তৌহিদুল ইসলাম রাসো

রিসার্চ অফিসার, ডিসমিসল্যাব
ট্রেনের ভাঙা চাকার ছবিটি ভারতের, বাংলাদেশের নয়

ট্রেনের ভাঙা চাকার ছবিটি ভারতের, বাংলাদেশের নয়

তৌহিদুল ইসলাম রাসো

রিসার্চ অফিসার, ডিসমিসল্যাব

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ট্রেনের একটি ভাঙা চাকার ছবি ভাইরাল হয়েছে। ছবিটি শেয়ার করে বলা হচ্ছে এটি বাংলাদেশের একটি ট্রেনের চাকা, যে ট্রেনটি ভারত থেকে কেনা। তবে যাচাইয়ে দেখা যায়, ছবিটি বাংলাদেশের কোনো রেলের চাকার নয়। প্রকৃত ছবিটি ভারতের অভ্যন্তরীণ একটি মালবাহী ট্রেনের লোকোমোটিভের (ইঞ্জিনের)। 

একাধিক ফেসবুক পেজ (, , ), গ্রুপ (, , ) ও ব্যক্তিগত প্রোফাইল (, , ) থেকে ছবিটি শেয়ার হতে দেখা গেছে। একটি পেজ থেকে ছবিটি শেয়ার করে ক্যাপশনে লেখা হয়, “দরদী ভারত থেকে কেনা ট্রেনের কোচের চাকা একবার অবস্থাটা দেখুন? ভারত হচ্ছে আমাদের দেশটাকে গিলে খেতে চাচ্ছে।” এই পোস্টের ক্যাপশনে হ্যাশট্যাগ হিসাবে বয়কট ইন্ডিয়া, বয়কট ইন্ডিয়ান প্রোডাক্ট ব্যবহার করতে দেখা যায়।

এছাড়া বয়কট ইন্ডিয়ান প্রোডাক্টস নামের একটি ফেসবুক গ্রুপ থেকে ছবিটি শেয়ার করে ক্যাপশনে বলা হয়, “ভারত থেকে কেনা ট্রেনের কোচের চাকা. আর কত, দেশের দেশের টাকা নষ্ট হবে এভাবে?” পোস্টের কমেন্টে এক ব্যবহারকারী লেখেন, “ভারত থেকে যেগুলা যানবাহন আমাদের দেশে বিক্রি করে ম্যাক্সিমাম গুলায় ব্যবহার করা থাকে। পরে সেগুলো ঘষামাজা করে আমাদের কাছে বিক্রি করে দেয়।” 

ফেসবুকের একাধিক ব্যক্তিগত প্রোফাইল (, , ) থেকেও ছবিটি শেয়ার করতে দেখা গেছে। ক্যাপশনে লেখা হয় “ভারত থেকে কেনা ট্রেনের কোচের চাকা (শরীফ মেলামাইন)।” এই একই লেখায় অনেকে ছবিটি বাংলাদেশের দাবিতে শেয়ার করেছেন; বিভ্রান্ত হয়েছেন।

ছবিটির সত্যতা যাচাইয়ে অনলাইনে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে এক্সের (সাবেক টুইটার) একটি ভেরিফায়েড একাউন্টে হুবহু একই ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। পোস্টের ইংরেজি ক্যাপশনে দাবি করা হয় ছবিটি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের আসানসোলের। ক্যাপশনটির বাংলা অনুবাদ হয় এই রকম- “ভয়ংকর! মালবাহী ট্রেনের লোকোমোটিভের চাকা দুভাগ হয়ে গেছে। প্রথম ইঞ্জিনের চতুর্থ চাকা (৪১০৫১)। ট্রেনটি দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্ট থেকে বক্তারনগর যাচ্ছিল। ঘটনাটি ইস্টার্ন রেলের আসানসোল ডিভিশনের। মেইন লাইনের ট্রেন চলাচলে কোনো প্রভাব পড়েনি এবং হতাহতের কোনো ঘটনাও ঘটেনি।”

গত ৩০ মে পোস্টটি করা হয় রাজেন্দ্র বি. আকলেকার নামের একটি ভেরিফায়েড এক্স প্রোফাইল থেকে। প্রোফাইলের বিবরণে একাউন্ট পরিচালনাকারী নিজেকে ভারতীয় গণমাধ্যম ‘মিড ডে’ এর সাংবাদিক বলে পরিচয় দিয়েছেন। এছাড়া তিনি ভারতের রেল ইতিহাস ও ঐতিহ্য নিয়ে একাধিক বই লিখেছেন- এমন তথ্য রয়েছে। যাচাইয়ে মিড ডে’র অনলাইন পোর্টালে লেখক প্রোফাইল হিসেবে রাজেন্দ্র বি. আকলেকার নামটি পাওয়া গিয়েছে।

তাই ফেসবুকে ট্রেনের ভাঙা চাকা বলে যে ছবিটি ভাইরাল হয়েছে সেটি ভারত থেকে কেনা বাংলাদেশি কোনো ট্রেনের চাকা নয়। উক্ত ছবিটি একটি ভারতীয় মালবাহী ট্রেনের ইঞ্জিনের ভাঙা চাকা। আকলেকার নামের এই সাংবাদিকের তোলা দুটি আলাদা ছবি একসঙ্গে জুড়ে দিয়ে বয়কট ইন্ডিয়া ক্যাপশনে শেয়ার করা হচ্ছে বাংলাদেশের ট্রেনের বলে।

চলতি বছরের শুরু থেকে বাংলাদেশের সামাজিক মাধ্যমগুলোতে ‘বয়কট ইন্ডিয়া’ নামে একটি কর্মসূচী দৃশ্যমান। বিবিসি বাংলার এক রিপোর্ট বলছে, চলতি বছরের ৭ জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনের পরপরই হ্যাশট্যাগ ‘ইন্ডিয়াআউট’ প্রচারণায় সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকেই যোগ দেন। এই ধরনের প্রচারাভিযানের মাধ্যমে তারা ভারতীয় পণ্য বয়কটেরও ডাক দিচ্ছেন বলেও জানানো হয় প্রতিবেদনে।

ভারতীয় পণ্য বয়কট নিয়ে এর আগেও ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে বাংলাদেশের একাধিক তথ্য যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান। একটি ঘটনায় বাংলাদেশের গণমাধ্যমের ফটোকার্ড বিকৃত করে বলা হয় দুবাইয়ের বুর্জ খলিফায় ভারতীয় পণ্য বয়কটের বিজ্ঞাপন প্রচার করা হয়েছে। তবে একাধিক ফ্যাক্টচেক (, ) প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদনে এটি ভিত্তিহীন প্রমাণিত হয়। বয়কটের আরেকটি দাবিতে বলা হয় বিশ্বের ৫৭টি দেশ ভারতকে বয়কট করেছে। তবে এই দাবিটিও ভিত্তিহীন বলে তাদের প্রতিবেদনে জানায় বাংলাদেশের একটি তথ্য যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান।

আরো কিছু লেখা