তামারা ইয়াসমীন তমা

রিসার্চার, ডিসমিসল্যাব
কাচ্চিতে কুকুরের মাংস পাওয়ার বিষয়টি ল্যাব টেস্টে প্রমাণিত নয়
This article is more than 1 year old

কাচ্চিতে কুকুরের মাংস পাওয়ার বিষয়টি ল্যাব টেস্টে প্রমাণিত নয়

তামারা ইয়াসমীন তমা
রিসার্চার, ডিসমিসল্যাব

ফেসবুকে বেশ কয়েকটি প্রোফাইল ও পেজে (, , , ) সুলতান’স ডাইন রেস্টুরেন্টের কাচ্চি বিরিয়ানিতে কুকুরের মাংস পাওয়ার ঘটনা ল্যাব টেস্টে প্রমাণিত বলে প্রচারিত হলেও কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এখনো মাংসের কোনো ধরনের ল্যাব টেস্টই করা হয়নি।

বিভিন্ন মূলধারার গণমাধ্যমের প্রতিবেদন (, , ) অনুসারে, সুলতান’স ডাইনের কাচ্চি বিরিয়ানির মাংস ল্যাবে পরীক্ষা হয়েছে বলে কোনো প্রমাণ মেলেনি।

সর্বশেষ সোমবার (১৩ মার্চ) দুপুরে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, ভোক্তা অধিদপ্তরের কাছে কোনো স্যাম্পল নেই। তাই মাংসের পরীক্ষা বা এ নিয়ে মতামত প্রদান সম্ভব না। তবে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ (বিএফএসএ) মাংসের ল্যাব টেস্ট করাবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। 

এর বাইরে গত কয়েকদিনে বেশ কয়েকটি ফেসবুক পোস্টে (, , , ) যুগান্তর পত্রিকার বরাত দিয়ে “সুলতানস ডাইনে কাচ্চি কুকুর, বিড়ালের মাংস দিয়ে তৈরি করে, মাটন মাংস বলে পরিবেশন করে..” শীর্ষক বক্তব্য প্রচারিত হলেও যুগান্তর পত্রিকায় এমন কোনো প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়নি।

গত ৫ মার্চ সুলতান’স ডাইনের কাচ্চি বিরিয়ানির মাংস নিয়ে প্রশ্ন তুলে এক ভোক্তা ফেসবুকে কয়েকটি ভিডিও ক্লিপ ও ছবি পোস্ট করেন।

Kanok Rahman Khan নামের আইডি থেকে করা পোস্টের যুক্তি ছিল, কাচ্চিতে পাওয়া ‘এত ছোট’ হাড্ডিযুক্ত মাংস খাসির মাংস নয়, বরং কুকুরের মাংস হতে পারে।

এরপরই বিষয়টি নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়। Kanok Rahman Khan এর যুক্তি সমর্থন করে অনেক সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারী সুলতান‘স ডাইনের কাচ্চি বিরিয়ানির মাংস নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করতে থাকেন।

অনেকে বিষয়টিকে কেন্দ্র করে হাস্যরসাত্মক ভাষায় পোস্ট দিতে থাকেন। অসংখ্য মিম তৈরি হয় এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে।

ফেসবুকে এমন ভিডিও ভাইরাল হয়েছে যেখানে দেখা যায়, একজন তরুণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দুটি কুকুরের সন্ধান না পাওয়ায় কুকুর দুটিকে কাচ্চি রান্না করতে গুম করে ফেলার শঙ্কা প্রকাশ করেন।

সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারীদের কেউ কেউ অবশ্য মূল পোস্টের অভিযোগ এবং উদ্দেশ্য নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। কোনো গ্রহণযোগ্য প্রমাণ ছাড়া ফেসবুকে পোস্ট করা অযাচাইকৃত ভিডিওর ওপর ভিত্তি করে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ভয়াবহ অপরাধের অভিযোগ তোলা এবং সেটি নিয়ে হাস্যরসে মগ্ন হওয়ার সমালোচনা করেও কেউ কেউ পোস্ট করেছেন।

বিতর্কের মধ্যে মূল পোস্টকারী Kanok Rahman Khan তার পোস্ট সরিয়ে ফেলে নিজের আইডির নামও বদলে হয়ে গেছেন Kanok Laila.

সর্বশেষ Kanok Laila তার ফেসবুক আইডি ডিএক্টিভেট করেছেন।

বিতর্ক শুরুর পর তার দাবিটি যাচাই করে দেখতে ডিসমিসল্যাব এর পক্ষ থেকে Kanok Rahman Khan আইডির সাথে যোগাযোগ করা হয় মেসেঞ্জারের মাধ্যমে। সেখানে তার নাম পরিবর্তন ও আইডি ডিএক্টিভেট করার বিষয়টি ধরা পড়ে।

প্রথমে তিনি কথা বলতে আগ্রহ প্রকাশ করলেও ১৩ মার্চ এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও সাড়া দেননি। 

ল্যাব টেস্ট কুকুরের মাংস প্রমাণিত হওয়ার ভুয়া দাবি:

এ ঘটনায় সুলতান’স ডাইন রেস্টুরেন্ট কর্তৃপক্ষ তাদের মাংস ল্যাবে পরীক্ষার আহ্বান জানালেও এমন কোনো পরীক্ষা করা হয়নি

সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার সুলতান’স ডাইনের গুলশান শাখায় দুই দফায় অভিযান চালায় বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। অভিযানে জাতীয় ভোক্তা অধিদপ্তর ২৫ কেজির খাসির মাংসের হিসাবে গরমিল পায়। তবে এই মাংস খাসি ব্যতীত অন্য কোনো প্রাণীর কি না, সে বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি কর্তৃপক্ষ।

তবে কোনো প্রতিবেদনেই (, , ) বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ কিংবা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ল্যাব পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে কোনো বিবৃতি দেওয়া হয়নি। 

অর্থাৎ, পরীক্ষিতভাবে সুলতান’স ডাইনের কাচ্চির মাংস নিয়ে কোনো বক্তব্য না মিললেও ফেসবুকে ভুয়া তথ্য প্রচারিত হচ্ছে।

ল্যাব টেস্ট কুকুরের মাংস শনাক্ত হওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে করা ফেসবুক পোস্টের কমেন্ট বিশ্লেষণে দেখা যায়, মোহাম্মদ হোসেইন আলী নামের একজন লিখেছেন, “যারা কাচ্চি খোর ভাই তারা দেখেশুনে খাবেন ভাই নামিদামি হোটেলে যে অবস্থা ছোট হোটেলে তো আরো ভয়ানক”।

আরেকটি পোস্টে, রত্না ইয়াসমিন নামে একজন লিখেছেন, “এই জন্যইতো বাংলাদেশে কুকুরের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। আগে আমাদের এলাকায় অনেক কুকুর ছিলো কিন্তু এখন আর অনেক কুকুর দেখা যাচ্ছে না। সেই বিড়ালের অবস্থা একই।”

অর্থাৎ, পোস্টটির বক্তব্যটি সত্য বলে ধরে নিয়েছেন অনেকে।

এর আগে গত বছর জুনে ঢাকার আশুলিয়ায় আল্লাহর দান বিরিয়ানী হাউজ নামের একটি দোকানে কুকুরের মাংস দিয়ে কাচ্চি বিরিয়ানি রান্নার গুজব ছড়ায়। সেসময় পুলিশ মাংসের আলামত সংগ্রহ করে উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসে পাঠালেও টেস্টের প্রতিবেদনে কুকুরের মাংসের কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। 

আরো কিছু লেখা