইউ কান্ট সি মি বাট ইউ ক্যান ইউ ক্যান সি মিমস” নামের ফেসবুক পেজ থেকে একটি ব্যঙ্গাত্মক পোস্ট হিসেবে শেয়ার হওয়া এই ভিডিওটি প্রায় এক লক্ষ ৬২ হাজার ব্যবহারকারী দেখেছেন। দশ হাজারের বেশি ব্যবহারকারী পোস্টটিতে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন, এবং একই সঙ্গে পোস্টটি শেয়ার হয়েছে প্রায় এক হাজার বার। ব্যঙ্গাত্মক হলেও অনেক ব্যবহারকারীই একে ধানমন্ডি ৩২ এর ভিডিও বলে বিশ্বাস করেছেন। একজন ব্যবহারকারীকে মন্তব্য করতে দেখা যায়, “কারো পারিবারিক শোক, রাষ্ট্রিয় শোক হতে পারেনা। ধানমন্ডি ৩২। ছাত্রজনতার দখলে।” এছাড়াও “এমডি সারজিস আলম” নামের একটি ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মন্তব্য করা হয়: “দেশের অরজগতা চলছে এত আনন্দ উল্লাস করা ভালো না। এত হিতে বিপরীত হতে পারে। সবাইকে বলব সতর্ক থাকবেন।” প্রোফাইলটিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলমের একটি ছবি ও নাম ব্যবহার করা হয়েছে। তবে প্রোফাইলটি যাচাইয়ে নিশ্চিত হওয়া যায় এটি একটি ভুয়া আইডি।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট রাতে বাংলাদেশের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। ক্ষমতায় এসে শেখ হাসিনা সরকার ২০০৮ সাল থেকে আগস্ট মাসের ১৫ তারিখকে জাতীয় শোক দিবস হিসেবে পালনের ঘোষণা দেয়। আন্দোলনের তোপে গত ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন। এরপর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হলে ভেঙ্গে দেওয়া হয় ১২তম জাতীয় সংসদ। নতুন সরকার ১৫ আগস্টের জাতীয় শোক দিবসের ছুটি বাতিল ঘোষণা করে। অন্যদিকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় বাংলাদেশের সাধারণ জনগণ ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ১৫ আগস্ট শোক দিবস পালনের আহ্বান জানান। এর বিরুদ্ধে পাল্টা কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপি ও অন্যান্য রাজনৈতিক দল। একই সঙ্গে ধানমন্ডি ৩২– এ অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রজনতা। অবস্থান কর্মসূচি চলাকালে ধানমন্ডি ৩২ ও এর আশেপাশের কিছু স্থানে গণজমায়েতে সাউন্ডবক্সে গান বাজতে শোনা যায়।

আরো কিছু লেখা