তৌহিদুল ইসলাম রাসো

রিসার্চ অফিসার, ডিসমিসল্যাব
সাপটি রাসেলস ভাইপার নয়, ভিডিওটি ইন্দোনেশিয়ার

সাপটি রাসেলস ভাইপার নয়, ভিডিওটি ইন্দোনেশিয়ার

তৌহিদুল ইসলাম রাসো

রিসার্চ অফিসার, ডিসমিসল্যাব

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টিকটকে সাপের একটি ভিডিও প্রচার করে একে রাসেলস ভাইপার এবং ঘটনা বাংলাদেশের বলে বার্তা দেওয়া হচ্ছে। বেশ কিছু হ্যাশট্যাগের সঙ্গে ‘রাসেলস ভাইপার’ ও ‘বাংলাদেশ’ হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করা হয় পোস্টে। তবে যাচাইয়ে রাসেলস ভাইপার তথা চন্দ্রবোড়া সাপের বাহ্যিক আকৃতির সঙ্গে ভিডিওতে থাকা সাপটির কোনো মিল পাওয়া যায়নি। গত বছর এই একই ভিডিওকে ভিত্তি করে ভারতের একাধিক গণমাধ্যম (, ) সংবাদ প্রকাশ করে। সেখানে ঘটনার উৎস উল্লেখ না করলেও ভিডিওতে থাকা সাপটিকে কোবরা বলে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। তারও আগে ভিডিওটি ইন্দোনেশীয় ভাষায় একটি টিকটক একাউন্ট থেকে পোস্ট হতে দেখা যায়। ইন্সটাগ্রামের একটি ভিডিও পোস্টেও ইন্দোনেশিয়ার ভাষা ব্যবহার হতে দেখা গেছে।

‘রাসেলস ভাইপার’ ও ‘বাংলাদেশ’ হ্যাশট্যাগ ব্যবহৃত টিকটকের ১১ সেকেন্ডের ভিডিওটি পোস্ট করা হয় গত ২৮ জুন। একই দিন ভিডিওটি সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে রিল আকারে প্রচার করা হয়।

ফেসবুকে ‘ভাইরাল বিডি রিলস’ নামের পেজ থেকে প্রচার করা রিলটির ক্যাপশনে লেখা, “রান্নাঘরের ভিতরে রাসেল ভাইপার সাপ।” প্রতিবেদনে একজনকে বলতে শোনা যায়, “সবাই সাবধান থাকবেন। দেখুন আজকে আমাদের রান্নাঘরের ভিতরে কত্ত বড় একটি রাসেল ভাইপার সাপ ঢুকে গেছে। আর একটু হলে আমাদেরকে কামড় দিয়ে দিত। আমরা এই বিষাক্ত সাপটিকে ধরার চেষ্টা করতেসি, কিন্তু কোনোভাবেই সাপটিকে ধরতে পারছি না। এই সাপটিকে ধরার জন্য আমরা কি পদক্ষেপ নিতে পারি অবশ্যই আপনারা কমেন্টে জানাবেন। আপনারা যারা চান আমাদের দেশ থেকে এরকম বিষাক্ত সাপ চিরতরে বিদায় নেক অবশ্যই তারা এই ভিডিওটিতে একটা লাইক করে দিবেন। ভিডিওটি শেয়ার করে সকলকে দেখবার সুযোগ করে দিবেন।” 

বাংলা ভাষায় ঘটনার বিবরণ দান এবং পেজটির নামে ‘বিডি’ লেখা থাকায় ভিডিওটি অনেকের কাছে বাংলাদেশের বলে বার্তা দিচ্ছে। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত রিলটি দেখেছেন প্রায় দেড় লাখ ব্যবহারকারী; প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন তিন হাজার চারশ জনের বেশি। আর শেয়ার করেছেন হাজারের অধিক ব্যবহারকারী। পোস্টে অনেক ব্যবহারকারী সাপটিকে কিং কোবরা বলে মন্তব্য করেছেন। এক ব্যবহারকারী লেখেন, “এটা রাসেল ভাইপার সাপ না, কোবরা সাপ।” আরেকজন লেখেন, “এইটা কিং কোবরা সাপ।”

বিশ্লেষণে দেখা যায় ‘ভাইরাল বিডি রিলস’ ফেসবুক পেজটি পরিচালিত হয় বাংলাদেশ থেকে। 

ভিডিওর উৎস এবং সাপের পরিচয় যাচাই করতে গুগলে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে ডিসমিসল্যাব। যাচাইয়ে ভারতের গণমাধ্যম নিউজ এইটিনের একটি অনলাইন প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর এটি প্রকাশিত হয়। 

প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘রান্নাঘরে খাবার তৈরির সময় হিস হিস শব্দ শুনতে পান এক নারী। শুরুতে তিনি ভেবেছিলেন যে গ্যাস লিক হচ্ছে, কিন্তু যখন তিনি সিলিন্ডারটি সরিয়ে ফেলেন তখন দেখতে পান যে সিলিন্ডারের পেছনে একটি বিশাল কোবরা বসে আছে। বিশাল সাপটিকে দেখে সেই নারী বেশ ভয় পেয়েছিলেন এবং এমনকি চিৎকারও করেছিলেন।’ 

একই তারিখে এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে ভারতের টিভিনাইন বাংলা। তবে কোনো প্রতিবেদনেই ভিডিওটি কোথায় ধারণ করা সে তথ্য নেই। প্রতিবেদনে ভিডিও সূত্র দেয়া ইন্সটাগ্রামের একটি পোস্ট। গত বছরের ২৬ আগস্ট একটি ইন্সটাগ্রাম প্রোফাইল থেকে শেয়ার করা এ ভিডিওর ক্যাপশন ইন্দোনেশীয় ভাষায় লেখা। হ্যাশট্যাগে ইন্দোনেশীয় ভাষায় লেখা ‘কোবরা সাপ’। ইন্সটাগ্রামের প্রোফাইলও ইন্দোনেশিয়া থেকে পরিচালিত।

ভিডিওটি ইন্দোনেশিয়ার কিনা তা যাচাই করতে সেখানকার তথ্য যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান মাফিন্দো’র এক ফ্যাক্টচেকারের সঙ্গে যোগাযোগ করে ডিসমিসল্যাব। তিনি টিকটকে প্রচারিত সবচেয়ে পুরোনো পোস্টটি ডিসমিসল্যাবের সঙ্গে শেয়ার করে বলেন যে ভিডিওটি ইন্দোনেশিয়ার। প্রকৃত ভিডিওটিতে মানুষজন যে ভাষায় কথা বলেছেন তা ইন্দোনেশিয়ার বলে জানালেও দেশটির কোথায় এই ঘটনা ঘটেছে সেটি তাৎক্ষণিকভাবে তিনি নিশ্চিত করতে পারেননি।

‘স্নেক রেসকিউ টিম বাংলাদেশ’ এর সভাপতি মো. রাজু আহমেদের সাথে সাপটির প্রজাতি জানতে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান যে সাপটি কিং কোবরা প্রজাতির।

গত বছরের এই ভিডিওটি এমন সময়ে বাংলাদেশের বলে ছড়িয়ে পড়েছে যখন দেশে রাসেলস ভাইপার সাপের আতঙ্ক বিরাজ করছে। বিভিন্ন জায়গায় রাসেলস ভাইপার ভেবে অন্য সাপ মেরে ফেলছে মানুষ। এছাড়া সামাজিক মাধ্যমেও রাসেলস ভাইপার ঘিরে ছড়ানো হচ্ছে নানা ধরণের অপতথ্য। রাসেলস ভাইপার বলে অন্য সাপের ছবিও প্রচার করতে দেখা যাচ্ছে। এ নিয়ে অসংখ্য ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন (, , ) প্রকাশ করেছে বাংলাদেশের একাধিক তথ্য যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান।

আরো কিছু লেখা