তৌহিদুল ইসলাম রাসো
কুমিল্লার মুরাদনগরের সেই হিন্দু নারী আত্মহত্যা করেননি
তৌহিদুল ইসলাম রাসো
কুমিল্লার মুরাদনগরের একটি গ্রামে এক সনাতন ধর্মাবলম্বী নারীকে ধর্ষণের অভিযোগের ঘটনায় ভুক্তভোগী নারী আত্মহত্যা করেছেন দাবিতে সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে একাধিক পোস্ট ছড়াতে দেখা গেছে। এছাড়া স্থানীয় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সূত্রে স্বাধীন নিউজ ২৪/৭ নামের একটি ব্লগস্পট সাইটে তার মৃত্যুসংবাদ নিয়ে একটি ভুয়া প্রতিবেদনও ছড়াতে দেখা যায়। তবে কুমিল্লার মুরাদনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো: জাহিদুর রহমান ডিসমিসল্যাবকে নিশ্চিত করেন যে নির্যাতিতার মৃত্যুসংবাদটি ভুয়া এবং তার সূত্রে প্রকাশিত খবরটি ভিত্তিহীন।
আজ ২৯ জুন ফেসবুকের একাধিক পোস্টে (১, ২, ৩, ৪, ৫) একই দাবিতে পোস্টে করে বলা হচ্ছে, “মুরাদনগরের ধর্ষি*তা মেয়েটি আত্ম*হত্যা করেছে। আমাদের ক্ষমা করে দিস বোন 🙏।” এ সংক্রান্ত একটি পোস্টের মন্তব্য যাচাইয়ে দেখা যায় ঘটনাটিকে অনেকে সত্য ধরে নিয়েছেন। এক ব্যবহারকারী লেখেন, “তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি, জাতির জন্য খুবই লজ্জা জনক ঘটনা, জাতি আজ চরম ভাবে লজ্জিত।” আরেক ব্যবহারকারী লেখেন, “জন্ম নিয়ে ছিল গর্বিত জাতি হিসেবে আত্মহত্যা করেছে নিক্রিষ্ট মবের কারণে বুঝিয়ে দিয়ে গেল বাংলাদেশ।”

এছাড়া স্বাধীন নিউজ ২৪/৭ নামের একটি ব্লগস্পট সাইটে এ নিয়ে একটি অনলাইন প্রতিবেদনও প্রকাশিত হতে দেখা যায়। “কুমিল্লার মুরাদনগরে ধর্ষণের শিকার হিন্দু নারীর আত্মহত্যা: তদন্ত দাবি জনমনে” শিরোনামের সেই প্রতিবেদনে বলা হয় ধর্ষণের শিকার এক হিন্দু নারী আত্মহত্যা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় সূত্রের বরাতে জানানো হয় ভুক্তভোগী নারী তার বাড়ির পাশেই একটি গাছের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার হন। এছাড়া বিষয়টি মুরাদনগর থানা পুলিশ নিশ্চিত করেছে এবং মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। ব্লগস্পটের এই প্রতিবেদনও ফেসবুকে শেয়ার হতে দেখা গেছে।

ভুক্তভোগী নারীর আত্মহত্যার খবরের সত্যতা যাচাইয়ে কুমিল্লার মুরাদনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো: জাহিদুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করে ডিসমিসল্যাব। তিনি বলেন, “এই তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা, ভিত্তিহীন এবং বানোয়াট।” যোগাযোগের সময়ে নির্যাতিতা নারী তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে থানাতেই উপস্থিত ছিলেন বলে জানান স্থানীয় প্রশাসনের এই কর্মকর্তা। এছাড়া তাকে উদ্ধৃত করে প্রচারিত প্রতিবেদনটিও ভিত্তিহীন বলে ডিসমিসল্যাবকে জানান তিনি।
অর্থাৎ, কুমিল্লায় ওই হিন্দু নারীর আত্মহত্যার যে তথ্যটি সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার হচ্ছে তা মিথ্যা ও বানোয়াট।
প্রসঙ্গত, গত ২৬ জুন রাতে কুমিল্লার মুরাদনগরের হিন্দু ধর্মাবলম্বী এক নারীকে ধর্ষণের অভিযোগে রামচন্দ্রপুর পাঁচকিত্তা গ্রামের ফজর আলী নামে এক ব্যক্তি এলাকার লোকজনের হাতে আটক ও মারধরের শিকার হন। ঘটনাস্থলে উপস্থিত কিছু লোক তাৎক্ষণিকভাবে নির্যাতিতার ভিডিও ধারণ করে, যা পরবর্তীতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়। এই ঘটনায় ইতোমধ্যে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।